গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের করোনা সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের রুটিন বৈঠকে এই উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। আর তারপরেই রীতিমত কোমড় বেঁধে নামল পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ। শুক্রবার তড়িঘড়ি জেলার ২৩টি ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিও এবং ২১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া। তাঁর সঙ্গে এদিন উপস্থিত ছিলেন সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু, জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কারিগরী দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সচিব, মিশন নির্মল বাংলার আধিকারিকরাও।
এদিন সভাধিপতি জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের করোনা সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকেই উঠে আসে জেলায় করোনার প্রথম ডোজ নেবার পর দ্বিতীয় ডোজ নেবার ক্ষেত্রে চুড়ান্ত অনীহা দেখা যাচ্ছে। আর তাই তাঁরা এদিন ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে সমস্ত জেলার বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের এব্যাপারে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেবার নির্দেশ দিয়েছেন। গ্রামে গ্রামে এব্যাপারে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীদের এব্যাপারে আরও সচেতন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় এই ধরণের দ্বিতীয় ডোজের সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পরও প্রায় ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫২৪জন দ্বিতীয় ডোজ নেননি। তাই এব্যাপারে তাঁরা জোরদার সচেতনতামূলক প্রচারে নেমেছেন। অন্যদিকে, জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে ১৫জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, করোনা এখনও চলে যায়নি। এই অবস্থায় কোনোরকম শৈথিল্যতা তাঁরা চান না। এমনকি এখন আবার বুষ্টার ডোজ নিয়েও ভাবনা চিন্তা চলছে। বিশেষত, করোনার ভ্যাকসিন নেবার ক্ষেত্রেও যাতে কোনোরকম সমস্যা না হয় সেজন্য তাঁরা কাজ করে চলেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ডোজের কোথাও কোনো অভাব নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই দ্বিতীয় ডোজ নেবার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, যদিও এর মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক, প্রথম ডোজ নেবার পর অন্যত্র চলে গেছেন। বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই অনীহার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তাঁরা লক্ষ্য করেছেন এর একটি কারণ হল – অনেকেই ভাবছেন করোনা কমে গেছে, তাই দ্বিতীয় ডোজ নেবার প্রয়োজন নেই। আবার অনেকেই ভাবছেন দ্বিতীয় ডোজ নিলে জ্বর আসতে পারে, তাই তাঁরাও অনীহা প্রকাশ করছেন। কিন্তু এই অনীহার ফলে সেই ব্যক্তি নিজের বিপদই বাড়িয়ে তুলছেন। বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজ নিলেই যে করোনা হবে না, এমনটা নয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ নিলে তাঁর রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি অনেক বেড়ে যায়। তাই কোনো গাফিলতি নয়, সকলেই যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন নেন – সেটাকেই তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসন প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে দ্বিতীয় ডোজ নেবার ক্ষেত্রে অনীহা সব থেকে বেশি দেখা গেছে খোদ বর্ধমান পুরসভা এলাকাতেই। এখানে দ্বিতীয় ডোজের সময় উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও ভ্যাকসিন নেননি ৩০ হাজার ৯৬৩ জন। এরপরেই রয়েছে মেমারী ১ নং ব্লক। এখানে ১৫ হাজার ৬১৩ জন এখনও দ্বিতীয় ডোজ নেননি। তৃতীয় স্থানে রয়েছে কালনা পুরসভা। সেখানে ৯ হাজার ১৭৬জন দ্বিতীয় ডোজ নেননি এখনও।