ফলাফল ঘোষণার আগে আশঙ্কায় আর আতঙ্কে নেতা কর্মীদের রাত কাটছে সেফ হোমে!

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: ভোট শেষ। এবার গণনার পালা। কার ভাগ্যের শিকে ছিঁড়বে তা আগামী ২মে পরিষ্কার হয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমান জেলায় সর্বদলীয় বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের একগুচ্ছ নির্দেশিকা নিয়ে রীতিমত অসন্তোষ সৃষ্টি হল রাজনৈতিক মহলে। এদিন জেলা প্রশাসন ভোট গণনাকেন্দ্র নিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে ভোটগণনা কেন্দ্রে কোভিড নিয়মবিধি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের কঠোর নির্দেশিকা মেনে চলার জন্য আবেদনও জানানো হল। কিন্তু সেই নির্দেশিকা অনুসারেই প্রার্থীদের এজেণ্টদের খাবার সরবরাহ নিয়ে রীতিমত ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। 

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বর্ধমানের রায়না কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, ভোটগণনা কেন্দ্রে এজেণ্টদের কোনো কিছুই নিয়ে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে। জলের বোতল নির্বাচন কমিশনই সরবরাহ করবে। কিন্তু কার্যত সকাল ৭টা থেকে গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এজেণ্টরা কি খাবেন তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি প্রশাসনিক কর্তারা। তাঁরা আবেদন করেছিলেন তাঁদের একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হোক, তাঁরাই নিজের নিজের এজেণ্টদের খাবার সরবরাহ করবেন। কিন্তু তাতে সম্মতি দেয়নি জেলা প্রশাসন। ফলে একটা অনিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে।

অপরদিকে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে দলীয় স্তরে সমস্ত বিজয় মিছিল বন্ধ করা হয়েছে। এদিন সেই প্রসঙ্গ তোলা হলেও সরাসরি এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা বিজয় মিছিল করবেন কি করবেন না, সেটা নির্ভর করছে তাঁদের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশের ওপর। রাজ্য নেতৃত্ব বিজয় মিছিল করতে বললে তাঁরা করবেন, করতে বারণ করলে তাঁরা করবেন না। কার্যত শাসকদলের পক্ষ থেকে এদিন সরাসরি জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ নয়, তাঁরা মানবেন দলীয় নির্দেশ। প্রসঙ্গত, তাঁরা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েও দিয়েছেন, ২০১১ সালে কোনো করোনা বিধি না থাকা সত্ত্বেও তৃণমূল কংগ্রেস বিজয় মিছিল করেনি। অপরদিকে, রবিবার গণনা কেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেণ্টদের করোনা পরীক্ষা সংক্রান্ত নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া গণনাকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হবে না – এই নির্দেশিকা মানতে রীতিমত দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেল। নিয়মানুযায়ী গণনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই রিপোর্ট করিয়ে তা গণনা কেন্দ্রে নিয়ে ঢুকতে হবে। আর তাতেই ঘুম ছুটেছে প্রার্থীদের। কমবেশী প্রায় ২১জন করে এজেণ্ট থাকছেন এক একজন প্রার্থীর।

এদিকে গণনার দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই বিশেষ করে গোটা জেলায় তৃণমূল এবং বিজেপির একাধিক প্রভাবশালী নেতা, কর্মী রীতিমত আতংকিত হয়ে উঠতে শুরু করেছেন। জানা গেছে, চলতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত জায়গায় তৃণমূল এবং বিজেপির মধ‌্যে সংঘর্ষ, অশান্তি হয়েছে সেই সমস্ত জায়গাতেই এখন এই সমস্ত নেতা কর্মীরা আতংকিত হয়ে পড়েছেন। জানা গেছে, বর্ধমান শহরের লক্ষ্মীপুর মাঠ, মেহেদিবাগান, কাঞ্চননগর, বাজেপ্রতাপপুর, রসিকপুর, নীলপুরের মত জায়গায় এখন রাত হলেই নেতা, কর্মীরা সেফ হোমে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার নিজের বাড়ি ছেড়ে রাতে অন্য জায়গায় শুতে যাচ্ছেন বলেও খবর মিলছে। অনেকে আবার ইতিমধ্যে ছুটি কাটাতে বিভিন্ন জায়গার টিকিট কেটেও রেখে দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
                                            ছবি – ইন্টারনেট