ফোকাস বেঙ্গল ওয়েব ডেস্ক: ধেয়ে আসছে ভয়ঙ্কর সৌরঝড় বা ‘সোলার স্টর্ম’! ফলে বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে যাবতীয় ইন্টারনেট সংযোগ! যুক্তরাষ্ট্রের আরভিনে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। এতে জানা গেছে ভয়ংকর এই সোলার স্টর্ম বেশ কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসও স্থায়ী হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে গবেষকরা বলছেন, এমন ভয়ংকর সৌরঝড় বা সিএমই পৃথিবীর ওপর আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রতি দশকে থাকে ১.৬ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ। এবার তেমনই একটি সিএমইর ঝাপটা সইতে হতে পারে পৃথিবীকে, যার সম্ভাবনা খুবই প্রবল! মূল গবেষক অধ্যাপক সঙ্গীতা আবদু জ্যোতি বলেছেন, করোনা মহামারি ক্ষেত্রে যেমন আমরা আগাম কোনো সতর্ক বার্তা পাইনি সৌরঝড়ও ঠিক তেমনই। কারণ, সূর্যের বায়ুমণ্ডলে কখন ভয়ঙ্কর সৌরঝড় উঠবে তার পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয় এখনও। তবে সেই ভয়ঙ্কর সৌরঝড় পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে অন্তত ১৩ ঘণ্টা সময় লাগবে। গবেষণাটিতে আরও বলা হয়, এ ঝড় হলে পৃথিবীতে ইন্টার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। এর আগে যখন ১৯২১ সালে এমন ভয়ংকর সিএমই পৃথিবীর ওপর এসে আছড়ে পড়েছিল, তখন অবশ্য পৃথিবীতে ইন্টারনেট-ব্যবস্থাই গড়ে ওঠেনি।
জানা গেছে, এবার যে সোলার স্টর্ম আসছে, তার ঝাপটা আধুনিক পৃথিবীকে এর আগে সইতে হয়েছিল ১৮৫৯ সালে। ১৮৫৯ সালের পর ১৯২১ সাল ফের পৃথিবীতে সৌরঝড় আছড়ে পরেছিল। ১৯৮৯ সালে আবারো সৌরঝড়ের মুখোমুখি হয়েছিল পৃথিবী। সেই আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘানার কুইবেক প্রদেশ। এর ফলে প্রায় নয় ঘণ্টা প্রদেশটি ব্ল্যাক আউট ছিল।
বিজ্ঞানীরা বলছে এই ঝড়ের সাথে বিপুল পরিমান সৌর কণা প্রতি সেকেন্ডে ১৬০০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। তবে এই ঝড়ে মানুষের কোন ক্ষতি হয়না। কিন্তু ঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎ ও স্যাটেলাইট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে এবং বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে তারা বলছেন। তবে এসবের কোন প্রভাব এখনও দেখা যাচ্ছে না এই গ্রহে। যদিও এবারের সিএমইর আঘাত কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, সে ব্যাপারে কোনো তথ্যই বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। আর এই অশনি সংকেত বাস্তবিক অর্থেই আধুনিক পৃথিবীবাসীকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
বলাইবাহুল্য যে গত প্রায় দুবছর যাবৎ করোনা অতিমারীতে জর্জরিত বিশ্ব। এই আবহে ফের পৃথিবীবাসীর কাছে এই তথ্য কার্যত ঘুম কেড়ে নিয়েছে। বৈজ্ঞানিকরা জানাচ্ছেন সূর্য ঘুম থেকে থেকে জেগে উঠেছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই সূর্য থেকে ছড়িয়ে পড়েছে কয়েক লক্ষ টন প্রচণ্ড গরম গ্যাস। বৈজ্ঞানিক ভাবে এই মহাজাগতিক ঘটনার নাম, ‘করোনাল মাস ইজেকশন’। এর জেরে পৃথিবীতে শুরু হয়েছে ‘জিওম্যাগনেটিক ঝড়’। উল্লেখ্য, বৈজ্ঞানিকরা জানিয়েছেন গত বেশ কয়েকমাস ধরে শক্তিহীন অবস্থায় ‘ঘুমাচ্ছিল’ সূর্য। তবে ফের একবার জেগে উঠেছে সূর্য। এখন সূর্যের মধ্যে অস্থিরতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। এর ফলে সরাসরি পৃথিবীতে কোনও প্রভাব পরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলেই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
কারণ এর আগেও বহুবার এমন মহাজাগতিক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে পৃথিবী। তবে পৃথিবীর উপর সরাসরি এর প্রভাব পড়েনি। উল্লেখ্য, ২০২০ সালে সূর্য ১১ বছরের নতুন সাইকেল শুরু করে। এই সাইকেল ২০২৫ সালে চরম পর্যায়ে পৌঁছবে বলেই মহাকাশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। বিশ্বের উপর শেষ সৌর ঝড় আঘাত হেনেছিল ১৭ বছর আগে। তবে সেই সময় থেকে বর্তমানে প্রযুক্তির উপর আমাদের নির্ভরশীলতা বেড়েছে কয়েক গুণ। যদিও বাস্তবে যদি এই সৌর ঝড় আছড়ে পরে এই গ্রহের বুকে তবে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিকে ব্যাহত করতে পারে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের।