বর্ধমান দক্ষিণের প্রার্থী খোকন দাসের সমর্থনে জনসভায় দেব, করোনা নিয়ে সতর্ক করলেন ভোটারদের

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: আর মাত্র হাতে কটা দিন। আগামী ১৭ এপ্রিল বর্ধমানের পঞ্চম দফার ভোটে ৮টি আসনে নির্বাচন হতে চলেছে। আর দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই যুযুধান রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক প্রচারের উত্তাপ ক্রমশই বাড়ছে। কার্যত নির্বাচনী পারদ ক্রমশ চৈত্রের প্রখর রোদের মতই উর্ধমুখী। আর সেই উত্তাপকে শনিবার আরও বাড়িয়ে দিয়ে গেলেন অভিনেতা সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেব। এদিন দেবকে দেখার জন্য এক একজন মহিলা কাঠফাটা রোদে রীতিমত প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা ঠায় অপেক্ষা করে রইলেন। এদিন বর্ধমান শহরের নীলপুরের জাগরণী সংঘের মাঠে বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী খোকন দাসের সমর্থনে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে আসেন দেব। 

বিজ্ঞাপন

তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাঁর আসার সময় জানানো হয়েছিল সকাল ১১টা। পরে তা পরিবর্তন করে জানানো হয় দুপুর ১টা। কিন্তু দেব যখন মঞ্চে এলেন তখন সূর্য মধ্যগগন থেকে হেলে পড়ছে। ঘড়ির কাঁটায় প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ দেব এলেন মঞ্চে। প্রায় ২০ মিনিট বক্তব্যও রাখলেন। কিন্তু জনসভায় উপস্থিত শয়ে শয়ে মহিলাদের যত তাঁর বক্তব্য শোনার আগ্রহ ছিল, তার থেকেও ঢের বেশি আগ্রহ ছিল এদিন দেবকে একবার ছোঁয়ার, তাকে কাছ থেকে দেখার, মূর্হূমূর্হূ সেলফি তোলার। ফলে মঞ্চের সামনে প্রায় ৩০ ফুটের লম্বা রাম্পে হাঁটতে গিয়ে দেবকে এদিন রীতিমত অপ্রস্তুত হতে হয়েছে। শয়ে শয়ে হাত তাঁকে ছুঁতে চেষ্টা করেছে। ফলে বাধ্য হয়েই তাঁকে রাম্প ছেড়ে মূল মঞ্চ থেকেই বক্তব্য রাখতে হয়েছে। 

অনেককেই বলতে শোনা গেছে, কাঠফাটা রোদের পরিবর্তে এই সভা যদি পড়ন্ত বিকেলে হত তাহলে জাগরণী মাঠে তিল ধারণের জায়গা থাকত না। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষের উচ্ছ্বাস ছিল এদিন চোখে পড়ার মত। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই প্রথম কেউ গোটা দেশ জুড়ে করোনা পরিস্থিতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। দেব বলেছেন, প্রত্যেকে মাস্ক পড়ুন। আপনাদের আগে বাঁচতে হবে। নির্বাচন যাবে, আসবে। কিন্তু আপনার প্রাণ চলে গেলে আর ফিরে আসবে না। তিনি বলেন, নেতাদের কাজ কেবল ভোট নেওয়া নয়, জনগণের প্রাণ বাঁচানোও তাঁদের কর্তব্য। 

দেব এদিন আবেদন রাখলেন, ধর্মের ভিত্তিতে ভোট দেবেন না। যারা বোকা বানাবে তাদের ভোট দেবেন না। তিনি বলেন, সব থেকে বড় প্রয়োজন মানুষের আশীর্বাদ। সেই আশীর্বাদ করুন খোকন দাসকে। যারা আপনাদের পাশে সবসময় থাকবেন ভোট তাদেরই দেবেন। এখন অনেক মিথ্যা প্রচার হচ্ছে। কোনটা ঠিক কোনটা ভুল – সত্যিই গুলিয়ে দিচ্ছে। যে দল কাজ করেছে, কাজ করবে তাদের দিকেই থাকা উচিত। ভোট দেওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ভেবে নেবেন যাকে ভোট দিচ্ছেন সে পাশে থাকবে তো?

 দেব এদিন বলেন, গতবছর করোনার জেরে আজ যারা মাঠে ঘাটে ঘুরছেন সেদিন তাদের দেখতে পাওয়া যায়নি। তারা নিজেদের সাজানো ঘরে বসেছিল। করোনার ভয়ে বের হয়নি। কিন্তু গোটা দেশের মধ্যে একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দোপাধ্যায় রাস্তায় ছিলেন, মানুষের পাশে ছিলেন। লকডাউনের জেরে অনেক মানুষের চাকরি চলে গেছে, রোজগার কেড়ে নিয়েছে। তখন মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যেকের ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। ধর্ম থাকলে মানুষ থাকবে না, কিন্তু মানুষ থাকলে ধর্মও থাকবে। দেব বলেন, কেন ডিজেল, পেট্রোলের দাম বাড়ল। দাম কমান। তাহলে জিনিসপত্রের দাম কমে যাবে। বেকারত্ব বাড়ছে। যারা বলছে ক্ষমতায় এলে তারা বেকারদের চাকরি দেবে, তাহলে তারা যে যে রাজ্যে ক্ষমতায় আছেন সেখানে কেন এত বেকারত্ব। কেন সেখানে সবার জন্য বাড়ি তৈরী করে দেয়নি – প্রশ্ন করবেন তাঁদের। 

ধর্ম নিয়ে নয়, উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি হোক। কন্যাশ্রীর তো দরকার ছিল না, তারা তো ভোটার নয়। কিন্তু সবাই যাতে পড়াশোনার অধিকার পায় সেটাই করে দেখিয়েছেন নেত্রী। এবার ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৪ শতাংশ সুদে ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এরা কেউ ভোটার নয়। তবুও তাদের জন্য করেছেন মমতা দিদি। লকডাউনের জেরে পড়াশোনা যখন শিকেয় উঠছিল তখন মমতা প্রত্যেক উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দিয়েছেন স্মার্ট ফোন। ভোটের জন্য নয়, মানুষের জন্য কাজ করছেন তিনি। এদিন এই জনসভায় উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান দক্ষিণের প্রার্থী খোকন দাস সহ জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতা।

আরো পড়ুন