সুজয় মিশ্র,বর্ধমান: করোনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই শনিবার থেকে বাগদেবীর আরাধনায় মেতে উঠলো আপামর বাঙালি। ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে খুলে গেছে রাজ্যের সমস্ত স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা। পাশাপশি একদিকে দৈনন্দিন আক্রান্তের সংখ্যা যেমন অনেকটাই কমেছে, অন্যদিকে সুস্থতার হারেও পাল্লা দিয়ে উন্নতি ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলে দেওয়ায় খুশি ছাত্রছাত্রী,অভিভাবক থেকে শিক্ষক শিক্ষিকারাও। আর এরই মধ্যে সরস্বতী পুজোর অনুমতি দিয়েছে সরকার। ফলে টানা দম বন্ধ করা অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে পড়ুয়ারা। স্বভাবতই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরস্বতী পুজো নিয়ে উন্মাদনা তুঙ্গে।
পূর্ব বর্ধমান জেলায় সর্বত্রই বাণী বন্দনার আরাধনা হয়ে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলিতে বিগত কয়েকবছর ধরে সরস্বতী পুজোর আয়োজন অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে। থিমের রকমারি বাহারে রীতিমত নজর কাড়তে শুরু করেছিল গোটা বর্ধমান জেলার। শারদোৎসবের পর বর্ধমানবাসী প্রতিবছর সরস্বতী পুজোর দিনগুলোতে ফের মেতে উঠছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের একাধিক নজরকাড়া নানান থিমের পুজো কে ঘিরে। পান্ডুয়া অথবা কালনা শহরে সরস্বতী পুজোর আঁচ বর্ধমান শহরেও আছড়ে পড়েছিল। সঙ্গে ছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের ঐতিহ্যবাহী তত্ব বিনিময় প্রথা নিয়ে তুমুল উন্মাদনা। কিন্তু গত দুবছর করোনা অতিমারির কারণে পুজোর ঘটা থেকে প্রথা সব বন্ধ। সভাবিকভাবেই মনখারাপ ছাত্রছাত্রী থেকে আপামর যুব সমাজ সহ বর্ধমানবাসীর। তবে পুজো হচ্ছে। তাও একপ্রকার নম: নম: করেই। কোনরকম জাকজমক ছাড়াই।
প্রসঙ্গত সরস্বতী পুজোর দিনগুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলোর সামনে দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন পরে যেতো। ভিড়ের ঠেলায় গোলাপবাগ এলকার রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হতো মানুষকে।
শুধু কি তাই! পুজোর পরের দিন ছাত্রীরা সেছেগুজে ঢাকের বাদ্যি সহযোগে তত্ত্ব দিতে যেতেন ছাত্রদের হোস্টেলে। একই কায়দায় পালটা ছাত্ররাও তত্ত্ব দিতে যেতেন ছাত্রীদের হোস্টেলে। সবমিলিয়ে ওই দিনটায় গোলাপবাগ ক্যাম্পাস থাকত অন্য রুপের ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র আবহ। কিন্তু করোনার কারণে আগের বছর তো বটেই, এবছরও সব বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছাত্র ছাত্রীরা। এই নিয়ে মন খারাপও কম না তাদের।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি জানান, গতবছর করোনা মহামারীর কারণে সমস্ত আয়োজনে যথেষ্ট ভাটা পড়েছিল। এ বছরও সেই রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এক প্রকার ‘নমো নমো’ করেই তাদের প্রস্তুতি পর্ব চলছে। তেমন বিশেষ সাজগোজের রমরমা থাকছে না। থাকছে না কোনো তত্ত্ব আদান-প্রদান পর্ব। বহিরাগত দর্শনার্থীদের প্রবেশের অনুমতি থাকলেও যথাযথ কোভিধ বিধি পালন করা আবশ্যক। জানা গেছে, পুজো উপলক্ষে একটি দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ছাত্র সংসদ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করেছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন বাংলা ব্যান্ডের বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সুরজিৎ ও তাঁর টিম।