বর্ধমানে নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প পেপার কালোবাজারির ঘটনায় জড়িত বড়সড় চক্র, তদন্তে পুলিশ

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বর্ধমান জেলা জুড়ে নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের কালোবাজারিতে বড়সড় চক্র জড়িত বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এল। বুধবার বর্ধমান সদর উত্তর মহকুমা শাসক দীপ্তার্ক বসুর নেতৃত্বে বর্ধমান কোর্ট চত্বর এলাকায় হানা দিয়ে অবৈধভাবে স্ট্যাম্প পেপার বিক্রির অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতদের নাম সুশীল চক্রবর্তী ও অনুপ মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। পুলিশি তদন্তের স্বার্থে ধৃতদের ৩ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন বিচারক।

জানা গেছে, সুশীল চক্রবর্তীর বাড়ি বাঁকুড়ার ইন্দাস থানার মহেশপুরে এবং অনুপ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি ভাতার থানার মাহাচান্দায়। বুধবার বর্ধমান আদালত চত্বর থেকে তাদের ধরা হয়। ধৃতদের দুটি গুমটি দোকানই সিল করে দিয়েছে পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে ৩০০ স্ট্যাম্প পেপারও উদ্ধার করেছে পুলিশ। জানা গেছে, নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প পেপারের এই কালাবাজারি চক্রের সঙ্গে কলকাতা, বীরভূম, বাঁকুড়া জেলার কয়েকজন স্ট্যাম্প ভেন্ডারদেরও জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। জানা গেছে, ধৃতদের কাছ থেকে যে সমস্ত স্ট্যাম্প পেপারগুলি উদ্ধার হয়েছে সেগুলি কলকাতার আলিপুর, পার্কস্ট্রীট, বীরভূমের রামপুরহাট ও কাটোয়ার স্ট্যাম্প ভেন্ডারের নামে ইস্যু করা। ওইসব জায়গা থেকে কিভাবে বর্ধমানে স্ট্যাম্প এল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

ধৃতদের আইনজীবী পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে বলেন, আলিপুর, পার্কস্ট্রীট সহ বিভিন্ন জায়গায় স্ট্যাম্প আনা হয়েছে। এর পিছনে অনেক বড় চক্র রয়েছে। দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু, মূল মাথাদের ধরতে পুলিশ আদৌ কতটা সক্রিয় হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।কারণ তাতে বড় ধরণের দুর্নীতি সামনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সামান্য কিছু টাকার জন্য ধৃতরা এই কাজ করেছে। পুলিশ সূত্রে গেছে, এই ঘটনার বিষয়ে ট্রেজারি অফিসার অংশুমান চক্রবর্তী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে প্রতারণার ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
এদিকে, স্ট্যাম্প পেপারের কালোবাজারি রুখতে প্রশাসনিক এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও আইনজীবীদের অভিযোগ, আগে সপ্তাহে ৩ দিন ট্রেজারি থেকে স্ট্যাম্প দেওয়া হত। এখন সপ্তাহে একদিন স্ট্যাম্প দেওয়া হয়। ট্রেজারি থেকে পর্যাপ্ত স্ট্যাম্প মেলে না। অথচ, প্রতিদিন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রায় হাজার খানেক এফিডেভিট হচ্ছে। আদালতের নানা কাজেও হলফনামা জমা দিতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক স্ট্যাম্প না মেলার কারণেই অন্য জেলা থেকে স্ট্যাম্প আনা হচ্ছে। তাছাড়া স্ট্যাম্প ভেন্ডারদের আদালত চত্বরে না বসা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীরা।

এব্যাপারে প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, স্ট্যম্প পেপারের অপ্রতুলতার বিষয়টি ভেণ্ডারদের পক্ষ থেকেই জানানো উচিত। কিন্তু এখনও সেরকম কোনো অভিযোগ তাঁরা পান নি। যদিও তিনি জানিয়েছেন, এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, এই স্ট্যাম্প পেপার কালোবাজারির মূল সোর্স পর্যন্ত পৌঁছাতে চাইছেন তাঁরা। তাই তদন্ত প্রক্রিয়াকে জোরদার করা হয়েছে।

Recent Posts