বর্ধমানে খড়ি নদীর দুকূল ছাপিয়ে দুটি ব্লক প্লাবিত, জলের তলায় যোগাযোগকারী সেতু

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: ”কি হবে খবর করে? প্রতিবছরই বর্ষার সময় রিপোর্টাররা আসে। ছবি তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু হালের হাল কিছুই ফেরে না। কি হবে রিপোর্টারদের বলে? ” রীতিমত ক্ষুব্ধভাবে এক নিঃশ্বাসে এভাবেই তিনি কার্যত প্রশ্নের মুখে ফেলে দিলেন তথাকথিত গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে পরিচিত সাংবাদিককুলকে। তিনি মন্তেশ্বরের শুশুনিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজগাছি গ্রামের বাসিন্দা। কিছুতেই তিনি তাঁর নাম বলতে চাননি। 

রবিবার খড়ি নদীর জলের তলায় চলে গেছে শুশুনিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে বর্ধমান ১নং ব্লকের যোগাযোগাকারী একমাত্র কাঠের সেতুটি। হাঁটুর ওপর লুঙ্গি তুলে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে ব্রীজ পার হচ্ছিলেন তিনি পা টিপে টিপে। ব্রীজ পেরিয়ে উঠে আসতেই তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কতবছর ধরে এই অব্যবস্থা চলছে? ওই গ্রামবাসী জানিয়েছেন, সেই বাম আমল থেকে কেবলই প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছেন নেতারা। বাদ যায়নি প্রশাসনিক কর্তারাও। সেই বাম আমল থেকেই প্রশাসনিক কর্তা থেকে রাজনৈতিক নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন – এবছর ঠিক হয়ে যাবে পাকা সেতু। না, আজও হয়নি।
তিনি বলেছেন, প্রথম দিকে ছিল বাঁশের সেতু। পরে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর বণ্ডুল ১নং গ্রাম পঞ্চায়েত তথা বর্ধমান ১নং পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে কাঠের সেতু করা হয়েছিল কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে। কিন্তু ২০১৫ সালের বন্যায় সেতুর অনেকগুলি কাঠ ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায়। তারপর গ্রামবাসীদের উদ্যোগে এবং কিছুটা পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় মেরামত করা হয় সেতুটিকে। রবিবার সেই একমাত্র যোগাযোগকারী সেতু ফের প্রতিবছরের মতই এবারও খড়ি নদীর জলের তলায়।

ক্ষুব্ধ ওই গ্রামবাসীরা পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন – এটাই কি মা মাটি মানুষের সরকারের পরিচয়। প্রতিবছর তাঁরা ভোট দেবেন। আর ন্যূনতম পরিষেবা পাবেন না। পাবেন খালি প্রতিশ্রুতি? তিনি উপদেশ দিয়েছেন, সেতুর ছবি নয়, আপনারা সেই সমস্ত ধাপ্পাবাজ নেতাদের ছবি ছাপুন – যারা গ্রামবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বছরের পর বছর। উল্লেখ্য, এই সেতু দিয়ে একদিকে যেমন মন্তেশ্বরের শুশুনিয়া পঞ্চায়েতের মানুষ বর্ধমান কৃষ্ণনগর রাস্তায় এসে ওঠেন। তেমনি বর্ধমান ১নং ব্লকের সঙ্গে যোগাযোগকারী এই সেতু দিয়েই এপারের লোকজন ওপারে যায়। এই সেতু না থাকলে ঘুরপথে প্রায় ১৫ কিমি যেতে হয়। কার্যত এই সেতু কে করবে বর্ধমান ১নং ব্লক নাকি মন্তেশ্বর ব্লক এই দড়ি টানাটানির জেরে ভাগের মা গঙ্গা পায়না অবস্থার শিকার হয়ে চলেছেন গ্রামবাসীরা।
অথচ ২০১৭ সালে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ মমতাজ সংঘমিতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁর সাংসদ কোটায় তিনি এই ব্রীজ নির্মাণ করে দেবেন। কিন্তু হয়নি। গ্রামবাসীরা তীর্ষক ভঙ্গিতে বলেন, তিনি ভুলেই গেছেন কি বলেছেন। ২০১৯ সালে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন বিজেপির সাংসদ সুরিন্দরজিত সিংহ অহলুবালিয়া। কার্যত তাঁকে বর্ধমানের মানুষ দেখতেই পাননা। ভোট পাখি তিনি। সুবিধা বুঝে আসেন আবার কোথায় মিলিয়ে যান। এমনকি বাম আমলে মন্তেশ্বরের সিপিএম বিধায়ক চৌধুরী হৃদয়েতুল্লাহ পর্যন্ত বিধায়ক কোটায় এই ব্রীজ তৈরীর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিতে কসুর করেননি বর্ধমান জেলা পরিষদের তত্কালীন সভাধিপতি এবং বর্তমানে সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডুও। কিন্তু এক ইঞ্চি কাজও এগোয়নি।
জানা গেছে, দুটি ব্লক থেকেই প্রোপোজাল জেলা পরিষদে জমা দেওয়া আছে দীর্ঘদিন আগেই। বণ্ডুল এলাকার বাসিন্দা সমাজসেবী মিহির হাজরা জানিয়েছেন, এই সেতুটিকে পাকা করার দাবী দীর্ঘদিনের। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেতু এটি। এটির প্রতি সরকারের নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। বাঁউই গ্রামের বাসিন্দা শোভন রায় জানিয়েছেন, মন্তেশ্বর ব্লকের ১০-১২টি গ্রাম এই ব্রিজটির উপর নির্ভরশীল। কোনো দেহ সৎকারের দরকার পড়লেও এই সেতু দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। এছাড়া স্কুল কলেজ পড়ুয়া, হাসপাতাল পরিষেবা, বাজার দোকান সবকিছুই নির্ভর এই সেতুর ওপর। কিন্তু তিনি ৩০ বছর ধরে শুনে আসছেন এই সেতু পাকা হচ্ছে। কবে হবে কেউ জানে না।
এব্যাপারে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা ওই সেতুর জন্য ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। কিন্তু জেলা পরিষদের পরিকাঠামো নেই ২৫ ফুটের বেশি ব্রীজ তৈরী করার। সেজন্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। এজন্য আরআইডিএফের মাধ্যমে ব্রীজটি করার চেষ্টা হচ্ছে। তা নাহলে পূর্ত দপ্তর কিংবা সেচ দপ্তরকে দিয়ে ওই ব্রীজটি করা হবে।

Recent Posts