বর্ধমান জেলায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত হল মা ছিন্নমস্তার অষ্টধাতুর মূর্তি
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান:১৯৭০ সাল। লাগাতার পথ দুর্ঘটনায় একের পর প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। বর্ধমান শহরের মুচিপাড়া সংলগ্ন জিটি রোড এলাকায়। আতংকে ভুগতে শুরু করেছেন এলাকার মানুষজন। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে এগিয়ে এসেছিল স্থানীয় সবুজ সংঘ। ১৯৭৫ সাল নাগাদ তাঁদের উদ্যোগেই বর্ধমান শহরের মুচিপাড়া সংলগ্ন এলাকায় জিটিরোডের পাশে তৈরী হয় মা ছিন্নমস্তা কালী মন্দির। ক্লাব সদস্যদের দাবী, এই ঘটনার পর কমে যায় পথ দুর্ঘটনা।
ক্লাবের সহ সম্পাদক সাধন দাস জানিয়েছেন, এই ছিন্নমস্তা মূর্তি বসানোর পাশাপাশি ক্লাব সিদ্ধান্ত নেয় প্রতি ৩ বছর অন্তর বদলানো হবে মূর্তি। কিন্তু আস্তে আস্তে সমস্যা তীব্র আকার নেয় মূর্তি তৈরী নিয়ে। সাধনবাবু জানিয়েছেন, অনেকেই আর এই মূর্তি তৈরী করতে চাইছেন না। বাধ্য হয়ে তাঁরা ৩ বছর আগে দুর্গাপুরের বেনাচিতি থেকে মূর্তি তৈরী করে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তিনিও আর মূর্তি তৈরী করতে চাইছেন না। সাধনবাবু জানিয়েছেন, এই মূর্তি তৈরীতে কোনো খুঁত হলেই তার প্রভাব গিয়ে পড়ছে শিল্পীদের ওপর। তাই ভয়ে অনেকেই আর এই মূর্তি তৈরী করতে চাইছেন না।
প্রথম দিকে বর্ধমানের শিল্পী তারক পাল এই মূর্তি তৈরী করতেন। কিন্তু তাঁর ছেলের মৃত্যুর পর তিনি আর এই মূর্তি তৈরী করতে চাননি। তাই ক্লাবের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা খরচ করে অষ্টধাতুর এই মূর্তি তৈরী করা হল এবছর। আর এই মূর্তি তৈরী করার সাহস দেখালেন বীরভূমের শ্রীনিকেতনের বাসিন্দা মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত শিল্পী পূর্ণ মল্লিক। যা রীতিমত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজীর সৃষ্টি হল। শুক্রবারই শোভাযাত্রা সহকারে এই মূর্তিকে বসানো হয় মন্দিরে। শনিবার হয় প্রাণ প্রতিষ্ঠা।
উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস সহ অন্যান্য অতিথিরা। সাধনবাবু জানিয়েছেন, এলাকার মানুষের সহযোগিতায় এই মূর্তি তৈরী হল। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর কৌশিকী অমাবস্যার দিন মন্দিরের বাৎসরিক পূজোও অনুষ্ঠিত হবে করোনা বিধিকে মেনেই। সাধনবাবু দাবী করেছেন, গোটা জেলায় মা ছিন্নমস্তা কালীর অষ্টধাতুর মূর্তির নজীর নেই। তবে এবার অষ্টধাতুর মূর্তি তৈরি হয়ে যাওয়ায় আর নতুন করে ফি বছর মূর্তি তৈরির ব্যাবস্থা থাকলো না।