ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: শনিবার তথা ৭ মার্চ থেকে টানা ৭৫ দিন ধরে গোটা রাজ্য জুড়ে শুরু হলো ‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচি। গত ২ মার্চ কলকাতার নেতাজী ইণ্ডোর স্টেডিয়ামে প্রশান্ত কিশোরের টিমের নির্দেশে এই কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছিল। আর
শনিবার সেই কর্মসূচির সূচনা লগ্নেই দলের অভ্যন্তরীণ কোঁদল এবং বিরোধ রাস্তায় এসে পড়ল।
এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলায় সমস্ত বিধানসভা এলাকাতেই বিধায়কদের নেতৃত্বে দলের বাছাই করা নেতৃত্বকে নিয়ে (কাদের কাদের নিয়ে বৈঠক করতে হবে তা দলই ঠিক করে দেয়) অনুষ্ঠিত হয় বাংলার গর্ব মমতা কর্মসূচীর। কিন্তু জেলার বেশ কয়েকটি বিধানসভা এলাকাতেই দলের নেতাদের ক্ষোভ আছড়ে পড়েছে। এদিন বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের ডাকা সভায় হাজির ছিলেন খোদ বর্ধমান পুরসভার একাধিক কাউন্সিলার থেকে দলের জেলা কমিটির একাধিক নেতা।
এদিন রবিবাবু দলের নেতৃবৃন্দের সামনেই এই কর্মসূচীর সূচনা এবং তার ব্যাখ্যা করেন বিশদে। রবিবাবু তাঁর বক্তব্যে আবেদনও রাখেন যে তিনি আশা করেন, সকলেই এই কর্মসূচী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। তিনি বলেন, ‘দলের ওপরতলা থেকে এই নির্দেশ এসেছে এবং তিনি তা পালন করছেন।’ রবিবাবুর এই সভায় হাজির ছিলেন বর্ধমান পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলার তথা বর্ধমান শহরের দাপুটে নেতা খোকন দাস সহ পুরসভার বেশ কয়েকজন কাউন্সিলার।
অন্যদিকে, একদিকে যখন বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক রবিরঞ্জনবাবু বাংলার গর্ব মমতা এই কর্মসূচী পালন করেছেন তাঁর নিজের কার্যালয়ে, সেই সময় মাত্র ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চকে ভরিয়ে দিয়ে সেখানে পাল্টা একই কর্মসূচী পালন করলেন বর্ধমান শহর তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভাপতি অরূপ দাস। তাঁর ডাকা এই সভাতেও হাজির ছিলেন পুরসভার বেশ কয়েকজন প্রাক্তন কাউন্সিলার। সংস্কৃতি লোকমঞ্চের এই সভায় হাজির ছিলেন বেশ কয়েকজন পুরনো তৃণমূল নেতৃত্বও।
তার মধ্যে সুশান্ত ঘোষ (ডিঙু) এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘অনেকেই আছেন তাঁরা সকলকে নিয়ে চলতে বাধা দিচ্ছেন। তাঁরা বিজেপির দালাল হিসাবে কাজ করছে। কিন্তু তাদের কথায় ভয় পেলে চলবে না। সকলেই এগিয়ে আসতে হবে।’ অরূপ দাস জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত্রি ৮টা নাগাদ তিনি বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে একটি কর্মসূচির বিষয়ে একজনের ফোন পান। কিন্তু তার আগেই তিনি দলের নির্দেশ মেনে এই কর্মসূচী নিয়ে ফেলেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তা বাতিল করা সম্ভব ছিল না।
অরূপবাবু জানিয়েছেন, শুধু তিনিই নন, অনেক কাউন্সিলারকেই রবিবাবুর সভায় ডাকা হয়নি। আমন্ত্রণ থেকে বাদ গেছেন অনেক জেলা কমিটির সদস্যও। কেন তাঁদের ডাকা হয়নি তা রবিবাবুই ভাল বলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন অরূপ দাস। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, একটা সমন্বয়ের অভাব রয়েছে দলে।
এদিকে, শুধু বর্ধমানই নয়, এদিন ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল রীতিমত বিশাল পুলিশী ঘেরাটোপে ভাতারের বামুনিয়া এলাকায় এই কর্মসূচী পালন করেন। কিন্তু দলেরই একাধিক নেতার অভিযোগ, সেখানেও দলের পুরনো বহু নেতাকেই ডাকা হয়নি। ফলে সেখানেও দলের মধ্যে ক্ষোভ আছড়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই সুভাষ মণ্ডলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান দলের কর্মীরা। বিক্ষোভের জেরে শুক্রবার ভাতার বিধানসভার কোর কমিটির বৈঠকও ডাকা হয়। কিন্তু বিধায়ক সেই বৈঠকে হাজির হননি। উপরন্তু শনিবার বাংলার গর্ব মমতা কর্মসূচীতেও ডাকা হয়নি পুরনো নেতাদের।
এরই পাশাপাশি শনিবার দুপুর তথা বারবেলা থেকে শুরু হওয়া প্রতিটি বিধানসভাতেই এই একই দলীয় কোঁদলের ছবি উঠে এসেছে। বর্ধমান উত্তর বিধানসভার বিধায়ক নিশীথ মালিকের এই কর্মসূচীতে দেখা মেলেনি বর্ধমান ২-:এর তথাকথিত ব্লক সভাপতি শ্যামল দত্তকে। যদিও বর্ধমান ২ ব্লকের ব্লক সভাপতি কে তা নিয়ে এখন লড়াই তুঙ্গে উঠেছে। একই পরিস্থিতি কাটোয়া, কালনা সহ প্রায় সব বিধানসভাতেই।