বর্ধমানে এবার খোদ সরকারি আবাসনের তিনটি বন্ধ ফ্ল্যাটে চুরি, শহরের নিরাপত্তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন, আতঙ্ক

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: একদিকে প্রতিদিনই বর্ধমান পুলিশ ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়া দুষ্কৃতিদের পাকড়াও করছে, আর অন্যদিকে কার্যত প্রতিদিনই বর্ধমান শহরে বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলেছে বন্ধ বাড়িতে চুরি ঘটনা। সম্প্রতি গোটা বর্ধমান শহরে একাধিক চুরির ঘটনায় গোটা শহর জুড়েই রীতিমত আতংক দেখা দিয়েছে। এতদিন বেসরকারি আবাসন এবং ব্যক্তি মালিকানার বাড়িতে চুরির ঘটনা সামনে আসলেও, এবার খোদ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের আবাসনেও চুরির ঘটনা ঘটায় রীতিমত বেকাদায় পড়েছে জেলা পুলিশ। 

শুক্রবার রাতে বর্ধমানের সাধনপুর রেণ্টাল হাউসিং এষ্টেটের ৩টি ফ্ল্যাটে ভয়াবহ চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। আর এরপরই আতংক আরও বেড়েছে। গত কয়েকদিনে বর্ধমান শহর ও শহর সন্নিহিত এলাকায় বিশেষত, বন্ধ বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে। চলতি সপ্তাহেই রবিবার শক্তিগড় থানার গোঁসাইপাড়ায় একটি বন্ধ বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে চুরির ঘটনা ঘটে। পরেরদিন সোমবার বর্ধমান শহরের লোকো এলাকায় একটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার ইন্দ্রপ্রস্থে একটি বাড়িতে ফের চুরির ঘটনা ঘটে। তারও আগে গত সপ্তাহে বাহির সর্বমঙ্গলাপাড়াতেও একইভাবে চুরির ঘটনা ঘটে। এমনকি রেনেসাঁ উপনগরীতেও পুজোর আগে এবং পরে একই কায়দায় একাধিক বাড়িতে চুরি করে পালিয়েছে চোরেরা। সমস্ত ক্ষেত্রেই বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছে দুস্কৃতিরা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি বিজয়া সম্মিলনে গিয়ে জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন এই ধরণের চুরি ঠেকাতে বিশেষ পদক্ষেপ নেবার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু এখনও পুলিশের তরফে এরকম কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আর তারই মাঝে লাগাতার চুরির ঘটনায় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিয়েই উঠেছে বড়সড় প্রশ্ন। জানা গেছে, শুক্রবার রাতে খোদ বর্ধমানের সাধনপুর রেণ্টাল হাউসিং এষ্টেটের ৩টি ফ্ল্যাটে এই চুরির ঘটনায় চাঞ্চল্য আরও বেড়েছে। জানা গেছে, এই চত্বরে রয়েছে ২০টি আবাসন। রয়েছে ১২৮টি ফ্ল্যাট। এই ১২৮টি ফ্ল্যাটের মধ্যে বসবাস করেন প্রায় ১২৫টি পরিবার।

শুক্রবার রাতে এস-৮ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা কৌশিক সামন্ত বাড়িতে ছিলেন না। তিনি তাঁর পৈত্রিক বাড়ি মেদিনীপুরে গেছিলেন। কৌশিকবাবু বনদপ্তরের মঙ্গলকোটে সরকারী পদে কর্মরত। তাঁর ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভেঙে চুরি হয়েছে। একই রাতে অন্য আবাসনের এফ -১ ফ্ল্যাটে থাকেন সৌনক মিশ্র। তিনি বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের ইঞ্জিনিয়ার। তিনিও বাড়িতে ছিলেন না শুক্রবার রাতে। তাঁরও ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভেঙে চুরি হয়েছে। একইভাবে এন ব্লকের বাসিন্দা বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স সোমা সাধু শুক্রবার রাতে ডিউটিতে গিয়েছিলেন। তাঁর ফ্ল্যাটেও চুরির ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, পরপর ৩টি ফ্ল্যাটেই প্রায় একই কায়দায় এই চুরি করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাটের উল্টোদিকের ফ্ল্যাটের দরজাকে বাইরে থেকে লাগিয়ে চোরের দল তাদের অপারেশন চালিয়েছে নির্বিবাদে। জানা গেছে, সোনার গহনা, মোবাইল ফোন সহ নগদ টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে চোরের দল। ঘরের আলমারি, বিছানা সহ জিনিসপত্র তছনছ করেছে দুষ্কৃতীরা। উল্লেখ্য, এই সাধনপুর হাউসিং-এর লাগোয়া রয়েছে সার্কিট হাউস, জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মহকুমা শাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসকদের আবাসন। রয়েছে অন্যদিকে, খোদ জেলাশাসকের বাংলো এবং বর্ধমান ভবন, যেখানে থাকেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সহকারী সভাধিপতিরা। শুধু তাইই নয়, এই হাউসিং এষ্টেটেই থাকেন জেলা প্রশাসনের একাধিক পদাধিকারী।

আবাসিকরা জানিয়েছেন, এই হাউসিং এষ্টেটে কোনো সরকারী নিরাপত্তা রক্ষী নেই। আবাসিকরাই নিজেদের উদ্যোগে ৪জন নিরাপত্তা রক্ষী রেখেছেন। একইসঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন, সারা দিনান্তে অবাধ প্রবেশাধিকার রয়েছে সব্জী, মাছ, দুধ বিক্রেতাদের। এদিকে, একদিকে যখন লাগাতার চুরির ঘটনায় আতংকিত বর্ধমানের মানুষজন। সেই সময় গত কয়েকদিনে ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়া একাধিক দুষ্কৃতিদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও উদ্ধার করা হয়েছে ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় নানান ধরণের সরঞ্জাম।

ফলে খোদ শহরেই একের পর বন্ধ বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটতে থাকায় রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। কিভাবে, কদের কাছ থেকে চোরেরা বাড়ি বন্ধ, বা বাড়িতে কেউ নেই – এই খবর পেয়ে একের পর এক সফল অপারেশন চালাচ্ছে তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। যদিও জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই এই সমস্ত চুরির সঙ্গে যুক্ত অপরাধী দের গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশ প্রতিটি চুরির ঘটনার জোরদার তদন্ত চালাচ্ছে।

Recent Posts