বর্ধমানের খোসবাগানে শ্যামসায়রের পারে পার্ককে ফের ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ এলাকাবাসীর

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বর্ধমান শহরের হৃদপিন্ড খোসবাগান এলাকার শ্যামসায়রের পারে অবস্থিত বিনোদন পার্ক কে জঞ্জাল মুক্ত করে অবশেষে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হল বুধবার। উল্লেখ্য গত প্রায় তিন বছর বর্ধমান পৌরসভায় কোনো নির্বাচিত বোর্ড না থাকার সুযোগে এই এলাকা কার্যত দুষ্কৃতিদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। পার্ককে ঘিরে যত্রতত্র আগাছার জঙ্গলে ভরে উঠেছিল। আর তারই মধ্যে এই অরক্ষিত পার্ক কে রীতিমত মদ,গাঁজা সহ অসামাজিক কাজকর্মের সুরক্ষিত ঠেকে পরিণত করে শহরেরই কিছু বকাটে যুবক যুবতী। ফলে ধীরে ধীরে শিশু থেকে বৃদ্ধদের এই পার্কে সময় কাটাতে আসার অভ্যাসও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সকাল থেকে তো বটেই, সন্ধ্যার পর এই পার্ক কার্যত চলে যেত দুস্কৃতিদের দখলে। আতংক বাড়ছিল এলাকার মানুষদের মধ্যে। বিশেষত, বর্ধমান শহরের এই খোসবাগান এলাকা যা ডাক্তার পাড়া হিসাবেই চিহ্নিত। রয়েছে অভিজাত পরিবারের বসবাস, তাঁরা কার্যত মুখ ফিরিয়ে নেন এই উদ্যান থেকে। 

প্রসঙ্গত অত্যন্ত ঘিঞ্জি এই এলাকার মানুষদের একটু স্বস্তি দিতে বাম আমলে শ্যামসায়রের পাড়ে হরিসভা স্কুল আর রামকৃষ্ণ আশ্রম লাগোয়া জলাশয়ের ধারে এই পার্ক তৈরি করা হয়েছিল। সকাল বিকালে বয়স্কদের বেড়ানো, শিশুদের কোলাহলে মুক্ত বাতাসে রীতিমত জমজমাট হয়ে থাকত এই পার্ক। জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক শ্যামাপ্রসাদ বসু এই পার্কের শিলান্যাস করার পর ১৯৯৭ সালের ১৪জুন সাংসদ রামনারায়ন গোস্বামী এই পার্কের শুভ উদ্বোধন করেন। নাম রাখা হয় ডাঃ চন্দ্রশেখর চ্যাটার্জি উদ্যান। পরবর্তীকালে ২০১৮ সাল নাগাদ খোসবাগান তথা পুরসভার ৩০নং ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা অজিত খাঁ এই পার্কের সৌন্দর্য্যায়ন করে দেন।

তৈরী করা হয় শিশুদের দোলনা, তৈরি করা হয় বসার জায়গা থেকে পারলৌকিক কাজের জন্য ঘাট। রেলিং দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় শ্যামসায়রের পাড়। কিন্তু গত দুবছর ধরে পৌত্তসভার ও প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এই পার্ক ধীরে ধীরে অসামাজিক লোকেদের বিচরণক্ষেত্র হয়ে ওঠে বলেই এলাকার মানুষের অভিযোগ। সাম্প্রতিককালে বিশেষত ভোটের মুখে পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়ে এই পার্ক। দুপাশের পার্কের গেট এখন সব সময়ই খোলা থাকে। আর তারই সুযোগ নিয়ে দিনে দুপুরেও অসামাজিক কার্যকলাপের মূল আখড়া হয়ে পড়েছে এই পার্ক। চলছে দেদার মদ্যপান থেকে গাঁজা, হেরোইনের কারবার। অভিযোগ শুধু সন্ধ্যের পরই নয়, দিনের বেলায়ও এই জায়গায় কেউ আসতেও ভয় পায়।

উল্লেখ্য, প্রায় তিনবছর বর্ধমান পুরসভায় কোনো বোর্ড নেই। দীর্ঘদিন ধরেই চলছে প্রশাসক নিয়ে কাজ। ফলে আগ বাড়িয়ে কেউই এব্যাপারে এগিয়ে যেতে চাইছেন না। কারণ এই অসামাজিক কার্যকলাপ রোধ করতে গেলে রাজনৈতিক বিদ্বেষ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি প্রতিবাদ করলে দুস্কৃতিদের হামলার আশঙ্কাও করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে সবমিলিয়ে কার্যত হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন তৃণমূলের নেতারাও। যদিও এব্যাপারে ৩০নং ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা তথা সমাজসেবী অজিত খাঁ জানিয়েছেন, তাঁর কাছেও খবর এসেছে এই পার্কের অসামাজিক কাজকর্ম নিয়ে। আর তারপরই তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন পার্কের আগাছা, জঙ্গল সাফ করে, নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ফের এই পার্ককে শিশুদের বিচরণ ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়ার। এমনকি এই উদ্যানকে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত করে তোলার।

তিনি জানিয়েছেন, তিনি এই পার্ককে গত দুবছর আগে সাজিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ফের নোংরা, আবর্জনা, জঙ্গলে পূর্ণ হয়ে গেছে। নেশারুদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে এই পার্ক। সাধারণ মানুষ থেকে শিশুরা আর এই পার্কে আসতে চায় না। তাই এই অব্যবস্থাকে বন্ধ করে ফের এই পার্কের সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এলাকার মানুষের সহযোগিতায় এই পার্ককে ফের নতুন করে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এই পার্ক কে ফের সকলের ভ্রমণের জন্য করে উপযোগী করে তোলা হবে। 

তিনি জানিয়েছেন, পার্কের ভিতর লাগানো হবে আলো। নির্দিষ্ট সময়েই খোলা এবং বন্ধ থাকবে পার্কের দুদিকের গেট। অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। কোনোরকম নেশা এই এলাকায় নিষিদ্ধ করা হবে।  অন্যদিকে, পুরসভার সম্পত্তি এই পার্কের অসামাজিক কাজ নিয়ে এবং এই পার্ক কে কিভাবে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত ও নিরাপদ করে দেওয়া যায় সেই প্রসঙ্গে সদ্য রাজ্য সরকার নিযুক্ত পৌর প্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই পার্ক সম্পর্কে বিশদে খোঁজখবর নেওয়ার পর যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।

Recent Posts