ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: মঙ্গলবার যখন সারা রাজ্যের পাঁচটি জেলা কে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক ভার্চুয়াল সভা করে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আরো বেশি সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের, তার ঠিক কয়েকঘন্টা আগে পূর্ব বর্ধমানে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন এক করোনা আক্রান্ত রোগী। আর এই ঘটনায় প্রশাসনের পাশাপাশি জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যদিও এই ঘটনার পর এখনও কোনো তদন্ত কমিটি বা সংশ্লিষ্ট কোভিড হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবার খবরই নেই।
বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্ধমান শহরের তেলমারুই পাড়ার বাসিন্দা ৩৫ বছরের এক মহিলাকে সোমবার রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ ছিল। জরুরী বিভাগে দেখানোর পর, তাঁকে ‘নিউ সারি’ ওয়ার্ডে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁকে ওল্ড সারি ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত্রি প্রায় ১টা ১০ নাগাদ তাঁর এন্টিজেন টেস্ট হয়। এই রিপোর্ট পজিটিভ আসায় তাঁকে জাতীয় সড়কের পাশে বামচান্দাইপুর কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়।
রোগীর পরিবারের অভিযোগ, রাত্রি প্রায় ২টো নাগাদ তাঁদের হাতে কাগজপত্র দেওয়া হয়। এরপর অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতেই রাত তিনটে বেজে যায়। তারপর ওই মহিলাকে কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের আরও অভিযোগ, ওই সরকার অধিগৃহিত কোভিড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কাগজপত্র পরীক্ষা না করে জানানো হয় ‘এস.আর.এফ. আই ডি’ না থাকায় রোগী ভর্তি করা যাবে না। তাঁরা ফের রোগী নিয়ে বর্ধমান হাসপাতালে ফিরে আসেন ভোর চারটে নাগাদ। তারপর শুরু হয় ‘এস.আর.এফ. আই ডি’ যুক্ত কাগজপত্র তৈরি করার কাজ। রোগীকে এই সময় ওল্ড সারি ওয়ার্ডে রাখা হয়। কাগজপত্র তৈরি হাওয়ার আগেই বেলা ১২টা নাগাদ ওই মহিলা মারা যান। এই ঘটনার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীর পরিজনরা। বর্ধমান হাসপাতালের পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
যদিও এই বিষয় নিয়ে কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে জানিয়েছেন, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত। এদিকে কেবলমাত্র একটি আই ডি নাম্বার না থাকায় করোনা আক্রান্ত এক রোগীকে সরকার অধিগৃহিত কোভিড হাসপাতালের ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন পড়েছে। রোগীর পরিজনরা অভিযোগ করেছেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়েই মৃত্যু হয়েছে রোগীনীর। যদিও এই ঘটনার পর এখনও কোনো তদন্ত কমিটি বা সংশ্লিষ্ট কোভিড হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবার খবরই নেই। হাসপাতাল সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর থেকেই তাঁরা এই ঘটনার বিষয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্যাধিকারিক সহ চিকিৎসকদের টিম আলোচনায় বসেন।
তিনি জানিয়েছেন, যে কোনো মৃত্যুই দুঃখজনক। পাশাপাশি কেন বর্ধমানের ক্যামরী নামে ওই কোভিড হাসপাতালে রোগীনীকে ভর্তি করানো হল না – তা নিয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। হাসপাতাল সুপার অবশ্য জানিয়েছেন, এই রোগীণীকে যখন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ক্যামরিতে পাঠানো হয় সেই সময় অধিক রাত হয়ে যাওয়ায় এসআরএফ আই ডি তৈরী করা যায়নি। যদিও তাঁরা হাসপাতালের নির্দিষ্ট কাগজে ওই রোগীনী যে করোনা পজিটিভ তা লিখে দিয়েছিলেন। ফলে তা দেখেই ক্যামরী তাঁকে ভর্তি নিতে পারতেন। কিন্তু কেন তাঁরা ওই আই ডির জন্য তাঁকে ফেরত পাঠালেন তা তাঁরা বুঝতে পারেন নি। তিনি জানিয়েছেন, সরকারী নিয়মানুযায়ী রোগীনীর ওই আইডি প্রয়োজন ঠিকই, কিন্তু পরিস্থিতির কথা বিবেচনা না করে সেই আই ডি না থাকায় ভর্তি করা যাবে না এরকম কোনো বিষয় নেই।
পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, যখন রোগীনীকে ভর্তি করা হয়নি সেই সময় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বারবার ফোনেও ক্যামরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, কিন্তু তাঁরা ফোন তোলেননি। প্রবীরবাবু জানিয়েছেন, এই ঘটনায় এদিনই তাঁরা আলোচনায় বসেছেন। ভবিষ্যতে যাতে এই ঘটনা না ঘটে সেজন্য তাঁরা উদ্যোগ নিয়েছেন। যদিও এ ব্যাপারে ক্যামরীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বা ওই রোগীনীর পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।