বর্ধমানে একদিকে বিজেপির ঘর ভাঙছে, অন্যদিকে ঘর সামলাতে গোঁজ প্রার্থীর সাসপেনশন তুলে নিল গেরুয়া শিবির, চর্চা শুরু

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: ক্রমেই হিসাব নিকাশ উলট পালট হয়ে যাচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলার বিজেপির অন্দরে। একদিকে, বিজেপির ঘর ভাঙছে, অন্যদিকে, ভাঙা ঘর ফের মেরামতের উদ্যোগ নিচ্ছে। আর খোদ দলের এই দুই বিপরীত চিত্রকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল গেরুয়া শিবির। শুক্রবার বর্ধমানের একটি বিয়েবাড়িতে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে ১৬জন নেতাকে নিয়ে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন অবিভক্ত বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি স্বপন ভট্টাচার্য। এদিন এই অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে তৃণমূলের দলীয় পতাকা তুলে দেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ।

 তাঁর সঙ্গে এদিন উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান উত্তর বিধানসভার প্রার্থী নিশীথ মালিক, পূর্বস্থলী উত্তরের প্রার্থী তপন চট্টোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের মেণ্টর উজ্জ্বল প্রামাণিক, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম, জেলা যুব সভাপতি রাসবিহারী হালদার সহ তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতৃবৃন্দ। এদিন বিজেপি ছেড়ে স্বপন ভট্টাচার্যের সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দিলেন পূর্বস্থলী ২নং ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি উত্তম ঘোষ, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত মণ্ডল যুব মোর্চার নেতা স্বাধীন পাত্র, সঞ্জয় মণ্ডল, মিলন ঘোষ, প্রবীর দেবনাথ, প্রকাশ বৈদ্য, কিশোর সর্দার, সুভাষ বড়াল, তপন গুহ, শুসান মালিক, বাবু ঘোষ, প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য সঞ্জিত মণ্ডল, যুবমোর্চার নেতা সঞ্জয় মণ্ডল এবং শ্রীকান্ত বাগ। 

স্বপন দেবনাথ এদিন জানিয়েছেন, এই নেতৃত্বদের সঙ্গে প্রায় হাজার খানেক সমর্থকও বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন। এরই পাশাপাশি জেলার সমস্ত মহকুমাতেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন একাধিক নেতা কর্মীরা। বিজেপির জঙ্গী নেতা হিসাবে পরিচিত এবং অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় বিজেপির সভাপতি স্বপন ভট্টাচার্য এদিন বলেন, বিজেপি তাঁর দর্শন থেকে দূরে সরে গেছে। যে লালকৃষ্ণ আদবাণীর বিজেপি একসময় বলত, যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় আসা বিজেপির লক্ষ্য নয়, এখন তার উল্টো হচ্ছে। তাই তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন।

যদিও এদিন স্বপন ভট্টাচার্য্যের বিজেপি ত্যাগ নিয়ে বিজেপির জেলা নেতারা বলেছেন, একটা সময় স্বপন ভট্টাচার্য বিজেপি দলের স্তম্ভ ছিলেন। কিন্তু তারপরেও তিনি বিজেপি ছেড়ে় শিবসেনায় যোগ দিয়েছিলেন। ফলে তিনি বিজেপি ছেড়েছেন অনেকদিন আগেই। পরে শিবসেনা ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা অনেকদিন আগেই অস্তমিত হয়ে যায়। কেবলমাত্র পূর্বস্থলীর কালেখাঁতলা এবং বিশ্বরম্ভা এলাকাতেই তাঁর কিছু দাপট থাকলেও জনপ্রিয়তা অনেক আগেই তিনি হারিয়েছেন। তাই তাঁর মত সুবিধাবাদী চলে যাওয়ায় বিজেপি দলের কোনো ক্ষতি হবে না।

এদিকে, একদিকে যখন বিজেপির ঘর ভাঙার খেলা শুরু হয়েছে, তখন অন্যদিকে সম্প্রতি বিজেপির সদর কার্যালয়ে হামলার অভিযোগে দল থেকে একবছরের জন্য সাসপেণ্ড করা ৩ নেতার মধ্যে স্মৃতিকান্ত মণ্ডলকে ফিরিয়ে নিল বিজেপি রাজ্য কমিটি। বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁকে চিঠি দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সাসপেনশন তুলে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, স্মৃতিকান্ত মণ্ডল দলের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে বিজেপির গোঁজ প্রার্থী তথা নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। যা নিয়ে গেরুয়া শিবির চিন্তায় পড়ে। তাঁকে নির্বাচনী ময়দান থেকে সরিয়ে বিজেপির অফিসিয়াল প্রার্থী সন্দীপ নন্দীর পথ পরিষ্কার করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

যদিও এদিন স্মৃতিকান্ত মণ্ডলের ঘনিষ্টরা জানিয়েছেন, এখন তাঁরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার বিষয়টি ভাবছেন। কিন্তু তাঁর আগে তাঁদের দাবী মেনে সকলের ওপর থেকে সাসপেনশন তুলে নিতে হবে। এব্যাপারে শুক্রবারই রাতে তাঁরা বৈঠকে বসছেন। কারণ আজ শনিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই বর্ধমান উত্তরে গণেশ মাঝি, বর্ধমান দক্ষিণে স্মৃতিকান্ত মণ্ডল নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।