ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: রাজ আমলে প্রতিষ্ঠিত কয়েকশো বছর পর বর্ধমান শহরের শূলিপুকুরের নাম পরিবর্তন হতে চলেছে। নতুন নাম হচ্ছে জীবন সায়র।
বিজ্ঞাপন
আগামী ৩০ জুলাই বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের হাত ধরে নবরূপে ওই পুকুরের সৌন্দর্য্যায়নের উদ্বোধন করবেন বিডিএ-র চেয়ারম্যান রবিরঞ্জন চট্টেপাধ্যায়। রবিরঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, শূলিপুকুর নামটি স্থূল শব্দ। এই নামের মধ্যে দিয়েই মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখিত হয়। তাই রাজ আমলের কৃষ্ণসায়র, শ্যামসায়রের নামানুসারেই নতুন করে এই পুকুরের নামকরণ করা হয়েছে জীবন সায়র। মৃত্যুর ঠিক বিপরীত।
বর্ধমানের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ড. সর্বজিত যশ জানিয়েছেন, কবে বা কোন রাজার আমলে এই শূলিপুকুর প্রতিষ্ঠিত হয় তা জানা যায়নি। এমনকি এই পুকুরে যে শূলে কাউকে চড়ানো হয়েছে এমন ইতিহাসও মেলে না। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৭০-এর দশকেও এই পুকুরের মাঝে শূলটি দেখতে পাওয়া যেত। তিনি জানিয়েছেন, মানুষকে অপরাধের ভয়াবহতা বোঝাতে এবং অপরাধ থেকে দূরে রাখতেই এই শূল প্রতিষ্ঠা করা হয়ে থাকতে পারে। তবে তিনি জানিয়েছেন, শূলিপুকুর নামকরণের মধ্যে দিয়ে একটা নির্মমতা প্রকাশ পেত। তারবদলে জীবন সায়র নামটি অত্যন্ত যথাযথ।
তিনি জানিয়েছেন, এর মাধ্যমে ইতিহাস মুছে যাবে না। কারণ মানুষের কাছে ইতিহাস থেকেই যায়। নতুন নামকরণের পরও তা মুছে না – তার প্রমাণ দমদম বিমান বন্দর থেকে শুরু করে মেট্রো ষ্টেশনগুলোর নামকরণ। তিনি জানিয়েছেন, রাজ আমলে এই পুকুরের পাড়ে ছিল ঘোড়ার আস্তাবল। ঘোড়ারা এই পুকুরে জল খেত। অন্যদিকে, রবিরঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, বিডিএ-র উদ্যোগে এই শূলিপুকুরের সংস্কার এবং তার সৌন্দর্য্যায়ন ঘটাতে গিয়ে তাঁরা জানতে পেরেছেন প্রায় ২০০ বছর এই পুকুর সংস্কার করা হয়নি। পুকুরে পুরু পানা গজিয়ে যাওয়ায় পানার ওপর দিয়ে হেঁটে এপার ওপার করা যেত। যদিও পুকুরের গভীরতা অনেক বেশি।
তিনি জানিয়েছেন, যে সংস্থা এই পুকুরের সংস্কার করতে নেমেছিল তারা পুরনো প্রায় ২০ কেজি সিঙ্গি মাছ পেয়েছেন। রবিরঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, পুকুরের ৪দিকের মধ্যে বর্তমানে দুদিকে বসতি থাকায় কিছুটা সৌন্দর্য্যায়নে সমস্যা হয়েছে। এব্যাপারে তাঁরা আলোচনা চালাচ্ছেন। বাকি দুটি পাড়ে পাম গাছ লাগানো হয়েছে। এছাড়াও ঐতিহ্য মেনে পুকুরে ৪টি রাজহাঁস ছাড়া হচ্ছে যা সাধারণ মানুষকে আনন্দ দেবে। আস্তে আস্তে গোটা পুকুরে আরও কিছু নতুনত্ব আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রবিরঞ্জনবাবু দাবী করেছেন, বর্ধমান রাজের বর্তমান রাজকুমার প্রণয়চাঁদ মহতাব এই পুকুর সংস্কার হওয়ার খবরে অত্যন্ত খুশী হয়েছেন বলে তাঁকে জানিয়েছেন।