ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান পুর এলাকার দীর্ঘদিনের যানজট সমস্যা মেটাতে এবার রীতিমত কোমর বেঁধে নামতে চলেছে জেলা প্রশাসন। একদিকে যেমন শহর জুড়ে অনুমোদনহীন কয়েক হাজার টোটোর দাপটে সাধারণ মানুষের চলাচল করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে শহরের বি সি রোড, খোসবাগান, বি বি ঘোষ রোড সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক রাস্তায় হকারদের অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ব্যবসা করাকে কেন্দ্র করে নাজেহাল শহরবাসী। এবার শহরের যানজট কেন্দ্রিক এই দুই প্রধান সমস্যা দুর করতে একাধিক পদক্ষেপ নিতে চলেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার জেলা শাসকের কনফারেন্স হলে টোটো সমস্যা, হকার সমস্যা ও শহরের বেহাল রাস্তাঘাট নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজিত হয়। জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলার উপস্থিতিতে এদিন এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার কামনাসিশ সেন, পরিবহন আধিকারিক অনুপম চক্রবর্তী, বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস, পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার, ভাইস চেয়ারপার্সন মৌসুমী দাস, একাধিক কাউন্সিলার এবং টোটো ও হকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
খোকন দাস বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে শহরের টোটো সমস্যা দূর করা হবে। এরই সাথে যে সমস্ত হকার শহরের জনবহুল রাস্তার ধারে বসে ব্যবসা করছেন তাদের পিচ রাস্তা থেকে সরে যেতে হবে। সাধারণ মানুষের অসুবিধা করে এবং সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসা করা যাবে না। তবে আমরা কারুর পেটের ভাত মারতে চাইছি না। শহরের মানুষের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে টোটোর প্রয়োজন আছে। তাবলে একই মালিকের একাধিক টোটো রাস্তায় চলবে না। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সংখ্যক টোটোই যাতে শহরের রাস্তায় চলাচল করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। টোটোর চলককেই টোটোর মালিক হতে হবে। এক্ষেত্রে কোন একজন ৫০টা টোটো রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে ভাড়া তুলবে সেটা করা যাবেনা। এর জন্য প্রত্যেক ওয়ার্ডে একটি করে ক্যাম্প করে টোটোর মালিকদের নাম নথিভুক্ত করা হবে। পরবর্তীকালে পৌরসভা থেকে অনুমোদনহীন টোটোর কাগজপত্র দেখে নির্দিষ্ট রুটে চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হবে।’
খোকন দাস বলেন, ‘এদিনের আলোচনায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী শনিবার সকাল ৯টায় কার্জন গেট থেকে উত্তর ফটক পর্যন্ত বিসি রোড বরাবর জেলা প্রশাসনের আধিকারিক দের উপস্থিতিতে পর্যবেক্ষণ করা হবে সার্বিক পরিস্থিতি। বিসি রোডের দুধারে যারা রাস্তার উপর বসে হকারি করছেন তাদের রাস্তা ছেড়ে বসতে হবে। সাধারণের যাতায়াতের রাস্তা আটকে ব্যবসা করা যাবে না। অনেকেই নিজের দোকান কে গোডাউন করে রেখেছেন, আর ব্যবসা করছেন রাস্তার উপর। এতে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সমস্যা তৈরি হয়েছে। এব্যাপারে প্রশাসন, পুরসভা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ দুটো পর্যায়ে শহরে টোটো চলাচল করবে। দিনে ও রাতে। সেক্ষেত্রে আগামীদিনে দিনের টোটোর রং নীল ও রাতের টোটোর রং সাদা করার ভাবনাচিন্তা করা হয়েছে।
পুরপতি বলেন, ‘পঞ্চায়েত এলাকার টোটো পুরসভা এলাকায় প্রবেশ করবে না। মেডিকেল ইমারজেন্সি ছাড়া। অন্যদিকে পুরসভা এলাকার টোটো পঞ্চায়েত এলাকায় যাতায়াত করবে না। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া। যেমন জাতীয় সড়কের উপর অনাময় হাসপাতালে যেতে হলে বৈধ কাগজ কিংবা রোগীকে টোটোয় থাকতে হবে।’ এদিনের বৈঠকে বর্ধমান শহরের মূল তিনটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলেও বাস্তবে সাধারণ মানুষ আগামী দিনে কতটা সুরাহা পাবে তা নিয়ে বর্ধমানবাসীর একাংশ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, এর আগেও একাধিকবার এই ধরনের পদক্ষেপ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার কোন বাস্তবায়ন হয়নি। এখন নতুন পুর বোর্ড গঠন হওয়ার পর শহরবাসী কে দীর্ঘদিনের যানজট যন্ত্রণা থেকে কতটা মুক্তি দিতে পারে তা সময়ই বলবে বলেই মত প্রকাশ করেছেন শহরবাসী।