ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: খোদ বর্ধমান শহরের নবাবহাট এলাকা থেকে একটি বেসরকারি নামি ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার কে অপহরণের ২৪ঘন্টার মধ্যেই উদ্ধার করল বর্ধমান জেলা পুলিশ। পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হয়েছে অপহরণকারী গ্যাং এর চারজন কে। শুত্রুবার সন্ধ্যায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২৮তারিখ বিকেলের দিকে ওই সংস্থার প্রোজেক্ট ম্যানেজার প্রিয়তম কুমার বোস বর্ধমান থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে তিনি জানান, একটি অপরিচিত নম্বর থেকে তাঁকে তিনটি হুমকি ফোন করা হয়। সেখানে তাকে জানানো হয় তাঁর কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার সুজিত কুমার চক্রবর্তী তাদের হেফাজতে আছে। এক কোটি তিরিশ লক্ষ টাকা দিলে তবেই তাকে ছাড়া হবে। যার সময় দেওয়া হয়েছিল আজ অর্থাৎ শুত্রুবার বেলা ১২টা পর্যন্ত। এরপর তিনি সুজিত বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে বিফল হন। আর এরপরেই প্রিয়তম বাবু সরাসরি বর্ধমান থানায় এসে গোটা ঘটনার বিষয়ে লিখিত ভাবে অভিযোগ জমা করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ২৭তারিখ রাতেই একটি নিৰ্দিষ্ট কেস রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়। পাশাপাশি গতকালই বর্ধমান জেলা পুলিশের একটি দলকে মালদার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। সেখানে মালদা জেলা পুলিশ এবং ইরেজবাজার থানার সহযোগিতায় বেশ কয়েকটি হোটেলে অভিযান চালানো হয়। শেষমেষ ইরেজবাজার এলাকার একটি হোটেল থেকে সুজিত কুমার চক্রবর্তীকে উদ্ধার করে পুলিশ। একই সাথে ওই হোটেল থেকেই চারজন অপহরণকারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বর্ধমানে নিয়ে আসা হচ্ছে। আগামীকাল অর্থাৎ শনিবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হবে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
কল্যাণ সিংহরায় জানিয়েছেন, ধৃত চারজনের মধ্যে দুজনের বাড়ি মালদার পুকুড়িয়া থানা এলাকায় এবং আরো দুজনের বাড়ি মানিকচক থানা এলাকায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এদিকে সুজিত কুমার চক্রবর্তী নিখোঁজ হয়ে যাবার পর পুলিশ জানতে পেরেছে ২৭তারিখ রাত প্রায় সাড়ে ৮টা নাগাদ কোম্পানির গাড়ি তাঁকে বর্ধমানের নবাবহাট মোড়ে নামিয়ে চলে যায়। জানতে পারা গেছে সুজিত বাবুর বাড়ি হুগলির মানকুন্ডুতে হলেও কর্মসূত্রে তিনি বর্ধমানের গোদা এলাকায় বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন। তার কর্মস্থল ছিল রেঁনেসায়। কোম্পানির প্রোজেক্ট ম্যানেজার প্রিয়তম বোস পুলিশ কে জানিয়েছেন, ২৮তারিখ সকাল থেকে তার কাছে বিভিন্ন সময়ে তিনবার হুমকি দিয়ে ফোন করা হয়। প্রতিবারই সুজিত বাবুকে পেতে গেলে এক কোটি তিরিশ লক্ষ টাকা দিতে বলে জানান হয়।
অপহরণের কারণ সম্পর্কে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহরায় জানিয়েছেন, তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। কারণ সুজিত বাবু এবং অপহরণকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ না করে সঠিক ভাবে এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে প্রাথমিক ভাবে যেটা জানা গেছে, সুজিত বাবু ২০১৭সালের আগে মহারাষ্ট্রের একটি কোম্পানি তে কর্মরত ছিলেন। পরে অন্য কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে চলে আসেন। আগের কোম্পানির সঙ্গে শ্রমিক সরবরাহ সংক্রান্ত লেনদেন বাবদ ১কোটি ৩০লক্ষ টাকা নাকি বকেয়া ছিল। সুজিত বাবু এই সংক্রান্ত বিষয় ওই কোম্পানিতে নাকি দেখাশোনা করতেন। ২০১৭ সালে কোম্পানি পরিবর্তন করে চলে আসার পর সেই বকেয়া টাকা আদায়ের জন্যই অপহরণের ছক কষা হয়েছে কিনা সেইবিষয় টাও তদন্ত করে দেখছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের তদন্তকারী অফিসারেরা।