বর্ধমান শহরের মধ্যে দিয়ে বাস চলাচলের দাবিতে নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চের ডেপুটেশন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান শহরের অর্থনীতিকে বাঁচাতে এবং সাধারণ নাগরিকদের স্বার্থে প্রশাসনিকভাবে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চের পূর্ব বর্ধমান জেলা শাখার পক্ষ থেকে সোমবার জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে তিন দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি জমা দেওয়া হল।সংস্থার নেতৃবৃন্দ এদিন প্রশাসনের কাছে দাবিপত্রে জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র মাঝারি ব্যবসা ও সাধারণ নাগরিকদের স্বার্থে বর্ধমান শহরের জি টি রোড দিয়ে সমস্ত বাস চলাচল করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ২) পুরানো তিনকোনিয়া বাসষ্ট্যান্ড কে বাস টার্মিনাস হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দিতে হবে। ৩) সাধারণ নাগরিকদের উপর অযথা ট্রাফিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

এই ডেপুটেশনে নাগরিকদের পক্ষ থেকে মহম্মদ মাসুদ, ঝর্না পাল, সূর্যকান্ত কুমার, সেখ মহম্মদ ঈশা উপস্থিত ছিলেন। নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, বর্ধমান শহর পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ শহর। পূর্ব বর্ধমান জেলা ছাড়াও বীরভূম, বাঁকুড়া: হুগলি, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদা জেলা এমনকি সুদূর ঝাড়খণ্ড ও অসম সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বর্ধমান শহরে আসেন শিক্ষা, চিকিৎসা সহ নানান ব্যবসায়িক প্রয়োজনে। অন্যদিকে পূর্ব রেলের দক্ষিনবঙ্গের অন্যতম প্রধান বৃহৎ জংশন ষ্টেশন বর্ধমান রেল ষ্টেশন। এখানে বাঁকুড়া, হুগলি সহ পার্শ্ববর্তী জেলা হইতে হাজার হাজার মানুষ দূর পাল্লার ট্রেন ধরতে আসেন। তারা জানিয়েছেন, সময়ের সাথে সাথে নিজস্ব গতিতে অপরিকল্পিত ভাবে এই ইতিহাস প্রসিদ্ধ শহর গড়ে উঠেছে। এই শহরে প্রাচীন মন্দির, মসজিদ, স্মৃতি সৌধ সহ বহু দর্শনীয় স্থানের টানে ও গবেষণার জন্য ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি বিদেশ থেকেও বহু পর্যটক বর্ধমান শহরে আসেন।

নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চের স্মারকলিপিতে দাবি করা হয়েছে, এই শহরের প্রাণকেন্দ্র তিনকোনিয়ায় একটি বাসস্ট্যান্ড ছিল। বর্ধমান রেল ষ্টেশন থেকে যার দূরত্ব মাত্র ৫ মিনিট হাঁটা পথ। পরবর্তীকালে শহরে যানজটের প্রসঙ্গ তুলে তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড উঠিয়ে দিয়ে বর্ধমান শহরের দুই প্রান্তে দুটি ব্যসস্ট্যান্ড তৈরী করে পূর্বতন  সরকার। এই দুটি বাসষ্ট্যান্ডের মধ্যে দূরত্ব প্রায় আট কিলোমিটার। প্রথম দিকে বাসষ্ট্যান্ড-দুটি নির্মিত হলেও জনস্বার্থের কথা ভেবে ব্যবহৃত হতনা। কিন্তু ১৫ জুন ২০১৪ সালে হঠাৎ শহরে আসা বাসগুলিকে দুই প্রান্তের বাসষ্ট্যান্ড গুলিতে যাত্রা বিরতি করতে বাধ্য করা হয়। ফলস্বরূপ, বর্ধমান শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আশপাশের বহু এলাকার। 

হাজার হাজার নিত্যযাত্রী, স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, মুমূর্ষুরোগী, কোর্ট কাছারীতে আসা মানুষজন, দোকান কর্মচারী যারা রুটিরুজির টানে বর্ধমান শহরে যাতায়াত করতেন তাহারা দূর্বিসহ দুরাবস্থার মধ্যে পড়েন। বর্ধমান শহরে প্রবেশের জন্য খরচও কয়েকগুন বেড়ে যায়। এই সিদ্ধান্তের পরেও বর্ধমান শহরে যানজট মুক্ত হবার পরিবর্তে হাজার গুণ বৃদ্ধি পায়। কারণ বহু মানুষ টোটো, বাইক বা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বর্ধমান শহরে আসা যাওয়া শুরু করেন। এখন যেখানে বাস থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেখান থেকে বর্ধমান শহরের দূরত্ব প্রায় পাঁচ ছয় কিলোমিটার। ফলে খুব প্রয়োজন ছাড়া সাধারন মানুষ শহরে কেনাকাটা করতে আসছেন না।

আবার যারা গাড়ি নিয়ে আসছে তারাও বিভিন্নভাবে ট্রাফিক পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ফলস্বরূপ, বর্ধমান শহরে ক্ষুদ্র এবং মাঝারী ব্যবসাদাররা কার্যত ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। এরই মধ্যে অনেক ব্যবসাদার ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন, বাকী অনেকের প্রায় বন্ধের মুখে। পরিবহন সমস্যা, ট্রাফিক সমস্যার কারনে বর্ধমান শহরের ব্যবসা বর্তমানে প্রায় অর্ধেক। আগামী দিনে যদি এই ব্যবস্থার পরিবর্তন না করা হয় তাহলে বর্ধমান শহরের অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে পড়বে। সুতরাং এই অবস্থার অবিলম্বে পরিবর্তন করতে শহরের মধ্যে দিয়ে বাস চলাচলের অনুমতি দিক প্রশাসন এই দাবিও জানিয়েছে সংস্থার নেতৃবৃন্দ।

Recent Posts