ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়েই সমস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার এবং কাঁচা রাস্তা পাকা করার কাজ শুরু হয়ে গেল। আর এরই মাঝে জেলার ৪টি ব্লকের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবী পূরণ করতে রাজ্য সরকার ৪টি নতুন কাঁচা রাস্তাকে পাকা করার জন্য অর্থও বরাদ্দ করল। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার আরআইডিএফ প্রকল্পে এই জেলার জামালপুর, খণ্ডঘোষ, মেমারী ১ এবং মঙ্গলকোটের মোট ২৫ কিমি কাঁচা রাস্তাকে পাকা করার সবুজ সংকেত দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের জন্য ১৭ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই রাস্তার কাজ শুরু হবে।
এদিকে, গোটা জেলার পূর্ত দপ্তরের অধীন এবং জেলা পরিষদের অধীন সমস্ত রাস্তার পরিস্থিতি নিয়ে দুদিন ব্যাপী ৩ দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার জেলা পরিষদের অধীন বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থাকে ডেকে যে সমস্ত রাস্তার কাজ চলছিল এবং লকডাউনের জেরে কাজ থমকে গেছে তাঁদের দ্রুত রাস্তার কাজ সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে টেণ্ডার পাওয়ার পরও যাঁরা কাজ শুরু করেনি তাঁদেরও দ্রুত রাস্তার কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবারই দু দফায় জেলা পরিষদে বৈঠক হয়েছে। শুক্রবার রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের উপস্থিতিতেও জেলার রাস্তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।
এরই পাশাপাশি জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন, গোটা জেলার রাস্তাগুলির কি পরিস্থিতি এবং কিভাবে রাস্তার কাজ করা যাবে সেজন্য জেলাওয়াড়ি বৈঠক ডাকা হয়েছে। অন্যদিকে, জেলার মধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে মন্তেশ্বর, গলসী, রায়না, পূর্বস্থলী সহ কয়েকটি ব্লকের রাস্তার অবস্থা। তার মধ্যে গলসীর গোহগ্রাম থেকে আদ্রাহাটি, শিকারপুর, ভাসাপুর, পারাজ প্রভৃতি রাস্তাগুলির বেহাল অবস্থায় এলাকার মানুষ ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেছেন। আদরাহাটি এলাকার বাসিন্দা তন্ময় চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গলসী গোহগ্রাম রুটে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজারেরও বেশি ভারী বালির গাড়ি যাতায়াত করে। আর তার জেরেই রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। সমস্ত রাস্তা খানাখন্দে পরিণত হয়ে দুর্ঘটনা বাড়িয়ে তুলছে।
তিনি জানিয়েছেন, মাঝে মাঝে বালিঘাটের মালিকরা রাস্তা মেরামতির নামে কিছু কিছু জায়গায় খানাখন্দ বোজানোর কাজ করলেও কোনো ছোট গাড়ি এমনকি সাইকেল বা মোটরসাইকেলও যাতায়াত করতে পারছে না। ফলে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষের অবস্থা। একইসঙ্গে ক্ষোভ ক্রমশই বাড়ছে। এরই পাশাপাশি গলসী থেকে গোহগ্রাম এই রুটেই প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬টি বাস যাতায়াত করে। রাস্তার এই বেহাল অবস্থার জন্য বাসও চলাচল করতে পারছে না।
বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, কোন কোন ব্লকে কতগুলি রাস্তা বেহাল বা কি পরিস্থিতি রয়েছে সে বিষয়ে সমস্ত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের কাছ থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে। সেই তালিকার পরই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রাস্তা মেরামতির জন্য তাঁরা চেষ্টা করবেন। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, জেলার বেহাল রাস্তাগুলি সংস্কারের কাজ তাঁরা মার্চ মাসের মধ্যেই শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য সেই কাজ হতে পারেনি। এদিকে, বর্ষা আসন্ন। ফলে তাঁরা দ্রুত রাস্তা মেরামতের কাজ করার চেষ্টা করছেন।
এদিকে নবদ্বীপ-বর্ধমান রোড ভায়া কুসুমগ্রাম, রাইগ্রাম, নাদনঘাট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার হাল বেহাল। বৃহস্পতিবার একটি মাল বোঝাই ট্রাক রাস্তার উপর বিকল হয়ে যাওয়ায় সারা রাত যান চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে সারি দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পরে রাস্তায়। ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে রাস্তা মেরামতি করার দাবি জানিয়েছেন গাড়ি চালকরা।স্থানীয়দের অভিযোগ, গোটা রাস্তা খানা খন্দে ভরা। একটু বূষ্টি হতে না হতেই পুকুরের চেহারা নেয়। সামনে আসছে বর্ষাকাল আরও খারাপ অবস্থা হবে বর্ধমান নবদ্বীপ রোডের। প্রতিনিয়ত বহু ভারি যান চলাচল করে এই রাস্তা দিয়ে। অবলম্বে রাস্তা মেরামত না করলে যে কোন দিন বড়সড় দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটবে বলে তাঁরা আশংকা প্রকাশ করেছেন।