বর্ধমানে মদের হোম ডেলিভারী নিয়ে এবার বিভ্রান্তি তুঙ্গে


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: লকডাউন ২১দিন পেরিয়ে ২২দিনে পা দিলো। কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী এখনো অন্তত ১৮দিনের অপেক্ষা। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেন এরই মধ্যে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। থাকতে চাইছেন না ঘরবন্দি। তুচ্ছ কারণেও বেরিয়ে পড়ছেন রাস্তায়। এরই মধ্যে সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করছে মদের দোকান বন্ধ থাকায়। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মদ খেতে না পেয়ে মদের পরিবর্তে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর নেশার দ্রব্য খেয়ে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি লকডাউনের মধ্যে অবৈধ ভাবে মদ বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে একাধিক মদ ব্যবসায়ী। তবু মদের জন্য হাহাকার বিন্দুমাত্র কমছে না। বরং কবে থেকে বাজারে মদ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় উঠছে।

ইতিমধ্যে মদের হোম ডেলিভারী শুরু হয়েছে বলে মদের দোকানের ফোন নম্বর দেওয়া টেক্সট ম্যাসেজ ঘুরতে শুরু করেছে মোবাইল ফোন মারফৎ। যেখানে উল্লেখ করা হয় দুটি নম্বর। বলা হয় ফোন করলেই মদের হোম ডেলিভারী মিলবে। ফলে মদ জোগাড় করতে দেদার ফোন করতে শুরু করে দেন অনেকেই। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, এর মধ্যে একটি নাম্বার বর্ধমানের ২নং জাতীয় সড়কের ধারে অভিজাত হোটেল চার্ণক স্টপের। অন্যটি বর্ধমান শহরের মিরছোবা এলাকার একটি মদের দোকানের।
খোদ চার্ণক স্টপের ম্যানেজার সৌরভ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বর্তমানে চার্ণক স্টপ হোটেল কে প্রশাসন করোনা সংক্রান্ত প্রয়োজনে নিয়ে রেখেছে। সেখানে ডাক্তার থেকে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে গোটা বিষয়টি এখন প্রশাসনের অধীন। তিনি জানিয়েছেন, চার্ণকের নামে যে ফোন নং দেওয়া হয়েছে তা ভূয়ো নাম্বার। এই ধরণের কোনো নাম্বার চার্ণকের নেই। তবে, বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। সম্ভবত, মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই চার্ণকসের নামে ওই ভূয়ো ফোন নং দেওয়া হয়েছে।
এরই পাশাপাশি দ্বিতীয় যে ফোন নং টি দেওয়া হয়েছে সেই মদের দোকান হোম ডেলিভারীর জন্য সরকারীভাবে বিবেচিতই হয়নি। যদিও এখনও সরকারীভাবে মদের হোম ডেলিভারী দেওয়ার কোনো নির্দেশই আসেনি বলে সাফ জানিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী। সৌরভবাবু চার্ণক স্টপকে কোয়ারেণ্টাইন সেণ্টার হিসাবে নেওয়ার কথা বললেও খোদ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার কুণালকান্তি সাহা জানিয়েছেন, চার্ণককে কোয়ারেণ্টাইন সেণ্টার হিসাবে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানেন না। শোনেননিও। তবে জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন, ডাক্তার এবং চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের থাকবার জায়গা হিসাবে এই হোটেল প্রশাসনিক ভাবে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বুধবার থেকেই নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হল জেলা জুড়ে। ভাতার থানার নিত্যানন্দপুর এফ এল অন শপ এর নামে হোম ডেলিভারী দেবার জন্য জেলা আবগারী দপ্তর থেকে দুটি পাস ইস্যু করা হয়। এমনকি হোম ডেলিভারী করবার জন্য ৫জন ব্যক্তির নামে পূর্ব বর্ধমান জেলা আবগারি দপ্তরের সই স্ট্যাম্প মারা পরিচয় পত্রও ইস্যু করা হয়েছে। বলা হয়েছে দুপুর ২ টো থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই হোম ডেলিভারী করা যাবে। আর তারপরেই শুরু হয় শোরগোল। খোদ আবগারী দপ্তরের সুপারিনটেনডেণ্ট তপন কুমার মাইতি জানিয়েছেন, জেলা জুড়েই তাঁরা মদের হোম ডেলিভারীর জন্য পাস ইস্যু করেছেন। আর এরপরেই বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে।
এই ঘটনায় খোদ জেলাশাসক অবাক হয়ে গেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত সরকারীভাবে কোনো নির্দেশই আসেনি হোম ডেলিভারীর। একটি মৌখিক আলোচনা চলছিল। কিন্তু যতক্ষণ না সরকারী নির্দেশ আসছে ততক্ষণ তা চালু করা যায়না। কিভাবে আবগারী দপ্তর এই পাস ইস্যু করেছে সে বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন। যদিও বিশেষ সূত্রে খবর, রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় ইতিমধ্যেই মদের হোম ডেলিভারী করার অনুমোদন দিয়েছে আবগারি দপ্তর।
অন্যদিকে, বর্ধমান জেলা পুলিশের এক মুখপাত্রও জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে মদের হোম ডেলিভারী নিয়ে কোনো নির্দেশিকা আসেনি। আবগারী দপ্তর পাস ইস্যু করে থাকলে নিশ্চয়ই তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় অনুমতি বা সরকারী নির্দেশ আছে। ফলে করোনা আবহের মাঝে মদের হোম ডেলিভারী নিয়ে এবার পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রশাসনিক স্তরেও বিভ্রান্তি তৈরি হলো।
উল্লেখ্য, বুধবারই খোদ কালনা শহরের ২নং ওয়ার্ডে মারুতি ভ্যান নিয়ে মদ বিক্রি করার অভিযোগে পুলিশ আটক করেছে মারুতি ভ্যানটিকে। এই ঘটনায় কালনা শহর জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মঙ্গলবার বর্ধমান শহরের তিনকোণিয়ার একটি মদের দোকান থেকে নিয়ম লঙঘন করে মদ বিক্রির অভিযোগে পুলিশ মদের দোকানের মালিক সহ ৩ জনকে গ্রেপ্তারও করেছে। সম্প্রতি, বর্ধমান উত্তর বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক দুটি মদের দোকানকে সিল করে দিয়েছেন।
এমনকি জেলা পুলিশ বিভিন্ন থানা এলাকায় ব্যাপকভাবে হানাদারি চালিয়ে অবৈধভাবে চোলাই বিক্রির জন্য গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। আর এরই মধ্যে মদের হোম ডেলিভারী নিয়ে প্রশাসনিক ভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশ কার্যকর না হওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে জেলা জুড়ে।

Recent Posts