ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: একদিকে রেশন বণ্টন ব্যবস্থাকে অভিযোগহীনভাবে স্বাভাবিক রাখা এবং অন্যদিকে আগামী ১ মে থেকে শুরু হতে চলা সরকারী সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কাজ সহ জেলার ২৯টি রাইস মিল সরকারী হারে চাল না দেওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে আজ বর্ধমানে আসছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। জেলাশাসকের দপ্তরে এই বৈঠকে হাজির থাকবেন জেলার ওই ২৯টি রাইস মিলের মালিক, রাইস মিল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা সহ রেশন ডিলার ও এম আর ডিষ্ট্রিবিউশনের প্রতিনিধিরাও।
জেলা রাইস মিল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত মণ্ডল জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা জেলার প্রায় সমস্ত রাইসমিলই চালু করেছেন। কিন্তু তারই মধ্যে ২৯টি রাইস মিল সরকারী হারে চাল দিতে পারছেন না। খাদ্যমন্ত্রী তাঁদের ডেকেছেন – কি কারণে তাঁরা চাল দিতে পারছেন না সে বিষয়ও খতিয়ে দেখবেন তিনি। এদিকে, রাজ্যের অন্যান্য জেলার পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও রেশন ব্যবস্থা নিয়ে লাগাতার অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। খোদ জেলা খাদ্য ভবনের সামনে গিয়ে রাস্তায় বসে পড়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন গ্রাহকরা। এরই পাশাপাশি শহরাঞ্চল ছাড়াও গ্রাম এলাকা থেকেও রেশনের মাল বণ্টন নিয়ে অভিযোগ আসতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে, ১ মে থেকে প্রতিটি গ্রাহককে বিনামূল্যে ৫ কেজি করে চাল দেবার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমতবস্থায় গোটা প্রক্রিয়াকে সুস্থ এবং অভিযোগহীনভাবে পরিচালনার জন্য জেলাশাসক মঙ্গলবার জেলার রেশন ডিলারস এ্যাসোসিয়েশন, এম আর ডিলারস প্রতিনিধি এবং রাইস মিলারদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন। জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন, রেশন ডিলারদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যাঁদের কাছে রেশন কার্ড আছে তাঁরাই রেশনের মাল পাবেন। যাঁরা ডিজিটাল কার্ডের জন্য আবেদন করেও এখনও পাননি তাঁরা পুরনো কার্ড নিয়ে সংশ্লিষ্ট পুরসভা অথবা ব্লকের খাদ্য দপ্তরে গেলে তাঁদের কুপন দেওয়া হবে। সেই কুপনের মাধ্যমে তাঁরা রেশনের মাল পাবেন। কোনো অবস্থাতেই গ্রাহক যেন বঞ্চিত না হয় সে ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।
একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ৫টি রেশন ডিলারকে নিয়ে একজন করে ভিজিলেন্স অফিসার থাকছেন। তাঁরা সঠিকভাবে মাল দেওয়া হচ্ছে কিনা তা সরজমিনে খতিয়ে দেখবেন। রেশন দোকানে সামাজিক দূরত্ব মেনে মাল নেওয়া এবং কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় সেজন্য প্রতিটি রেশন দোকানে ২জনকে সিভিক ভলেণ্টিয়ার নিয়োগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলায় ১৩৫৬টি রেশন দোকানকেই সকাল ৭টা থেকে ১২টা এবং ২টো থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে। কারা কারা কতপরিমাণ কি পাবেন সে বিষয়ে প্রকাশ্যে তালিকা টাঙানো এবং খাদ্যদ্রবের মজুদ তালিকাও প্রকাশ্যে টাঙিয়ে রাখতে হবে। প্রতিটি রেশন দোকানেই ই-পস মেশিনের মাধ্যমে মাল তোলা নিশ্চিত করার ওপরও জোড় দিয়েছে্ন জেলাশাসক।
এদিকে এব্যাপারে ওয়েষ্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার্স এ্যাসোসিয়েশনের বর্ধমান জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক পরেশনাথ হাজরা জানিয়েছেন, জেলাশাসক তাঁদের যে নির্দেশ দিয়েছেন তাতে রেশন ডিলারদের মধ্যে থাকা অনেক জটিলতাই কাটবে। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা সরকারী নির্দেশ মানার জন্য সমস্ত রেশন ডিলারকে নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, এদিন পরেশবাবুরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকার একটি চেক মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দেবার জন্য জেলাশাসকের হাতে তুলে দেন। অন্যদিকে, বৈঠকে জেলাশাসক প্রতিটি রাইস মিলারদের ৫ মেট্রিক টন চাল সরকারীভাবে দেবার নির্দেশ দিয়েছেন।
সুব্রত মণ্ডল জানিয়েছেন, বর্তমানে শ্রমিক সমস্যার জেরে তাঁরা ২ মেট্রিক টন করে গড়ে চাল উৎপাদন করতে পারছেন। ৫ মেট্রিক টন করে চাল উৎপাদনের ক্ষেত্রে শ্রমিক সমস্যা মেটাতে জেলাশাসক পুলিশী সহায়তা দেবার আশ্বাস দিয়েছেন। একইসঙ্গে রাইসমিলারদের ওপরও নজরদারী করার জন্য তিনি খাদ্য দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারীভাবে চাল না দিয়ে কেউ ফাঁকি দিচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।