প্রতিদিন বাড়ছে চাহিদা, বাজারে আকাল অক্সিজেন সিলিন্ডারের, আতংক বাড়ছে জেলা জুড়ে

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। পূর্ব বর্ধমান জেলায় করোনা সংক্রমণ প্রতিদিনই প্রতিদিনের রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার এই জেলায় ৩৬৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুত্রুবার ফের জেলায় ২৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে শুধু বর্ধমান পুর এলাকায় এদিন ১১০জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন
এখনও পর্যন্ত করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সরকারী হিসাবে জেলায় মারা গেছেন ৬জন। বেসরকারী সূত্রে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। জেলা প্রশাসনের দেওয়া হিসাব অনুসারে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৫৮২ জন এ্যাক্টিভ রোগী রয়েছেন জেলায়। 

এদিকে, করোনা সংক্রমণ যত বাড়ছে ততই বাড়ছে অক্সিজেন সিলিণ্ডারের আকাল। গোটা জেলা জুড়েই শুক্রবার হাহাকার রব উঠেছে অক্সিজেন সিলিণ্ডার নিয়ে। এদিন বর্ধমানের অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থা ইণ্ডিয়া অক্সিজেন গ্যাসেস এর কর্ণধার বিজয় কুমার মিশ্র সাফ জানিয়েছেন, অক্সিজেন গ্যাসের কোনো অভাব নেই জেলায়। কিন্তু যেটার অভাব রয়েছে সেটা সিলিন্ডারের। তিনি জানিয়েছেন, তারই মাঝে এই অভাব আরোও প্রকট হয়েছে কিছু সাধারণ মানুষের আতঙ্কের কারণে।
তিনি জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষ আতংকে বাড়িতে বাড়িতে অক্সিজেন সিলিণ্ডার মজুত করে রাখছে। ফলে বাজার থেকে সিলিন্ডার কমে যাচ্ছে। 

অন্যদিকে এই কঠিন পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছে ব্যাপক কালোবাজারি। বিজয় বাবু জানিয়েছেন, কয়েক ধরণের গ্যাস সিলিণ্ডার রয়েছে। চলতি করোনা পরিস্থিতিতে সবথেকে বেশি চাহিদা রয়েছে বি টাইপ সিলিণ্ডারের। সাধারণ সময়ে এই ১.৪ এমকিউ গ্যাস সিলিণ্ডারের দাম যেখানে ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। সেই সিলিণ্ডারের দাম এখন নেওয়া হচ্ছে কোথাও কোথাও ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তিনি জানিয়েছেন, এই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এছাড়াও রয়েছে কোনোরকম সরকারী অনুমোদন ছাড়াই গ্যাস ব্যবসা করার বিষয়টিও। এব্যাপারেও প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত অবিলম্বে।

 বিজয়বাবু জানিয়েছেন, গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে গুজরাটের দুটি সংস্থা ইকেসি প্রাইভেট লিমিটেড এবং রামা সিলিণ্ডারস প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি সিংহভাগ সিলিণ্ডার সরবরাহ করে দেশজুড়ে। কিন্তু বর্তমান সময়ে তাঁরাও পাল্লা দিয়ে চাহিদার তুলনায় এই সিলিণ্ডার উত্পাদন করতে পারছেন না। ফলে চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে অক্সিজেন সিলিণ্ডারের। তিনি জানিয়েছেন, অক্সিজেন গ্যাসের কোনো অভাব নেই। বি টাইপ সিলিণ্ডারে অক্সিজেন গ্যাস ভর্তির জন্য খরচ পড়তে পারে চলতি সময়ে সর্বাধিক প্রায় ৩০০ টাকা। তিনি এও জানিয়েছেন, সরকারী হাসপাতালে অক্সিজেন গ্যাসের কোনো অভাব নেই। 

উল্লেখ্য বর্তমান করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিল্পের জন্য অক্সিজেন সিলিণ্ডার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিজয়বাবু জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে যে সমস্ত গ্যাস সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই সিলিণ্ডার মজুদ করে রাখতে পেরেছেন তাঁরাই এখন চড়া দামে তা দিতে পারছেন। বিজয়বাবু জানিয়েছেন, সাধারণ সময়ে যেখানে সারা বছরে ৫০টি গ্যাস সিলিণ্ডার বিক্রি করা রীতিমত কষ্টদায়ক ছিল। চলতি পরিস্থিতিতে প্রতিদিন কয়েকহাজার করে সিলিণ্ডারের আবেদন আসছে।

 তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান থেকেই তিনি কলকাতা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া সহ দুই বর্ধমান জেলাতেও অক্সিজেন গ্যাস সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই আতংকিত করে তোলা হয়েছে যে প্রতিদিন যে পরিমাণ চাহিদা আসছে সেই তুলনায় তিনি সরবরাহ করতে পারছেন না। ফলে অক্সিজেনের অভাবে হাহাকার চরমে। রোজ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। টিকার আকাল দেখা দিয়েছে সব জায়গায়। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অক্সিজেনের এই ঘাটতি।

আরো পড়ুন