পূর্ব বর্ধমান জেলায় দ্রুত বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, আতঙ্কিত প্রশাসন নিতে চলেছে কঠোর পদক্ষেপ

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, পূর্ব বর্ধমান: লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পূর্ব বর্ধমান জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গতকাল অর্থাৎ রবিবারই জেলায় একদিনে করোনা আক্রন্ত হয়েছে ৩৮জন। আর এই পরিসংখ্যায়ন নজরে আসতেই জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দপ্তরে হালচাল পরে গেছে। তাই এবার গাছাড়া ভাব শিকেয় তুলে দিয়ে কঠোর হাতে সবকিছু মোকাবিলার রাস্তায় নামল জেলা প্রশাসন। কেন এই বাড়াবাড়ি তার সরজমিনে তদন্তও শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। শুধু তাইই নয়, আরও একধাপ এগিয়ে সোমবার খোদ জেলাশাসক বিজয় ভারতী চলতি করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিদিনের সাংবাদিক বৈঠককে বাতিল করে দিলেন।
এদিনই জেলাশাসক জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিকের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, সরাসরি জেলাশাসক আর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন না। সাংবাদিকের খবরের জন্য কোনো নির্দিষ্ট তথ্য জানার থাকলে সকাল ১০টার মধ্যে তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিককে সেই বিষয়ে জানাতে হবে, তারপর তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিকের মাধ্যমেই তার উত্তর সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি জেলাশাসকের বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজও একই পদ্ধতিতে করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই জেলায় একদিনে ৩৮জনের করোনা আক্রান্তের খবরে জেলাশাসকের এই সিদ্ধান্তে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সাংবাদিক মহলে।
অপরদিকে, সোমবার জেলাশাসক জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত যে ৩৮জন রবিবার আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে ২২জনই পরিযায়ী শ্রমিক এবং তাঁদের মধ্যে শুধু ১১জন কেতুগ্রামের বাসিন্দা। জেলাশাসক জানিয়েছেন, আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন তাঁদের কোয়ারেণ্টাইন সেণ্টারে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকরা জেলায় ফিরেছেন তাঁদের প্রত্যেকেরই পরীক্ষা করা হয়েছিল। তবে তাদের সোয়াব টেষ্ট করা হয়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, জেলাশাসক এদিন জানিয়েছেন, মাস্ক পড়া নিয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতার প্রচার করা হচ্ছে। মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তারপরেও বাজারে, রাস্তায় বহু মানুষ মাস্ক ছাড়াই যাতায়াত করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, যেভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা রবিবার থেকে বাড়তে শুরু করেছে তাতে আগামী দিনে আরও একটি কোভিড হাসপাতালের প্রয়োজন হবে কিনা তা নিয়েও এবার জেলাপ্রশাসন আলোচনা শুরু করে দিল। জেলাশাসক জানিয়েছেন, বর্ধমানের ক্যামরি কোভিড হাসপাতালে ১৪৮টি বেড রয়েছে। বর্তমানে ৬০জন ভর্তি রয়েছেন। প্রয়োজনে কোভিড হাসপাতাল বাড়াতে হবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
এরই পাশাপাশি কন্টেনমেণ্ট জোন নিয়েও তাঁরা আরও সতর্কতা এবং কঠোরভাবে পালন করার ওপর জোড় দিয়েছেন। কন্টেনমেণ্ট জোনের নিয়ম সঠিকভাবে পালনের ওপর নজর দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বাড়ি বাড়ি প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা, সমাবেশকে করোনা বিধি মেনে পালন করার জন্যও রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে রাজ্যের শাসকদল থেকে বিজেপি, সিপিএম সমস্ত রাজনৈতিক দলই বিভিন্ন ইস্যুতে জমায়েত করছেন। এইসব জমায়েতে কোনো সামাজিক দূরত্বই মানা হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, রবিবারও বর্ধমান পুরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে ১০৫০জনকে ত্রাণ বিলি করা হয়েছে। যেখানে ছিল না কোনো সামাজিক দূরত্ববিধি মানার বালাই। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। শুধু তৃণমূলই নয়, শনিবার বিজেপির পক্ষ থেকে আমড়া থেকে গঞ্জ পর্যন্ত বেহাল রাস্তা মেরামতির দাবীতে শতাধিক সমর্থক নিয়ে আন্দোলন করা হয়। সেখানেও সামাজিক বিধি মানা হয়নি। জেলাশাসক জানিয়েছেন, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির কাছেই এব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হচ্ছে।