ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমানের পালিতপুরের লোহার রড তৈরির কারখানায় ফার্নেস বিস্ফোরণে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছে আরও ১১ জন। সোমবার বিকেল ৪টা নাগাদ ভয়াবহ এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুজনকে কলকাতা রেফার করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। দুর্ঘটনার পরই বর্ধমান থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী সহ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক ব্যানার্জি ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কি কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটল, কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা, সবদিক তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

এদিন বিকেল ৪ টে নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। সেই সময় কারখানায় ২০০ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করছিল বলে কারখানা সূত্রে জানা গেছে। কারখানায় মোট ৬ টি ফার্নেস রয়েছে। এই ফার্নেস গুলিতে লোহা গলানোর কাজ করা হয়। উচ্চ তাপমাত্রায় লোহা গলানো হয়। এদিন ৪ টি ফার্নেস চালু ছিল। তারমধ্যে একটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের ফলে তরল লোহা চারপাশে ছিটকে যায়। পাশাপাশি, ফার্নসের লোহার ভাঙ্গা টুকরো ছিটকে পড়ে চারদিকে। বিস্ফোরণের সময় ফার্নেসের নিচের এলাকায় লরি থেকে কাঁচামাল খালি করার কাজ চলছিল। সেই সময় সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল একটি লরির চালক। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তার। পাশাপাশি কারখানার ১১ জন শ্রমিক আহত হন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। মৃতের পরিচয় জানা যায়নি।
তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি সন্দীপ বসু জানান,” এই ঘটনা দুঃখজনক। মৃতের পরিবারের যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি, আহতের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দিকটিও বিবেচনা করে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি আদায় করা হবে। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করছে শ্রমিক সংগঠন।”
এদিকে এই দুর্ঘটনার পিছনে কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছে শ্রমিকদের একাংশ। এর আগেও এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে এই কারখানায়। তাদের দাবি, কারখানার ফার্নেস গুলি সঠিক সময়ে রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হত না। অধিকাংশ শ্রমিককে যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা যেমন, হেলমেট, জুতো, গ্লাভস ছাড়াই কাজ করতে হত। কারখানা কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হত না বলে অভিযোগ তাদের। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
কারখানার ম্যানেজার মনোজ জানান,” কারখানা চলাকালীন এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিকদের সুরক্ষার সব দিক কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এরপরেও অনেক শ্রমিক নিজেদের অবহেলায় সঠিক সুরক্ষা না নিয়েই কাজ করে। যদিও ফার্নেস গুলি সঠিক সময়েই নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় বলেও তিনি দাবি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার সঠিক কারণ তদন্ত করে দেখা হবে। কর্মরত অবস্থায় কোনোও শ্রমিক আহত বা মারা গেলে নিয়ম মেনে তার ক্ষতিপূরণেরও ব্যবস্থা করা হবে।
জেলাশাসক আয়েশা রানী এ জানান,” মঙ্গলবার ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টর কারখানাটি পরিদর্শন করবেন। তদন্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের কলকাতায় রেফার করা হয়েছে।” শ্রমিক পরমবীর যাদব বলেন, এই শ্রমিকদের অনেকেই ভিনরাজ্যের। কীভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটল তা বুঝে উঠতে পারেন নি তারা। অন্যদিকে পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক ব্যানার্জি জানান, একটি স্পঞ্জ কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।