বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলায় করোনা সংক্রমণ উত্তরোত্তর বাড়তে থাকায় এবার রীতিমত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে জেলাশাসক বিজয় ভারতী জুুম ভিডিও কনফারেন্সে স্বীকার করে নিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলায় গোষ্ঠী সংক্রমণ চলছে। তাই তাঁরা আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থাও নিতে চলেছেন। যার মধ্যে রয়েছে লকডাউন থেকে রেপিড এণ্টিজেন টেষ্টের সংখ্যা বৃদ্ধির মত ব্যবস্থাও।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার পর্যন্ত পূর্ব বর্ধমান জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১১৬তে। মঙ্গলবার জেলায় মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬জন। তার মধ্যে বর্ধমান পৌর এলাকার ১০জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এদিন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৫জন। অন্যদিকে, জেলায় এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭৭০জন। এরই পাশাপাশি গোটা জেলার মধ্যে সবথেকে উদ্বেগজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে খোদ বর্ধমান পুরসভা এলাকায়। এই পুরসভা এলাকাতেই বসবাস করেন জেলা প্রশাসনের তাবদ কর্তারা।
ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্তা বাড়িতে থাকতে শুরু করেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোমবার যে বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছে তাতে মোট ৪৫ হাজার ৩৪০জনের সোয়াব সংগ্রহ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪৩০৮১জনের টেষ্ট করানো হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত শুধুমাত্র বর্ধমান পুরসভা এলাকাতেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৮জন। স্বাভাবিকভাবেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়া করোনা সংক্রমণকে কিভাবে ঠেকানো যাবে তার দিশা খুঁজতেই কালঘাম ছুটতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসনের।
জেলাশাসক এদিন জানিয়েছেন, সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। তাই আগামী ৬ আগষ্ট থেকে জেলার সমস্ত পুরসভা এলাকা সহ ৫টি ব্লক ও ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও ৭দিনের লকডাউন করার চিন্তাভাবনা চলছে। সেক্ষেত্রে তিনি জানিয়েছেন, জেলার সমস্ত পুরসভা ছাড়া বর্ধমান ১এর বেলকাশ, রায়ান ১, ভাতার, গলসী ১ ও গলসী ২, কালনা-১ ও কালনা ২,খণ্ডঘোষ, মন্তেশ্বর এবং জামালপুর অঞ্চলে লকডাউনের চিন্তাভাবনা চলছে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, বুধবার বিকেলে পর এব্যাপারে সঠিক তথ্য জানাতে পারবেন। জেলাশাসক জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কন্টেনমেণ্ট জোন বাড়ানোর পাশাপাশি রেপিড এণ্টিজেন টেষ্টের পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে।
যদিও তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কারণ এন্টিজেন টেষ্টে যাঁদের পজিটিভ পাওয়া যাবে তাঁদের যেমন দ্রুত চিকিৎসা করার বিধান রয়েছে তেমনি যাঁদের নেগেটিভ রিপোর্ট আসবে তাঁরা যদি কোনো উপসর্গ থাকে তাঁদের আরটিপিসিআর মেশিন-এ পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের আর পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার কুণাল কান্তি দে জানিয়েছেন, এণ্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ পাওয়া গেলে তাঁদের যেমন দুটি ধরণ রয়েছে তেমনি নেগেটিভের ক্ষেত্রেও দুটি ধরণ রয়েছে। উপসর্গযুক্ত নেগেটিভদের নমুনা ফের আরটিপিসিআর-এ পরীক্ষা করানোর প্রোটোকলে রয়েছে। যদিও এব্যাপারে বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (করোনা সংক্রান্ত) রজত নন্দা জানিয়েছেন, এন্টিজেন টেষ্টে যাঁদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে তাঁদের আর আরটিপিসিআর – এ টেষ্ট করানোর দরকার নেই।
উল্লেখ্য, বর্ধমান মেডিকেল কলেজে যে আরটিপিসিআর মেশিন দিয়ে করোনা পরীক্ষা শুরু হয়েছিল সেটি সম্প্রতি কদিন খারাপ হয়ে যাওয়ায় করোনা পরীক্ষা বেশ কিছুটা বিলম্বিত হয়ে পড়ে। এব্যাপারে ডেপুটি সুপার জানিয়েছেন, বর্তমানে তাঁদের কাছে ৩টি আরটিপিসিআর মেশিন রয়েছে। যার মধ্যে একটি খারাপ। অন্য একটি মেশিনে টেষ্ট করানো হচ্ছে। তৃতীয় তথা নতুন মেশিনটি এখনও প্রতিস্থাপিত করা হয়নি। দ্রুত তা করার চেষ্টা চলছে।
যদিও রজত নন্দা জানিয়েছেন, ওই মেশিন দু-একদিন খারাপ থাকার পর নতুন রিয়েল টাইম আরটপিসিআর মেশিন আনা হয়েছে। সমস্যা মিটে গেছে। অন্যদিকে, অভিযোগ উঠেছে করোনা সংক্রমণের দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকেই কেউ কেউ দায়ী করতে চাইছেন। অভিযোগ উঠেছে, বুকে কোনো কষ্ট পাওয়া রোগী এলে তাঁদের রাধারাণী ওয়ার্ডে ভর্তি করা হচ্ছে। ফলে সংক্রমণের হার আরও বাড়ার শংকা দেখা দিচ্ছে।