প্রচার শেষ, ১৭ এপ্রিল ৮ কেন্দ্রে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ভোট, কি হয় কি হয় অবস্থা রাজনৈতিক দলগুলোর

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: পঞ্চম দফার ভোটে পূর্ব বর্ধমান জেলার ৮ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ ১৭ এপ্রিল।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভোটের ৭২ঘন্টা আগে প্রচার শেষ হয়েছে সব রাজনৈতিক দলের। শেষলগ্নের প্রচারে হেভিওয়েটদের আনাগোনায় জমজমাট গোটা জেলার প্রচারপর্ব। বিজেপির হাইপ্রোফাইল একাধিক নেতা-নেত্রীর সঙ্গে তৃণমূল শিবিরেও হেভিওয়েট প্রচারে রাজনৈতিক পারদ তুঙ্গে। এদিকে প্রচার শেষ হতেই শুরু হয়ে গেল চুলচেরা বিশ্লেষণ। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের পর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই জেলাতেও থাবা বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। ফলে একুশের নির্বাচন নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই টানটান উত্তেজনা। পরিস্থিতি কি হয় কি হয় ভাব। শেষমেশ অপেক্ষা ২ মে-র।

বর্ধমান দক্ষিণ : বাম দুর্গ ছিল একসময়। নিরুপম সেনের মতো সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মন্ত্রীসভার সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। ২০১১ সালে ইন্দ্রপতন ঘটিয়ে এই বিধানসভায় জেতে তৃণমূল। ২০১৬ সালে ব্যবধান বাড়িয়েছে তৃণমূল। দ্বিতীয় স্থানে ছিল সিপিএম। কিন্ত গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল সামান্য ব্যবধানে এই কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল। সিপিএম প্রার্থী তৃতীয় স্থানে ছিলেন। গেরুয়া শিবির তৃণমূলের থেকে মাত্র হাজারখানেক ভোটে পিছিয়ে ছিল। তারপর থেকেই বিধানসভার জন্য বিজেপির ‘টার্গেট’ হয়ে ওঠে এই কেন্দ্রটি। তৃণমূলও জমি ছাড়তে নারাজ। বামেরাও জমি ফিরে পেতে মরিয়া। রয়েছে শহরের তীব্র যানজট,
পরিশুদ্ধ পানীয় জলসংকট, অপরিকল্পিত নির্মাণ নিয়ে ঝুড়ি ঝুড়ি অভিযোগ। পাশাপাশি গত দশ বছরে উন্নয়নের পাল্লাও কম ভারী নয়। শহরকে সাজিয়ে তোলা এবং নাগরিক পরিষেবার উন্নতিতে একাধিক কাজ করেছেন প্রাক্তন বিধায়ক।

বর্ধমান উত্তর: ২০১১ সালে প্রবল তৃণমূল ঝড়েও এই কেন্দ্র থেকে জয় পায়নি ঘাসফুল। কিন্তু ২০১৬ সালে আসনটি দখল করে ঘাসফুল। গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল বিধানসভার থেকেও বেশি লিড পায় এই কেন্দ্রে। কিন্তু রাজ্যে বিজেপির বিপুল জয়ের প্রভাব পড়ে এই কেন্দ্রেও। দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বই এখন ভাবাচ্ছে তৃণমূলকে। রয়েছে কৃষিপ্রধান এলাকার বিবিধ সমস্যাও।

খণ্ডঘোষ: একদা সিপিএমের দুর্গ। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেখানকার সিপিএম বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ তৃণমূলে যোগদান করেন। প্রার্থী হন। জিতে তৃণমূল বিধায়ক হন। এবারও দল তাঁকে টিকিট দিয়েছে। এই বিধানসভা কেন্দ্রটি আবার বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত। যার সাংসদ তৃণমূল থেকে পদ্মশিবিরে যাওয়া সৌমিত্র খাঁ। গত লোকসভা নির্বাচনে তিনি জিতলেও খণ্ডঘোষে পিছিয়ে ছিলেন তিনি। একুশের নির্বাচনে হাড্ডাহাডি লড়াই এই কেন্দ্রে। তৃণমূলের পক্ষে মসৃণ জয় সহজ হবে না। ত্রিমুখী লড়াইয়ে কার দিকে জনতার রায় – তানিয়েই চলছে আলোচনা। অবৈধ বালিখাদ, রাস্তাঘাট, সেচের জলের অভাব নিয়ে রয়েছে অভিযোগ।

রায়না: ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রটি প্রথমবারের জন্য পায় তৃণমূল। গত লোকসভা ভোটে এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে রেকর্ড ভোট পেয়েছিলেন বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডল। বর্তমানে তিনি আবার গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন। তবে তাতে কোনও প্রভাব পড়েনি বলে দাবি ঘাসফুল শিবিরের। তৃণমূল এখানকার বিধায়ককে সরিয়ে গলসিতে প্রার্থী করেছে। নতুন মুখ এনেছে এখানে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া কে প্রার্থী করেছে ঘাস ফুল শিবির। পদ্ম শিবিরও এখানে শক্তি বাড়িয়েছে। বামেরাও ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। রয়েছে বামেদের একাংশের গেরুয়া শিবিরকে সমর্থনের অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনাও। সেচের জলের সমস্যা, রাস্তাঘাট, দলীয় কোঁদল, বালি খাদান নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

মেমারি: ২০১১ সালে বামেদের হাতছাড়া হয়। ২০১৬ সালেও আসনটি দখলে রাখে ঘাসফুল। লোকসভায় বিজেপির উত্থান ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে তৃণমূলের ওপর। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার তৃণমূল এবার প্রার্থী বদল করেছে। ‘ঘরের ছেলে’ প্রার্থী করা হয়েছে ঘুরে দাঁড়াতে। লোকসভার ভোটের পর শক্তি বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরও। মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বামেরা। নয়নয় করে তারাও এবার ফ্যাক্টর এই কেন্দ্রে।

জামালপুর: তৃণমূল ২০১১ সালে আসনটি দখল করলেও ২০১৬ তে ফের সিপিএমের কাছে হারে। লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য এগিয়ে তৃণমূল। গোষ্ঠী কোঁদলে উত্তপ্ত এই আসন পুনরুদ্ধারে গলসির বিধায়ককে এবার এখানে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। পদ্মফুল ফোটাতে মরিয়া বিজেপি। বামেরাও আসনটি ধরে রাখতে জমি ছাড়ছে না এক ইঞ্চিও।

মন্তেশ্বর: ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রে বাম দুর্গের পতন ঘটায় তৃণমূল। বিধায়ক হন সজল পাঁজা। কয়েকমাস পরে তাঁর অকাল মৃত্যু ঘটে। তাঁর ছেলে সৈকত পাঁজাকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করে তৃণমূল। রেকর্ড ভোটে জেতেন তিনি। কিন্তু ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে। গত ডিসেম্বরে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। এবার বিজেপি প্রার্থীও। এই কেন্দ্রে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি। বাম অধ্যুষিত এলাকা বলে পরিচিত এই কেন্দ্রে ত্রিমুখী লড়াই তুঙ্গে।

কালনা: ২০১১ থেকেই আসনটি তৃণমূলের দখলে। ২ বারের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু এবার পদ্মশিবিরের প্রার্থী। তাঁর লড়াই মূলত তৃণমূলের সঙ্গে। টেট কেলেঙ্কারি নিয়ে বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎকে তুলোধোনা করছে তৃণমূল। পাল্টা দিতে ছাড়ছেন না বিশ্বজিৎও। বিশ্বজিৎকে নিয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের চাপা ক্ষোভও রয়েছে। গতবারের বিজেপি প্রার্থী কিছুদিন আগে তৃণমূলে যোগদান করেছেন। পাশপাশি এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কালনা পৌরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ বাগ। তার আচরণ নিয়ে জনমানসে কিছু ক্ষোভ থাকলেও কালনা শহরের উন্নয়নের নিরিখে পাল্লা ভারী তাঁরই। শেষমেষ আভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের জেরে এই আসন কি তৃণমূল দখলে রাখতে পারবে – এসবেরই উত্তর মিলবে ২ মে।