ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, পূর্ব বর্ধমান: দুর্ঘটনায় আহত এক ৫০বছর বয়সী ব্যক্তিকে মেমারী হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হলেও এম্বুলেন্স চালক রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে সোজা নবাবহাট এলাকার দিশান নার্সিংহোমে ভর্তি করে দেয় বলে পরিবারের লোকের অভিযোগ কে ঘিরে বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল। মেমারীর দেবীপুর গৌরিপাড়ার বাসিন্দা রোগীর ছেলে বসন ক্ষেত্রপাল অভিযোগ করেছেন, তাঁদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ সেই কার্ড নেয়নি। উপরন্তু বিনা চিকিৎসায় তাঁর বাবা তরুণ ক্ষেত্রপালকে গত মঙ্গলবার ভর্তি করার পর থেকে দুদিন ফেলে রেখে বৃহস্পতিবার তাঁদের কাছ থেকে ৪৩হাজার টাকা দাবি করে। তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় তার বাবার দুটো পা ভেঙ্গে গিয়ে গুরুতর জখম হন।
বসন ক্ষেত্রপাল অভিযোগ করেছেন, এই টাকা না দিলে রোগী এবং বাড়ির লোকেদের আটকে রাখা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয় নার্সিংহোমের পক্ষ থেকে। তাঁদের মোবাইল ফোনও কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।এরপর বসন ক্ষেত্রপাল প্রশাসন এবং পুলিশ কে বিষয়টি জানায়। পরে বর্ধমান থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নার্সিং হোম কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শেষমেষ ৫হাজার টাকায় সমস্যাটি মিটমাট করে দেয়।
যদিও বসন ক্ষেত্রপাল গোটা ঘটনার বিষয় জানিয়ে জেলাশাসকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা গোটা ঘটনার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। জেলাশাসক জানিয়েছেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন, অবশ্যই তদন্ত করা হবে। পাঁচ হাজার টাকাও দেওয়া উচিত হয়নি। কেন এভাবে রফা হবে? প্রশাসনের কাছে আগে আসা উচিত ছিল। সমস্ত নার্সিংহোমের সাথে বসা হবে, সরকারি নিয়ম নির্ধারণ অনুসরণ করতে বলা হবে।
এদিকে ৪৩হাজার টাকার বিল কিভাবে পুলিশি হস্তক্ষেপে মাত্র ৫হাজার টাকায় চলে এলো তা নিয়েও এই ঘটনায় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এমনকি নার্সিংহোম যদি বৈধভাবে চলে তাহলে কিভাবে সেখানে রোগীর পরিবারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও নেওয়া হলোনা – তা নিয়েও তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। অন্যদিকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা রোগীকে মেমারীর এম্বুলেন্স চালক কিভাবে সরাসরি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে চলে যায়, তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অতিমারী এই করোনা আবহে বর্ধমানের নার্সিংহোম গুলির একাংশ যেভাবে অবৈধভাবে রোগীর পরিবারের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভুত ভাবে অর্থ আদায় করছে বলে বারবার অভিযোগ সামনে আসছিল, এদিনের ঘটনায় সেই অভিযোগে সিলমোহর দেওয়া হলো বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
পাশাপাশি দিশান নার্সিংহোমের ম্যানেজার জানান, রোগীর পরিবার রোগীকে ভর্তি করার সময় স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নেই বলেই তাদের জানিয়েছিলেন। তাদের এখানে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের পরিষেবা দেওয়ার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্য সাথীর রোগীদের পরিষেবা দিতে পারিনা, ওনাদেরও সেটা জানিয়েছিলেন। ৩১ হাজার টাকা বিল করা হয়েছিল তরুণ ক্ষেত্রপালের বলেও ম্যানেজার এদিন জানিয়েছেন।