ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: যানজট ও দুর্ঘটনা রুখতে এবার বালির গাড়ি যাতায়াতের উপর সময়মাফিক নিষেধাজ্ঞা জারি করল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৩টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সপ্তাহের সাতদিনই এই ৮ঘণ্টা বর্ধমান – আরামবাগ ৭নং রাজ্য সড়ক ও বর্ধমান – বাঁকুড়া ৮নং রাজ্য সড়কে উপর দিয়ে কোন বালি ভর্তি গাড়ি যাতায়াত করতে পারবে না বলে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। গত ১০মার্চ জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ থেকে এই দুই রাজ্য সড়কে নিত্য যানজট ও দুর্ঘটনা আটকাতে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
সকাল ৮থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দু ধাপে চার ঘণ্টা করে এই দুই রাস্তা দিয়ে দামোরের নদের বিভিন্ন বালি ঘাট থেকে বালি বোঝাই লরি, ডাম্পার, ট্রাক যাতে যাতায়াত করতে না পারে তার জন্যই এই আবেদন জানানো হয়। আর এরপর ১৫মার্চ জেলা পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেন, বর্ধমান – আরামবাগ ৭ নং রাজ্য সড়ক ও বর্ধমান – বাঁকুড়া ৮নং রাজ্য সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা রোধে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা ও বিকেল ৩টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই দুই রাস্তায় কোনো বালির গাড়ি উঠতে পারবে না।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি রায়না, খন্ডঘোষ ব্লক প্রশাসন, জেলা প্রশাসন এবং জেলা পুলিশের উদ্যোগে বর্ধমানের তেলিপুকুর থেকে বাঁকুড়া মোড় পর্যন্ত রাস্তায় যানজট নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে পরিদর্শন করেন আধিকারিকরা। আর এরপর বাঁকুড়া মোড়ের বাস স্টপেজ সরিয়ে রাস্তার তিনদিকে কিছুটা দূরে বাস দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি পলেমপুর সবজি বাজার কেও সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাবার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। আর এরপর জেলা পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন দক্ষিণ দামোদরের উপর দিয়ে যাওয়া দুটি গুরুত্বপূর্ন রাজ্য সড়কে বালির গাড়ি যাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
দক্ষিণ দামোদর এলাকার বহু মানুষ যারা প্রতিদিন রায়না, খন্ডঘোষ সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে একদিকে আরামবাগ, বাঁকুড়া ও বর্ধমান শহরে নানান কাজে যাতায়াত করেন তাঁদের অনেকেই প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত কে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, প্রতিদিন এই দুই রাস্তায় অফিস,স্কুল টাইমে যাতায়াত করা কার্যত বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে। প্রায়ই ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। ফলে সকালে আর বিকেলে একপ্রকার প্রাণ হাতে করে যাতায়াত করতে হচ্ছে এই এলাকার বসবাসকারীদের।
এদিকে রায়না, খন্ডঘোষ এলাকার দামোদর নদের একাধিক বালি ঘাটের মালিকরা জানিয়েছেন, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে তাদের ব্যবসায় ক্ষতি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এব্যাপারে খুব শীঘ্রই অ্যাসোসিয়েশনগত ভাবে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে বালির গাড়ি যাতায়াতের সময়সীমা পরিবর্তনের আবেদন রাখা হবে। বালি ঘাটের মালিকদের একাংশ জানিয়েছেন, জেলার ও জেলার বাইরে থেকে বহু গাড়ি এই দুই রাজ্য সড়ক ধরেই প্রতিদিন দামোদর নদের বিভিন্ন ঘাটে বালি বোঝাই করতে আসা যাওয়া করে। রাতের দিকে বালি বোঝাই করে সেই সমস্ত গাড়ি রাত থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে বেলা পর্যন্ত ঘাট থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছনোর জন্য এই দুই রাস্তাই ব্যবহার করে।
কিন্তু প্রশাসনের নতুন নির্দেশ জারি হওয়ার পর সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বালির গাড়ির চলকদের। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে তিন ঘণ্টা অর্থাৎ দুপুর ১২টা থেকে তিনটে পর্যন্ত গাড়ি যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে এই সময়ের মধ্যে এই দুই রাজ্য সড়ক অতিক্রম করতে না পারলে পুলিশ ও প্রশাসনের ধরপাকড়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে সময়ের আগে বেরিয়েও নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছনোর ঝক্কি নিতে চাইছেন না অনেক গাড়ি মালিক।