ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান:বৃহস্পতিবার বর্ধমানের রাসবিহারী বসু নামাঙ্কিত বিজেপির সদর কার্যালয়ে বিজেপির গোষ্ঠী সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ ৭ বিজেপি নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করল। শুক্রবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। ধৃতদের নাম দেবজ্যাতি সিংহরায়, রবীন্দ্র গর্গ, লক্ষ্মীকান্ত দাস, স্মৃতিকান্ত মণ্ডল, নন্দ সিংহ, গৌড় মল্লিক এবং সৌমেন ঘোষ। এদিন আদালতে তোলা হলে বিচারক প্রত্যেকেরই জামিন মঞ্জুর করেন। এদিন বর্ধমান আদালতে আসা বিজেপি নেতারা ফের তীব্র ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীর বিরুদ্ধে।
এদিন দেবজ্যোতি সিংহ রায় জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাজ্য নেতৃত্বকে এবং জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েই তাঁরা পার্টি অফিসে আসেন আলোচনা করতে। কিন্তু তাঁদের ৪ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। মারধর করা হয়। তাঁদের অফিসে আটকে রেখে মারধর করা হল – আবার তাঁদেরই নামে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হল তাঁরা অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে বর্ধমানের বিজেপি তৃণমূল-টু টিমে পরিণত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, দলের পুরনো কর্মীরা কোনো দায়িত্ব পাচ্ছেন না। তৃণমূল থেকে আসা লোকেদের নিয়ে পার্টি চালানো হচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে বিজেপি মোটেই জিতবে না। তাই তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বের কথামতই আসেন আলোচনা করতে।
কিন্তু একেবারে পরিকল্পনা করেই তাঁদের ব্যাপক মারধর করা হয়। এদিকে বিজেপির দলীয় অফিসে এই হামলার ঘটনার পরই বর্ধমানে ছুটে আসেন বিজেপির রাজ্য নেতা রাজু বন্দোপাধ্যায়, রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ। এদিন রাজু বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার মদতেই বহিরাগতরা এই হামলা চালিয়েছে। এব্যাপারে তাঁরা জেলা প্রশাসনের কাছে তদন্ত দাবী করেছেন। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুরে যে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বিজেপির সদর কার্যালয় সেই সময় একদিকে যেমন বাইরে থেকে বিজেপির কর্মীরা কাঁধে বিজেপির পতাকা নিয়ে হামলা চালায় তেমনি বিজেপির অফিসের ছাদ থেকেও ইঁট, পাটকেল সহ বাঁশের টুকরো ছোঁড়া হয়। তারপরেও এদিন রাজু বন্দোপাধ্যায় তৃণমূলের তত্ত্ব হাজির করায় তীব্র ক্ষুব্ধ খোদ বিজেপির কর্মীরাই।
তাঁরা জানিয়েছেন, কাকে আড়াল করতে চাইছেন রাজু ব্যানার্জ্জীরা। নিজেদের দোষ ঢাকতে বিজেপির নেতা কর্মীদের ওপর মিথ্যা মামলা দায়ের করা কোনোভাবেই বিজেপির কর্মীরা মেনে নেবেন না। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্যাপক হামলাবাজির পর রাত্রে বিশাল পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতিতে বিজেপির পার্টি অফিসের ভিতর আটকে রাখা কর্মীদের একে একে যখন বার করা হয় সেই বিজেপির কর্মীরাই পুলিশের সামনে তাদের লাঠি পেটা করে বার করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এব্যাপারেও অপ্রস্তুত রাজু বন্দোপাধ্যায় জানান, এরকম কোনো বিষয় তিনি জানেন না। আদালত সুত্রে জানা গেছে, বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী এই ঘটনায় অজানা ব্যক্তিদের নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেন বর্ধমান থানায়। যদিও যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এফআইআর-এ তাঁদের কারও নাম না থাকা সত্ত্বেও গ্রেপ্তার করার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নাম থাকা বিজেপি কর্মী লক্ষ্মীকান্ত দাস জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন। যদিও এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। যা নিয়েও এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিজেপির নেতা কর্মীরা। এদিকে, বৃহস্পতিবার বিজেপির সদর কার্যালয়ে এই হামলার ঘটনায় তৃণমূলকে জড়ানোয় তীব্র আক্রমণ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সমন্বয় কমিটির সদস্য দেবু টুডু। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপি বাংলার সংস্কৃতি জানে না। তাই এইসব করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস কখনই বর্ধমানের শান্তিকে বিঘ্নিত করতে দেবে না। প্রয়োজনে বর্ধমানের মানুষকে আশ্বস্ত করতে তাঁরাও পথে নামবেন।