সৌরীশ দে,বর্ধমান: শীতের শুরু থেকেই প্রতিবছর পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বড় জলাশয়, বিল, দীঘি পরিযায়ী পাখিদের কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে। প্রধানত নভেম্বরের শেষ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এই সমস্ত জলাশয়ে হাজারো পাখির সমাগম ঘটে । সুদূর রাশিয়া, সাইবেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বার্মা, মায়ানমার, তিব্বত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি দেশ থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার আকাশ পথ অতিক্রম করে পরিযায়ী পাখিরা কয়েক মাসের জন্য তাদের বাসা বাঁধে বর্ধমান জেলার বিভিন্ন বড় জলাশয়ে। মূলত প্রজননের জন্যই এই পাখিরা এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি দেয়। এই সময়ে ওই সমস্ত দেশে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছে চলে আসে। খাদ্যের অভাব সৃষ্টি হয় বিদেশি পাখিদের। আর তাই পর্যাপ্ত খাদ্যের সন্ধানে পরিযায়ীরা অপেক্ষাকৃত উষ্ণ এই সমস্ত এলাকায় সদলবলে চলে আসে প্রতি বছর।
উল্লেখ্য, একসময়ে এই সমস্ত জলাশয়ে পরিযায়ীরা এসে ভিড় করলেও তার আশপাশের মানুষ এবং চোরা শিকারিদের উৎপাতে তারা বেশিদিন একজায়গায় স্থায়ী হতে পারতো না। পরবর্তীকালে বর্ধমান জেলা বনবিভাগের উদ্যোগে পরিযায়ী পাখিদের সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও গণনার কাজ শুরু করা হয়। পাশপাশি খাল-বিল, দীঘি, বড় জলাশয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকার বসবাসকারী মানুষকে সচেতন করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। একইসাথে পরিযায়ী পাখিদের স্থায়ী বিচরণক্ষেত্র করে তুলতে জেলার একাধিক পাখি প্রেমী সংস্থাও নানান উদ্যোগ গ্রহণ করে। আর এরই ফলস্বরূপ গত কয়েকবছর ধরে পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন জলাশয়ে পরিযায়ীদের আগমন কার্যত উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
জেলা বনবিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সম্প্রতি গোটা জেলাজুড়ে পরিযায়ী পাখি গণনার কাজ শেষ হয়েছে। আর সেখানেই দেখা গেছে এবছর সাত থেকে আট টি দেশের প্রায় ১০ থেকে ১৫টি প্রজাতির পাখি এই জেলার বিভিন্ন জলাশয়ে এসেছে। যাদের সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি। প্রসঙ্গত এর আগে ২০১৮ সালে জেলার পাখি গণনার কাজ হয়েছিল। মাঝে করোনার বাড়বাড়ন্তের কারণে দুবছর এই কাজ স্থগিত ছিল। এবছর ৩০জানুয়ারি থেকে ফের জেলার পূর্বস্থলী, কাটোয়া, অগ্রদ্বীপ, আউশগ্রাম, বর্ধমানের প্রায় ১২থেকে ১৫টি বিল, দীঘি, বড় জলাশয় পর্যবেক্ষণের কাজ শুরু করা হয়।