বর্ধমানে হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, আইনজীবীদের মামলার সওয়ালে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলায় দ্রুতহারে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ফের বর্ধমান আদালতের আইনজীবীরা মামলায় সওয়ালে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। এর আগেও করোনা সংক্রমণের জেরে দীর্ঘদিন আইনজীবীরা আদালতের কাজকর্ম করেননি। গোটা দেশের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। শুধুমাত্র মঙ্গলবারেই পূর্ব বর্ধমান জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩২১ জন। তার মধ্যে কেবলমাত্র বর্ধমান পৌর এলাকাতেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৪ জন। আর বুধবার ফের জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৯০জন। আর বর্ধমান পৌর এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০৯জন। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন যেভাবে বর্ধমান শহর এবং জেলায় করোনা সংক্রমণের বহর বাড়ছে তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

উল্লেখ্য এদিনই প্রথম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় দফার করোনা সংক্রমণে প্রথম মৃত্যুর খবর স্বীকার করা হয়েছে। ফলে শুরু হওয়া করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউ থেকে দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃতের সংখ্যা এসে দাঁড়ালো ১৮১তে। প্রথম ঢেউতেই ১৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারীভাবে জানানো হয়। জানা গেছে, বর্ধমান আদালতের বেশ কয়েকজন আইনজীবীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে আইনজীবীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবীরা সওয়ালে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। বুধবার থেকে আইনজীবিরা সওয়ালে অংশ নিচ্ছেন না। জেলা আদালতে আগাম জামিনের আবেদনের শুনানিও হচ্ছে না। বন্ধ থাকছে মামলার বিচারও। তবে, সিজেএম আদালতে পেশ হওয়া ধৃতদের জামিনের আবেদনের সওয়ালে অংশ নিচ্ছেন আইনজীবীরা।

মঙ্গলবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশন আলোচনায় বসে। সেখানেই করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। যেভাবে করোনা ছড়াচ্ছে তাতে সওয়ালে অংশ নেওয়া বিপজ্জনক হবে বলে মত প্রকাশ করেন আইনজীবীরা। দীর্ঘ আলোচনার পর ৩ মে পর্যন্ত সওয়ালে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বার অ্যাসোসিয়েশন। ৪ মে বেলা ১২টায় ফের বারের সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে আলোচনায় করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বার সূত্রে জানা গিয়েছে। এদিকে আইনজীবারা সওয়ালে অংশ না নিলেও আদালতের কর্মীদের হাজির থাকতে হবে। এনিয়ে কর্মীদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। করোনা সংক্রমণ বাড়লেও আদালত চত্বর জীবাণুমুক্ত না করায় ক্ষুব্ধ আদালতের কর্মীরা।

আদালতের এক কর্মী বলেন, হাইকোর্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে আদালতের কর্মীদের টিকাকরণের ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু, এনিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা। এ ব্যাপারে আদালত কর্তৃপক্ষ একেবারে উদাসীন। বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সদন তা বলেন, করোনা সংক্রমণ ব্যাপক আকার নিয়েছে। কয়েকজন আইনজীবীর করোনা ধরা পড়েছে। আদালতে ব্যাপক ভিড় হচ্ছে। তাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের স্বার্থেই সওয়ালে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জেলা জজকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 উল্লেখ্য, দ্বিতীয় দফার করোনা সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অফলাইন ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের হষ্টেল ছেড়ে যাবার নির্দেশ দেওয়ার পর এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত হোষ্টেলই কার্যত ফাঁকা। অন্যদিকে, সরকারী অফিসগুলিতেও রোটেশনে হাজিরা ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের জেরে পুরসভার পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে লাগাতার প্রচারাভিযান। এরই পাশাপাশি বর্ধমান মেডিকেল কলেজে কোভিড টীকার জন্য প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ভোর থেকে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। ফলে দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই করোনা সংক্রমণকে ঘিরে আতংক বাড়তে শুরু করেছে গোটা জেলা জুড়েই।