বর্ধমান পৌর পরিষেবা এখন ডিজিটাল, এক ক্লিকেই বাড়ি বসেই সমস্যার সমাধান – জেনে নিন

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: নতুন পুর প্রশাসকমন্ডলী দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মধ্যেই বর্ধমান পৌরসভাকে ডিজিটালাইজ করার উদ্যোগ নেওয়া হল। পুর নাগরিক পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়গুলির দ্রুত সমাধানে চালু করা হল গ্রিভেন্স রেড্রেসাল অ্যাপ (Grievance redressal app) এবং একটি ওয়েবসাইট(www.burdwanmunicipality.gov.in)। ফলে রাজ্যের অন্যান্য একাধিক পৌরসভার পাশপাশি এবার বর্ধমান পৌরসভাতেও ডিজিটাল পরিষেবা চালু হয়ে গেল। বর্ধমান পুরসভার নাগরিক পরিষেবাকে হয়রানিমুক্ত করা, স্বচ্ছ এবং সহজ করতেই এই উদ্যোগ বলে শুত্রুবার এক সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন পৌর প্রশাসকমন্ডলীর চেয়ারম্যান প্রণব চট্টোপাধ্যায় এবং সহ প্রশাসক আইনুল হক। 

বিজ্ঞাপন

কার্যত এদিন থেকেই এক ক্লিকেই ঘরে বসে সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন পুর নাগিকরা। এদিন পুরসভার চেয়ারম্যান প্রণব চট্টোপাধ্যায় নাগরিক সনদ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, আগে পুর নাগরিকদের তাঁদের সমস্যা সমাধানে পুরসভায় এসে চটির শুকতলা ক্ষয়ে যেত। বর্ধমান পুরসভার বদনাম এবং মানুষের হয়রানি কমাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি এদিন জানিয়েছেন, সামান্যতম একটা কাজে এসেও দিনের পর দিন সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয় – পুরসভার বিরুদ্ধে এই বদনাম ঘোচাতেই তাঁরা এই উদ্যোগ নিয়েছেন। 

এদিন নাগরিক সনদ প্রকাশ করে কোন দপ্তরের কাজ কতদিনের মধ্যে সমাধান করা হবে তা লিখিত আকারে দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের নামও। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন ঘরে বসেই পুরসভার যে কোনো সমস্যার সমাধান করা যাবে। দেওয়া যাবে ট্যাক্স। মেটানো যাবে মিউটেশন, সেপারেশনের মত সমস‌্যাগুলিও। এদিন এই বৈঠকে হাজির ছিলেন পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান প্রণব চট্টোপাধ্যায়, সহ প্রশাসক আইনুল হক ছাড়াও প্রশাসক মণ্ডলীর বাকি ৩ সদস্য আলপনা হালদার, শঙ্খশুভ্র ঘোষ ও উমা সাঁই। 

এদিন আইনুল হক জানিয়েছেন, কার্যত পুরসভার দুয়ারে নয়, বর্ধমান পুরসভাই নাগরিকের দুয়ারে পৌঁছাতে চাইছে। এজন্য তৈরী করা হয়েছে বিশেষ অ্যাপসও। সেই অ্যাপসের মাধ্যমেই পুরনাগরিকগণ নির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতে পারবেন। তিনি জানিয়েছেন, অনেক সময়ই অভিযোগকারী যে অভিযোগ জানান, তার সত্যতা থাকে না। কিন্তু তাঁরা সম্পূর্ণ আশাবাদী যে অভিযোগ আসবে তা ভিত্তিহীন হবে না। একইসঙ্গে অভিযোগের সত্যতা থাকলেই দ্রুততার সঙ্গে তা মেটানো হবে। এইজন্যই নাগরিক সনদ প্রকাশ করে কতদিনের মধ্যে কোন সমস্যা কতদিনে সমাধান হবে তারও তাঁরা উল্লেখ করেছেন। 

প্রসঙ্গত এদিনই অ্যাপস চালুর পাশাপাশি চালু করা হয়েছে হেল্প ডেস্কও – যার নম্বর ৮০০১৬০৫০০০। এব্যাপারে দুজন কর্মীও নিযুক্ত থাকবেন হেল্প ডেস্কে। এছাড়াও চালু হচ্ছে টোকেন ব্যবস্থা। যিনি পুরসভায় যাবেন তাঁকে টোকেন নিতে হবে এবং তিনি ফিরে যাবার সময় সেই টোকেন জমা দেবার পাশাপাশি পরিষেবা নিয়ে মতামত জানিয়ে যাবেন। তিনি জানিয়েছেন, পুরসভার কর্মী, আধিকারিকদের নিয়ে দফায় দফায় মিটিং করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে একই রাস্তাকে বারবার মেরামতের নামে টাকা অপচয় রুখতে চালু করা হয়েছে জিআইএস ম্যাপিং। যার মাধ্যমে কোন রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে তা জানা যাবে। এমনকি সেই রাস্তা এর আগে কবে, কত খরচে, কোন ঠিকাদার মেরামত করেছিলেন তাও জানা যাবে। ফলে অর্থের অপচয় রোধ করা যাবে বলেই তিনি জানিয়েছেন।

এরই পাশাপাশি আইনুলবাবু জানিয়েছেন, পুজোর পরই তাঁরা কলকাতার অনুকরণে বর্ধমান পুরসভাতেও চালু করতে চলেছেন টক্ টু এ্যাডমিনিষ্ট্রেটর। সরাসরি প্রশাসকমণ্ডলীর সঙ্গে কথা বলতে পারবেন নাগরিকরা। এদিন তিনি জানিয়েছেন, অম্রুত প্রকল্প নিয়ে তাঁরা পুজোর মধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কিছু ওয়ার্ডে জলের সংযোগ দিতে চলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মূলত দামোদরের যে অংশের মাটির নিচের জল তুলে সরবরাহ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, সেই সমস্ত জায়গায় অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে জলের সমস্যা তৈরি হয়। 

এব্যাপারে সেচ দপ্তরের সঙ্গে আলোচনার পর প্রায় ৩ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে বালি উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত জায়গা থেকে ৯ কিমি দূর থেকে তাঁদের জল নিয়ে আসতে হচ্ছে। একইসঙ্গে রাস্তার ওপর দিয়ে জলের পাইপ লাইন নিয়ে যাবার জন্যও পূর্ত দপ্তরকে রাস্তা মেরামতের জন্য ৪ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসক প্রণব  চট্টোপাধ্যায় বলেন, বর্ধমানবাসী আসন্ন দুর্গোৎসবের আগেই এই বর্ধমান পুর এলাকার আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। তিনি বলেন, শহরকে সাজিয়ে তোলার জন্যও পুরসভা একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

আরো পড়ুন