বর্ধমানে ৭২ ঘণ্টা পরেও হল না কন্টেনমেন্ট এলাকা স্যানিটাইজ, মিলছে না প্রশাসনিক সাহায্যও – অভিযোগ এলাকাবাসীর


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বর্ধমান শহরের সুভাষপল্লী এলাকায় এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হবার পর ওই এলাকা সহ পুরসভার গোটা ২নং ওয়ার্ডকে কন্টেনমেণ্ট জোন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। আর এতে রীতিমত সমস্যায় পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। ইতিমধ্যেই পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বার না হবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যার যা প্রয়োজন পুলিশের নির্দিষ্ট ফোন নম্বরে জানালে পুলিশই বাসিন্দাদের বাড়িতে গিয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেবে। এমনকি সুভাষপল্লী এলাকার যে বাসিন্দার করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে সেই বাড়ি সহ এলাকায় এখনও কোনো স্যানিটাইজেশন করা হয়নি বলেও এদিন অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা।
এরই পাশাপাশি  কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে জলসংকটও। এলাকায় ড্রেনের জল পুরসভার টাইম কলের মুখের কাছাকাছি চলে আসায় সেই জল সংগ্রহ করতে পারছেন না বাসিন্দারা। শুধু তাইই নয়, করোনা আক্রান্ত রোগীর হদিশ পাওয়ার ৭২ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও রোগীর বাড়ি সহ এলাকাকে স‌্যানিটাইজ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। রীতিমত এই ঘটনায় আতংক ও উদ্বেগ বাড়ছে গোটা এলাকা জুড়ে।
এই এলাকার বাসিন্দা রিঙ্কু মাঝি জানিয়েছেন, তাঁর রান্নার গ্যাস শেষ হয়ে গেছে। এদিন সকাল থেকে রান্না করতে পারছেন না। তাঁদের বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার রান্নার গ্যাস যে নেই, তা জানিয়েও কোনো ফল পাচ্ছেন না। এদিকে, খাবার তৈরী না হওয়ায় তাঁর ছোট ছেলেটা কান্নাকাটি করছে। কার্যত তিনি অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর এলাকার প্রায় গোটা তিরিশ পরিবার একটি টিউবওয়েলের ওপর নির্ভরশীল। বুধবার কলটি মেরামত করে দেওয়ার পর থেকে আরও নোংরা জল বের হচ্ছে। ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এমনকি পুরসভার টাইম কলটি ড্রেনের জলের মধ্যে থাকায় সেখান থেকেও জল নেওয়া যাচ্ছে না।
তিনিই জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত এলাকায় কোনো স্যানিটাইজেশন করাই হয়নি। এলাকায় যে স্যানিটাইজ করা হয়নি সে বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্যাধিকারিক ডা. প্রণব রায়। তিনি জানিয়েছেন, এখন তাঁরা বাড়ি বাড়ি সার্ভে করছেন। স্যানিটাইজ করার দায়িত্ব পুরসভার। তাঁদের করার কথা। উল্লেখ্য, খণ্ডঘোষের বাদুলিয়া গ্রামে করোনা আক্রান্তের খবর মেলার পর সেখানে দমকল বিভাগকে দিয়ে সংশ্লিষ্ট রোগীর বাড়ি সহ গোটা এলাকাকে স্যানিটাইজ করা হয়। কিন্তু শহরের বুকে এই ঘটনার পর ৭২ ঘণ্টা কেটে গেলেও কেন স্যানিটাইজ করা হল না – তানিয়ে রীতিমত ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
এদিকে, এলাকার বাসিন্দারা যে প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাচ্ছেন না সে বিষয়ে খোদ জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এরকম কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। তবে এরকম হবার কথা নয়। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। অন্যদিকে, বর্ধমান পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার অমিত গুহ জানিয়েছেন, ওই এলাকাকে স্যানিটাইজ করার জন্য এখনও পুরসভাকে কিছু জানানো হয়নি। তবুও সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে শুনে তিনি পুরসভার যে টিম এলাকায় এলাকায় স‌্যানিটাইজ করে যাচ্ছেন তাঁদের নির্দেশ দিচ্ছেন শুক্রবার ওই এলাকায় স্যানিটাইজ করার জন্য।
যদিও অমিতবাবু জানিয়েছেন, দমকলের মাধ্যমে এলাকায় ব‌্যাপকভাবে স্যানিটাইজ করার বিষয়টি দমকলের অধীনেই পড়ে। এরই পাশাপাশি সুভাষপল্লী এলাকায় পানীয় জল নিয়ে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে সে ব্যাপারে অমিতবাবু দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, পুরসভার জল দপ্তরের এ্যাসিস্ট্যাণ্ট ইঞ্জিনিয়ারকে দ্রুত পানীয় জলের অসুবিধা দূর করার জন্য তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন।
যদিও তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত এলাকা থেকে এরকম কোনো লিখিত অভিযোগ তাঁর কাছে আসেনি। বাসিন্দারা লিখিত অভিযোগ জমা দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, এলাকা কন্টেনমেণ্ট জোনে থাকায় বাড়ি থেকে যেখানে বাসিন্দারা বের হতেই পারছেন না, সেখানে কিভাবে পুরসভার কাছে লিখিত আবেদন পৌঁছাবেন বাসিন্দারা তা নিয়েই ঘোর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এলাকার মানুষজন।