ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী সন্দীপ নন্দীর সমর্থনে মঙ্গলবার বিকেলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রচার মিছিল থেকে তৃণমূলের পার্টি অফিসে হামলার অভিযোগ ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়াল শহরের রসিকপুর এলাকায়। বিজেপি সমর্থকদের সংগঠিত হামলায় স্থানীয় তৃণমূলের একটি পার্টি অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয় বলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। হামলাকারীরা বেশ কয়েকটি দোকানেও ভাঙচুর চালায়। ভেঙে দেওয়া হয় একাধিক মোটর সাইকেল। হামলার ঘটনায় এক মহিলা সহ তিনজন আহত হয়েছে বলে এদিন অভিযোগ করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রব।
এদিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ পাওয়ার হাউস পাড়া থেকে সন্দীপ নন্দীর সমর্থনে কয়েক শো কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বর্ণাঢ্য মিছিল বের হয়। মিছিলটির পরিক্রমা পথ ছিল জেলখানা মোড় হয়ে পার্কাস রোড পর্যন্ত। পাওয়ার হাউস পাড়া থেকে মিছিলটি শুরু হওয়ার পর রসিকপুর মোড়ের কাছে আসতেই উত্তেজনা তৈরি হয়। অভিযোগ, রাস্তার ধারে তৃণমূলের যে সমস্ত পতাকা লাগানো ছিল সেগুলি বিজেপির মিছিলে আসা লোকেরা ছিঁড়ে দিচ্ছিল। সেইসময় তৃণমূলের কয়েকজন এব্যাপারে প্রতিবাদ জানায়। তারা বলেন, রাস্তায় বিজেপির পতাকাও লাগানো আছে, তারা সেগুলো তো ছেঁড়েনি। তাহলে কেন তাদের ফ্ল্যাগ ছেঁড়া হচ্ছে। আর এরপরই দুপক্ষ বচসায় জড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ বিজেপির মিছিল থেকে এরপরই হামলা চালানো হয় স্থানীয় তৃণমূল পার্টি অফিসে। অভিযোগ, পুলিশের সামনেই বিজেপির মিছিল থেকে হামলা চালানো হলেও প্রাথমিক ভাবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। যদিও ততক্ষণে দিলীপ ঘোষের গাড়ি জেলখানা মোড়ে দিকে চলে গিয়েছিল।
কিন্তু মিছিলের পিছনে যে সমস্ত কর্মী সমর্থকরা ছিলো তারা পাল্টা সেই সময় দলবেঁধে এসে হামলা চালায় এলাকায়। এই সময় দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক ইট বৃষ্টি চলে। ইটের আঘাতে আহত হন বিজেপি নেতা শ্যামল রায়। তার মাথায় চোট লাগে। এদিকে বিজেপি তৃণমূল সংঘর্ষের ঘটনায় তীব্র আতংক ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকাজুড়ে। পথচলতি মানুষ প্রাণ ভয়ে যে যেদিকে পারে পালানোর চেষ্টা করেছে। বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত দোকানপাট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামানো হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। এরপর এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। যদিও এলাকায় তীব্র উত্তেজনা থাকায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ এবং বাহিনীকে।
বিনা প্ররোচনায় হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে এদিন সন্ধ্যায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে বর্ধমান থানা ঘেরাও করা হয়। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বিজেপি নেতা খোকন সেন, শ্যামল রায় সহ ১৪জনের নামে বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন হামলায় আহত হায়দার আলী। এদিন তৃণমূল নেতা আব্দুল রব বর্ধমান থানায় দাঁড়িয়ে সরাসরি অভিযোগ করেছেন, এদিন দিলীপ ঘোষ গাড়ির উপর থেকে গোটা এলাকায় তৃণমূলের পতাকা ছাড়া তার দলের কোনো প্রচার দেখতে না পেয়েই হামলার নির্দেশ দেয়।
তিনি অভিযোগ করেছেন, ভোটের আগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রসিকপুর এলাকাকে উত্তপ্ত করতে বিজেপির হার্মাদরা এদিন হামলা চালিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ওরা মনে করেছেন অশান্তি সৃষ্টি করে এলাকায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে সেন্ট্রাল ফোর্স দিয়ে ভোট করবে। কিন্তু মানুষ সত্যিটা জানে। যারা ক্ষমতায় আসার আগেই সাধারণ মানুষকে আতঙ্কের পরিবেশ দেখাচ্ছে, তারা ক্ষমতায় আসলে কি করতে পারে সেটা সবাই বুঝতে পারছে। তৃণমূল হিংসার রাজনীতির পক্ষে নেই। তাই এদিন বিজেপির কয়েকটা হার্মাদ হামলা চালালেও তৃণমূলের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিরোধ করা হয়নি। ১৭তারিখ এলাকার মানুষ এই হামলার জবাব ইভিএম এর বোতাম টিপে ওদের দিয়ে দেবে। মানুষ শান্তি চায়, অশান্তি নয়।
অন্যদিকে এদিনই দিলীপ ঘোষ সংবাদ মাধ্যম কে জানিয়েছেন, এর আগেও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বাঁধা দিয়ে এরা ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম চলে গেছে। টিএমসির যাওয়ার দিন ঘনিয়ে এসেছে। তাই তাঁরা চান নির্বাচন নির্বিঘ্নে হোক। সেন্ট্রাল ফোর্স আছে। নির্বিঘ্নে ভোট দিন। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভাবেই সমগ্র ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। গোটা রাজ্যে শান্তিতে ভোট হচ্ছে। কয়েকজন দুষ্কৃতকারী এখানকার ভোটকে বানচাল করতে পারবে না।