বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনা ভাইরাস আক্রমণের হাত থেকে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের ঠেকাতে অতিরিক্ত নজর দিয়েছে সরকার। কিন্তু তাই বলে তো আর হাসপাতালে শিশু জন্ম নেওয়া থেমে থাকতে পারে না। আর তাই পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্যান্য সরকারী হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্রের পাশাপাশি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও প্রসুতিদের জন্য অতিরিক্ত যত্ন ও সতর্কতা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বছরের অন্য সময়ে শিশু জন্মালে যেমন তাঁদের নামকরণের হিড়িক পড়ে – এক্ষেত্রে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ মার্চ থেকে শুরু হওয়া রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির জেরে শুক্রবার পর্যন্ত জন্ম নেওয়া কোনো শিশুরই নামকরণ করা হয়নি এই ইস্যুতে।
বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কৌস্তভ নায়েক জানিয়েছেন, গড়ে প্রতিদিন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০টি করে শিশু জন্মায়। চলতি করোনা ভাইরাসের সময়ও শিশু জন্মানোর এই হারের তেমন কোনো তারতম্য ঘটেনি। তিনি জানিয়েছেন, চলতি সময়কালে জন্ম নেওয়া শিশু এবং মায়েদের আলাদা করে কোনো উপসর্গও তাঁরা এখনও পাননি। সকলেই সুস্থ আছেন।
অন্যদিকে, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার ডা. অমিতাভ সাহা জানিয়েছেন, অন্যান্য সময় সাধারণত প্রতিদিন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গড়ে ৫ হাজার রোগী আসেন আউটডোরে চিকিৎসা করাতে। কিন্তু করোনার জেরে এখন সেই রোগীর সংখ্যা কমে এসে দাঁড়িয়েছে গড়ে ১৫০০ থেকে ১৭০০-এর কাছাকাছি। একইসঙ্গে যেখানে গড়ে প্রতিদিন ৬০-৭০টি শিশু জন্মায় সেখানে এই সময়ে তথা গত ১৭ মার্চের পর থেকে সেই সংখ্যা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে গড়ে ৫২-৫৩টিতে।
প্রসঙ্গত, অমিতাভবাবু জানিয়েছেন, যেহেতু করোনার প্রকোপ শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে প্রভাব বেশি তাই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁরা ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। প্রসূতি ও শিশুদের জন্য আলাদা করে যত্ন নেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, যে সমস্ত মা ও শিশুকে বাড়িতে যাবার জন্য ছুটি দেওয়া হচ্ছে তাঁদের অতিরিক্ত নজরদারীর জন্য তাঁরা বাড়ির সদস্যদের নির্দেশও দিচ্ছেন। কমপক্ষে বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট ঘরে ১৮দিন মা ও শিশুদের রাখার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে এই সময়কালে যাতে আত্মীয় স্বজন বর্জিত হয়ে থাকা যায় এমনকি বাড়ির লোকদের সঙ্গে মেলামেশাও যতটা সম্ভব কম করা যায় সে ব্যাপারেও সতর্ক করা হচ্ছে।
তিনি জানিয়েছেন, সদ্যজাত এবং মায়েদের এই সময় শরীরে ব্যাপক ঘাটতি থাকে। ফলে এমনিতেই তাঁরা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই তাঁদের পুষ্টিকর খাবার এবং পরিচর্যারও প্রয়োজন। পাশাপাশি শিশুকে নিয়মিত মায়ের বুকের দুধও খাওয়ানো দরকার। কারণ সদ্যজাত শিশু মায়ের দুধ যত খেতে পারবে ততই তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
উল্লেখ্য, অমিতাভ বাবু জানিয়েছেন, চলতি করোনার জেরে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ৪৫টি আইসোলেশন বেড তৈরী করা হয়েছে। যার মধ্যে ১০টি বেড চালু রয়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগের কর্মীদের রোটেশন ডিউটি করে দেওয়া ছাড়াও উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য একটি রিজার্ভ কর্মীদের টিমও তৈরী রাখা হয়েছে। যেহেতু বাজার বন্ধ, তাই হাসপাতালের এই কর্মীদের থাকা, খাওয়া এবং তাঁদের বাড়ি যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই কর্মীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কেও বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে সমস্ত ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগীরা আছেন তাঁদের জন্যও পৃথকভাবে নজরদারী চালানো হচ্ছে ২৪ ঘণ্টাই।