বর্ধমানে করোনা আতংকে অক্সিজেন সিলিণ্ডার মজুদ করার হিড়িক, চাহিদা বাড়তেই কালোবাজারি শুরু

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলায় করোনা সংক্রমণের হার যতই বাড়ছে ততই বাড়ছে অক্সিজেন সিলিণ্ডারের চাহিদা। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে সাধারণ সময়ে যেখানে অক্সিজেন সিলিণ্ডারের চাহিদা থাকে ১০০ এখন সেটাই বেড়ে দাঁড়িয়ে ৫গুণ বেশি প্রায় ৫০০টি তে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রীতিমত অক্সিজেন সিলিণ্ডার নিয়ে কালোবাজারিও চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, গোটা দেশে মাত্র ৪টি সংস্থা এই অক্সিজেন সিলিণ্ডার তৈরী করেন। শুধু ভারতই নয়, এই সিলিণ্ডার ভারতের বাইরেও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু চলতি করোনা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এই অক্সিজেন সিলিণ্ডারের চাহিদা এতটাই তীব্র আকার নিয়েছে যে ওই সিলিণ্ডার নির্মাতা সংস্থাগুলিও কার্যত হাঁপিয়ে উঠছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলার অক্সিজেন সিলিণ্ডার বিক্রেতা বিজয় কুমার মিশ্র জানিয়েছেন, অক্সিজেন সিলিণ্ডারের চাহিদা নির্দিষ্ট চাহিদার তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বেড়ে গেছে। তিনি জানিয়েছেন, একইসঙ্গে তিনিও অভিযোগ পাচ্ছেন অক্সিজেন সিলিণ্ডার নিয়ে অতিরিক্ত মূল্যও চাওয়া হচ্ছে। বিজয়বাবু জানিয়েছেন, এই জীবনমরণ সমস্যায় অতিরিক্ত দাম না নেওয়ার আবেদনও তিনি জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, তিনি জানিয়েছেন, তিনি খালি অক্সিজেন সিলিণ্ডার বিক্রি করেন। আর সিলিণ্ডারে অক্সিজেন গ্যাস ভর্তি করা হয় দুর্গাপুরে। সিলিণ্ডার পিছু কমবেশী খরচ হয় ২৫০ টাকা। জানা গেছে, বর্ধমান জেলা জুড়েই করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ফাটকা কারবারের জন্য বহু ব্যবসায়ীই বিশেষ করে ওষুধ ব্যবসায়ীও এখন এই অক্সিজেন সিলিণ্ডার ভাড়া দিচ্ছেন।
বিজয়বাবু জানিয়েছেন, চলতি সময়ে করোনা সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়তে থাকায় বহু মানুষই আতংকে বাড়িতে অক্সিজেন সিলিণ্ডার মজুদ করে রাখছেন। এই প্রবণতাতেই অক্সিজেন সিলিণ্ডারের চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। আর সেই চাহিদা অনুযায়ী যোগান দিতে তাঁরা হিমসিম খাচ্ছেন। প্রসঙ্গত, তিনি জানিয়েছেন, তিনি শুধু পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই নয়, পশ্চিম বর্ধমান, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি এলাকাতেও অক্সিজেন সিলিণ্ডার বিক্রি করেন। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে গেছে যে এখন প্রতিটি এলাকা থেকেই প্রচুর চাহিদা আসছে। এমনকি কলকাতা থেকেও তাঁর কাছে অক্সিজেন সিলিণ্ডারের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু কোম্পানী এত দ্রুত মাল সরবরাহ করতে পারছেন না।
তিনি জানিয়েছেন, অক্সিজেন গ্যাসের কোনো অভাব বা সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলিণ্ডার নিয়েই। কারণ অহেতকু বাড়িতে বাড়িতে অক্সিজেন সিলিণ্ডার মজুদ করে রাখায় চলতি সময়ে একটি কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, অক্সিজেন সিলিণ্ডার ৪ রকমের। সাধারণ যে সিলিণ্ডার বি-টাইপ তার চাহিদাই এখন তুঙ্গে উঠেছে।
উল্লেখ‌্য, গত ২৪ জুলাই কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম দপ্তর থেকে অক্সিজেন সিলিণ্ডারের কালোবাজারি রুখতে নির্দেশিকাও জারী করেছে। এব্যাপারে সমস্ত লাইসেন্স প্রাপ্ত অক্সিজেন সিলিণ্ডার ব্যবসায়ী, সংস্থাগুলিকে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। কিন্তু তারপরেও যে হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে তাতে সাধারণ মানুষ আতংকে বাড়িতে অক্সিজেন সিলিণ্ডার যেভাবে মজুদ করতে শুরু করেছেন তা কিভাবে আটকানো যাবে তা নিয়েই এখন চিন্তা বাড়ছে।

Recent Posts