বর্ধমানের নামী স্কুলের দুই হেড মাষ্টারের মধ্যে লড়াই তুঙ্গে, থানায় অভিযোগ দায়ের

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বর্ধমান শহরের ঐতিহ্যবাহী স্কুল মিউনিসিপ্যাল বয়েজ স্কুলের দুই প্রধান শিক্ষকের লড়াই এবার তুঙ্গে উঠল। কয়েকদিন আগেই স্কুলের একটি বিশাল শিরিষ গাছ আচমকাই মারা যাওয়ায় তার তদন্ত চেয়ে স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিত পাল বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ পেয়ে পুলিশও যথারীতি স্কুলে এসে তদন্ত শুরু করে। এনিয়ে হৈ চৈ শুরু হতেই এবার ওই প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিত পালের বিরুদ্ধে পাল্টা থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন স্কুলের মাধ্যমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক শম্ভুনাথ চক্রবর্তী। আর এই ঘটনায় গোটা শহর জুড়েই শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন। এমনকি দুই শিক্ষকের এই লড়াইকে ঘিরে নেট দুনিয়াতেও চলছে ব্যাপক অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ। 

কার্যত, স্কুলের অভিভাবক থেকে প্রাক্তনীরা আড়াআড়িভাবে বিভক্ত হয়ে দুপক্ষের সমর্থনে লড়াই শুরু করে দিয়েছেন। এদিকে, এই কলহের মাঝে শনিবার সকালে বিষয়টিতে আরও মাত্রা নিয়ে এলেন বিশ্বজিত পাল। এদিন তিনি ফের থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানিয়েছেন, এদিন রাজ্য সরকারের নির্দেশে স্কুলের ছাত্রদের জুতো দেবার কর্মসূচি চলছিল। আর তা শেষ হতে না হতেই স্কুলের এক শিক্ষক তাঁকে আক্রমণ করেন। তাঁকে হেনস্থা করা হয়, কেড়ে নেওয়া হয় তাঁর মোবাইল ফোন। বিশ্বজিতবাবু অভিযোগ করেছেন, এই অবস্থায় তিনি তাঁর প্রধান শিক্ষকের ঘর থেকে বাইরে বেড়িয়ে এসে দেখেন সেখানে বেশ কয়েকজন ঘোরাঘুরি করছে। তিনি সন্দেহ করেন, তাঁর ওপর ফের হামলা হতে পারে। এই অবস্থায় তিনি স্কুল ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর জীবনহানির আশংকা রয়েছে।

অন্যদিকে, এদিন মাধ্যমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক শম্ভুনাথ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এই স্কুলের সমস্ত সম্পত্তি মাধ্যমিক বিভাগের। প্রাথমিক বিভাগের কিছু নেই। কিন্তু তারপরেও প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক তাঁকে না জানিয়েই গাছের রহস্যমৃত্যু নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। স্কুলে অবাঞ্ছিত পুলিশের প্রবেশ ঘটেছে। আর তাঁকে না জানিয়ে স্কুলের সুনামকে নষ্ট করার জন্য তিনি পাল্টা বিশ্বজিত পালের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, গাছের মৃত্যু নিয়ে তিনি বনদপ্তরকে আলাদাভাবে তদন্তের জন্য আবেদন করতে চলেছেন।

এদিকে, এই দুই শিক্ষকের আকচা আকচির মাঝে জানা গেছে, প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিত পাল সহ ১৩জন শিক্ষক মাধ্যমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষকের কাছে ২০১৯ থেকে ২০২১ শিক্ষাবর্ষের টাকার হিসাব চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। আর তারপরেই শুরু হয়েছে নতুন করে চাঞ্চল্য। ওই চিঠিতে শিক্ষকরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর প্রাথমিক বিভাগ থেকে ৫ লক্ষ টাকা তুলে দেন তাঁরা মাধ্যমিক বিভাগের হাতে। অথচ প্রাথমিক বিভাগের শিক্ষকদের বসার জন্য প্রয়োজনীয় চেয়ার পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এমনকি প্রাথমিক বিভাগের একাধিক সমস্যা নিয়ে তাঁরা বারবার আবেদন করা হলেও তাতে কান দেননি প্রধান শিক্ষক শম্ভুনাথ চক্রবর্তী। আর তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা প্রাথমিক বিভাগ থেকে যে টাকা তুলে দেন তার হিসাব চেয়েছেন।

সম্ভবত, তার পরেই প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে নেমেছেন মাধ্যমিক বিভাগ – এমনটাই অভিযোগ অন্যান্য শিক্ষকদের। আর তারই মাঝে গাছের অপমৃত্যু নিয়ে বিশ্বজিত পাল তদন্ত চাওয়ায় এবার সেই পথেই তাঁকে সবক শেখানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে শনিবার বিশ্বজিতবাবু অভিযোগ দায়ের করার পর ঘটনার তদন্ত শুরু করে দিল বর্ধমান থানার পুলিশ। অভিযোগ পেয়েই পুলিশ এদিন স্কুলে গিয়ে বিশ্বজিতবাবুর মোবাইল উদ্ধার করে তাঁর হাতে ফিরিয়ে দেন। পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদও শুরু করে দিয়েছে পুলিশও।