ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বুধবার পুরভোটের ফলাফল ঘোষণার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই বর্ধমানের ২৭নম্বর ওয়ার্ডের বাবুরবাগ এলাকায় তৃণমূলের এক নাবালিকা কর্মী গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় শহর জুড়ে আলোড়ন পড়েছে। মৃতার পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় কাউন্সিলার সেখ বসিরুদ্দিন আহমেদ ওরফে বাদশা সহ এলাকার ১৪জন সক্রিয় তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বর্ধমান থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই এলাকার বাসিন্দা সেখ গোলাম নবি ওরফে গোলাপ, তসমিনা বিবি, সানোহার বিবি ওরফে সোনা বিবি ও মনোয়ারা বিবি ওরফে মিনু বিবি কে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠিয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, এদিন অভিযুক্ত সেখ গোলাম নবি কে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজত ও বাকিদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
বৃহস্পতিবার ময়না তদন্তের পর মৃতা নাবালিকার দেহ এলাকায় পৌঁছলে গোটা পাড়ার মানুষ স্থানীয় কাউন্সিলার সেখ বসিরুদ্দিন আহমেদ ওরফে বাদশার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিক্ষোভের জেরে রীতিমত অবরুদ্ধ হয়ে যায় বাবুরবাগ লিচুতলা এলাকার তিন রাস্তার মোড়। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে স্থানীয় মহিলাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এলাকাবাসীরা এদিন অভিযোগ করেছেন, তারা বসিরুদ্দিন আহমেদ কে কাউন্সিলার হিসাবে মানেন না। এর আগেও যখন সে কাউন্সিলার ছিল তখন এলাকার কোনো কাজ করেনি। বরং এলাকার মানুষের কাছে বিভিন্ন কাজের জন্য টাকা নিয়েছে। দুর্ব্যবহার করেছে। তারপরেও বিধায়ক ঘনিষ্ট হওয়ায় এবার আবার টিকিট দেওয়া হয়েছে।
এদিন বিক্ষোভকারীদের অনেকেই দাবি করেছেন, অবিলম্বে কাউন্সিলার পদ বাতিল করে দেওয়া হোক বাদশার। যদিও সেখ বসিরুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগ নেই। এটা মৃতার পরিবারের নিজেদের গন্ডগোল। এদিকে অভিযোগকারী মৃতা নাবালিকার দিদি কুহেলী বিবি অভিযোগ করেছেন, তারা স্থানীয় নেতা মুক্তার মিঞার সঙ্গে তৃণমূল দল করতেন। এই নিয়ে বাদশা এর আগে একাধিকবার তাদের হুমকি দিয়েছিল। এমনকি ভোটে জিতলে তাদের তিন বোনকে দেখে নেওয়ারও শাসানি দিয়ে রেখেছিল। প্রার্থী হওয়ার পর তাদের বাড়ির বাইরের দেওয়ালে গাছের ডালের নিচে তিনটি যুবতী মেয়ের ছবি এঁকে তার নিচে ‘হলো না …. হলো না…’ লিখে রেখে আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।
এরপর বুধবার পুরভোটের রেজাল্ট বেরোনোর পরই সেখ বসিরুদ্দিন ওরফে বাদশার নেতৃত্বে স্থানীয় উন্নত আলী, সেখ রাজা, সেখ তুফান, সেখ গোলাম, সেখ তাহিদ, সেখ রোহিত, কোহিনুর বিবি, জহুরা বিবি, নুনি বিবি, মিনু বিবি, রূপা বিবি, সোনা বিবি, তসমিনা বিবি সহ আরো অনেকে বিকেল তিনটে নাগাদ তাদের বাবুরবাগের বাড়িতে চড়াও হয়। বাইরে থেকে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে তার বোনকে বেধড়ক মারধর করে। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং তার ও তার নাবালিকা বোনের শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। আর এই ঘটনার পরই অত্যাচার অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজের ঘরে সিলিংয়ে ওড়নার ফাঁসে ঝুলে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় তার বোন বলেই অভিযোগ করেছেন কুহেলী বিবি।