বর্ধমানে কুড়িয়ে পাওয়া পূজার জীবনসঙ্গী হলেন আর্ট কলেজের শিক্ষক, আশীর্বাদ দিলেন প্রশাসনিক কর্তারা

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: পাত্র পাত্রীর বিজ্ঞাপনে চোখ রাখলেই দেখতে পাওয়া যায় – অমুক পাত্র বা পাত্রীর জন্য অমুক বংশীয়, অমুক শ্রেণীর পাত্র বা পাত্রী চাই। বংশমর্যাদা, কৌলিন্যের গোঁড়ামি এখনও সমাজের বুকে আছে। সমাজ পরিবর্তন হয়েছে। চলছে প্রতিনিয়ত ভাঙাগড়ার খেলা। আর সেই খেলায় এবার সমাজের সেই পুরনো অচলায়তনের একটা ইঁট খসিয়ে চারহাত এক করে বিয়ে হল দেবাশীষ – পুজার। 

একসময় পুজার জীবন ছিল কুড়িয়ে পাওয়া। জীবন ছিল ছন্নছাড়া, উদ্দেশ্যহীন। জীবন জয়ের গল্পটা শুরু পনেরো বছর আগে। বর্ধমান ষ্টেশন থেকে ব্লাইন্ড একাডেমী পাঠানো হয় বছর পাঁচেকের পূজা দাসকে। অভিভাবকহীন হলেও সে কিন্তু দৃষ্টিহীন নয়।  মেয়েটি পড়ে লেখে বড় হয় ব্লাইন্ড একাডেমীতেই। মঙ্গলবার, তাঁর বিয়ে হল। বিয়ে দিলেন ব্লাইন্ড একাডেমীর সকলে। বর্ধমান ব্লাইন্ড একাডেমির পরিত্যক্ত শিশুদের হোমের সদ্য যুবতী পূজার বিয়ে হল ছোটনীলপুরের দেবাশিসের সঙ্গে। সর্বমঙ্গলা বাড়িতে চারহাত এক হলো আবাসিকদের উদ্যোগে শুভেচ্ছা সঙ্গে নিয়ে। রীতিমত সোনা দানা, আসবাবপত্র দিয়ে লোক খাইয়েই হচ্ছে বিয়ে।

 ২০০৬ সালের জুন মাস। বর্ধমান ষ্টেশন থেকে ২০ জন শিশুকে নিয়ে শুরু হয়েছিল ব্লাইন্ড একাডেমীর আবাসিক। তাদের মধ্যে ছিলেন ৩ জন মেয়ে। তাদেরই একজন পূজা দাস। এখন সে কুড়ি বছরের যুবতী। ইতিমধ্যেই সে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে। শিখেছে আঁকা। জেলা ও রাজ্যস্তরে আঁকায় মিলেছে সাফল্য। সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বিভাগের ম্যাগাজিনেও তাঁর ছবি প্রকাশ পেয়েছে। ষ্টেশন থেকে তুলে এনে পূজার জীবন গড়ে দিয়েছে ব্লাইন্ড একাডেমী। এবার পালা বিয়ের। ব্লাইন্ড একাডেমীর সম্পাদক রাইচাঁদ সুরানা জানিয়েছেন, ওরা আমার মেয়ে। আমার দায় কন্যাদান। তাই আমরাই পাত্র খুঁজে ওর বিয়ের ব্যবস্থা করছি। ‘ 

বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয় প্রায় একমাস আগে থেকেই। ব্লাইন্ড একাডেমীর তরফে যোগাযোগ করা হয় শহরের ছোটনীলপুরের দেবশিষ দে-র পরিবারের সঙ্গে। ব্লাইন্ড একাডেমীর প্রতিনিধিরা পাত্রের  বাড়ি গিয়ে  বিয়ের প্রস্তাব দেয়। পাত্রপক্ষ রাজী হওয়ায় শুরু হয় প্রস্তুতি। সোমবার তাদের রেজিস্ট্রি হয়। মঙ্গলবার বর্ধমানের সর্বমঙ্গলামন্দিরে হয় বিয়ে। শ-খানেক অতিথি, জনা পঞ্চাশ বরযাত্রী নিয়ে হয় বিবাহ। ব্লাইন্ড একাডেমীর তরফে দেওয়ায় হয় গলার হার, কানের দুল, বালা, আংটি। এছাড়াও পোশাক ও আসবাবও দেওয়া হয়। এতেই দায় শেষ নয়। আগামীদিনেও মেয়ের পাশে থাকবেন জানালেন সুরানা।

 পাত্র দেবাশিষ আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটের শিক্ষক। তিনি জানিয়েছেন, এই বিয়েতে তাঁরা খুশি। ব্লাইন্ড একাডেমীর উদ্যোগকেও সাধুবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। পাত্রী পূজা জানিয়েছে, ব্লাইন্ড একাডেমীর প্রত্যেকেই তাঁর অভিভাবক। তাঁরাই তাঁকে মানুষ করে আজ বিয়ে দিচ্ছেন। তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এদিন জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ব্লাইন্ড একাডেমীতে গিয়ে  পুজাকে আশির্বাদ করে উপহার দিয়ে এসেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সর্বমঙ্গলা মন্দিরে বিয়ে ঘিরেও ছিল সাজোসাজো রব। বুধবার নতুন জীবনে প্রবেশ করল পূজা আবাসিকদের উদ্যোগে শুভেচ্ছা সঙ্গে নিয়ে।