ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনার জেরে গত বছর থেকেই যখন প্রায় সব ব্যবসায় মন্দা চলছে, তখন বর্ধমান শহর জুড়ে মাদক দ্রব্যের রমরমা ব্যবসায় ফুলেফেঁপে উঠছে অবৈধ মাদক কারবারীরা। ইদানিং এই অবৈধ নেশার দ্রব্য ছড়িয়ে পড়েছে পাড়ায় পাড়ায়, অলিতে গলিতে। এমনকি এই মাদক কারবারের জাল বিস্তার করেছে স্কুল কলেজ পড়ুয়াদের একাংশের মধ্যেও। মূলত এই মাদক কারবারীদের সফট টার্গেটই হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজের অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা। তা সে বড়লোক বাড়ির সন্তানই হোক কিম্বা মধ্যবিত্ত অথবা অতি নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। এই পিশাচ মাদক কারবারীদের একটাই লক্ষ্য, যুব সমাজকে নেশাসক্ত করে নিজেদের আখের গোছানো।
বিজ্ঞাপন
বেশ কয়েকজন মাদক সেবনকারীর কাছে জানা গেছে, এই মাদক কারবারীরা তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য মাঝে মধ্যেই বিশেষ বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে। তার মধ্যে অন্যতম এই ছোট ছোট ছেলেদের প্রথমে বিনা পয়সায় মাদক দিয়ে তাদেরই দশ জন বন্ধুকে আকৃষ্ট করার অফার দেওয়া হয়। তাদের বলা হয়, যদি দশ জন নতুন কাস্টমার তৈরি করতে পারে তাহলে তার নেশার দ্রব্যের জন্য টাকা লাগবে না অর্থাৎ ফ্রি। আর এই টোপ দিয়েই একজন থেকে দশ জন, দশ জন থেকে একশ জনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক সব নেশার বস্তু। ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেই একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে গাঁজা অথবা ব্রাউন সুগারের পুরিয়া।
উল্লেখ্য, বছরখানেক আগেও মাদক কারবারের পান্ডা দের চ্যালারা শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতো। কাস্টমার বুঝে লুকিয়ে চুরিয়ে সেই সমস্ত নেশার দ্রব্য সাপ্লাই করতো তারা। কিন্তু গত বছরের মার্চ মাসের পর থেকে স্কুল, কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই সুযোগ আর নেই। তাই পুরোনো কাস্টমার দের মাধ্যমেই মাদক সাপ্লাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কারবারীরা। এতে সুবিধাও হয়েছে অনেক বলেই জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক কারবারী।
কিভাবে? তার উত্তরে সেই ব্যক্তি জানিয়েছে, প্রথমত এখন মাদক দ্রব্য বিক্রি করা বা নেশারুদের খাবার জায়গা নির্দিষ্ট নয়। প্রায়ই পরিবর্তন হয়। ফলে রিস্ক কম। ফোনে যোগাযোগ করলেই মাল নিয়ে সেই জায়গায় পৌঁছে যায় এজেন্ট। ফলে পুলিশী ঝঞ্ঝাটও কম। আর এই কারণেই দিনদিন মাদক ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। কার্যত সমাজের কিশোর থেকে যুবকদের একাংশের ভবিষ্যৎ রীতিমত অন্ধকরে ঠেলে দিয়ে এই অবৈধ কারবারীরা লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফা লুটছে। সারা বছর ধরেই এদের এই কারবার কিন্তু চলে প্রায় প্রকাশ্যেই।
আম পাবলিক এইসব হামেশাই দেখতে পায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে শহর জুড়ে মাদক দ্রব্যের কারবার রমরমিয়ে চললেও এমনকি উল্লাস মোড় থেকে নবাবহাট, খোদ বর্ধমান শহরের মধ্যে দামোদরের ধার, এগ্রিকালচার ফার্ম থেকে রায়ান সহ জাতীয় সড়ক লাগোয়া বিভিন্ন নেশারুদের আড্ডা মারার ঠেকগুলো পুলিশ প্রশাসনের নজরে আসে না। এমনি অভিযোগ নেশাগ্রস্থ ছেলে মেয়েদের অভিভাবক থেকে শহরের একাধিক রিহ্যাবিলেটেশন সেন্টারের কর্মীদের। কবে বন্ধ হবে এই মাদক ব্যবসার রমরমা, কারা উদ্যোগ নেবে যুব সমাজ কে চোখের সামনে ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচাতে – এই প্রশ্নই এখন তুলছে শহরবাসী।
ক্রমশ: