বর্ধমান শহরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তুঙ্গে, দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ, জখম একাধিক
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বর্ধমান শহরে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে উঠল। শুক্রবার রাজ্য সরকারের জনপ্রিয় দুয়ারে দুয়ারে রাজ্য সরকার প্রকল্পকে কেন্দ্র করে বর্ধমান শহরের ৬নং ওয়ার্ডের
খালাসিপাড়ার রেলওয়ে বিদ্যাপীঠ এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটল। এই ঘটনায় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন জখম হয়েছে বলে
অভিযোগ। তাঁদের বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। ৬নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের বিদায়ী কাউন্সিলার সৈয়দ মহম্মদ সেলিম অভিযোগ করেছেন, এদিন রেলওয়ে বিদ্যাপীঠ স্কুলে রাজ্য সরকারের দুয়ারে দুয়ারে সরকার প্রকল্পের ক্যাম্প করা হয়। সকাল থেকেই ক্যাম্পে মানুষের ভিড় উপচে পড়তে শুরু করে। তিনি দলীয় কর্মীদের নিয়ে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছিলেন। এই সময় সেখানে আসেন বহিরাগত শিবু ঘোষের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন যুবক। তাদের সঙ্গে ৬ নং ওয়ার্ডেরও কয়েকজন ছিলেন। তাঁরা এসে বেলাইন করায় সকাল থেকে অপেক্ষমান মানুষের সঙ্গে গোলমাল শুরু হয়। তাই নিয়ে বচসা বাধে দুপক্ষের মধ্যে।
সেলিম অভিযোগ করেছেন, এই শিবু ঘোষের নেতৃত্বে তাঁদের কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। মারধর করা হয় মহিলাদেরও। রেলের অবসরপ্রাপ্ত এক অফিসার তরুণ চ্যাটার্জ্জীকে মারধর করা হয়। এরপরই পাল্টা শিবু ঘোষের বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান সেলিম গোষ্ঠীর লোকজন। ব্যাপক মারধর করা হয় শিবু ঘোষ, তাঁর স্ত্রী সহ কয়েকজনকে। এরপরই শিবু ঘোষের লোকজন বাইক ভাঙচুর শুরু করেন। সেলিম সাহেব অভিযোগ করেছেন, রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পকে বানচাল করতেই শিবু ঘোষের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে। সেলিম জানিয়েছেন, শিবু ঘোষ তৃণমূলের কেউ নন। জুয়াড়ি মাতালদের নিয়ে চলাফেরা করেন।
এদিন আক্রান্ত রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ চ্যাটার্জ্জী জানিয়েছেন, এদিন তিনি চায়ের দোকানে যখন বসেছিলেন সেই সময় শিবু ঘোষ তাঁকে এসে চমকায়। কদিন ধরেই তাঁকে ফোনে চমকানো হচ্ছিল। এরপরই তাঁকে বুড়ো ভাম বলে থাপ্পড় মারা হয়। গোটা বিষয়টি তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন। এদিকে, ৬নং ওয়ার্ডে এই হামলার ঘটনা এবং শিবু ঘোষের আক্রান্ত হবার খবর পেতেই ৬নং ওয়ার্ডে বিশাল লোকজন নিয়ে হাজির হন তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা প্রাক্তন কাউন্সিলার খোকন দাস, আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি ইফতিকার আহমেদ, প্রাক্তন কাউন্সিলার সেখ বসির আহমেদ ওরফে বাদশা, সংখ্যালঘু সেলের তৃণমূল নেতা আব্দুর রব, নুরুল আলম সাহেব সহ একাধিক নেতা।
যদিও পুলিশ এদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই জেলাশাসকের বাংলোর সামনে তাদের আটকে দেয়। প্রতিবাদে এদিন রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূল কর্মীরা। এদিন খোকন দাস জানিয়েছেন, পুরোপুরি পরিকল্পনা করে এদিন শিবু ঘোষ ও অন্যান্যদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। তাঁর স্ত্রীকেও মারধর করা হয়েছে। খোকন দাস জানিয়েছেন, এদিন যখন স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড করাতে শিবু ঘোষ আসেন তখনই সৈয়দ মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে আরও কয়েকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে তাঁরা শিবু ঘোষ সহ অন্যান্যদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। সেলিম গোষ্ঠীর হাতে তাঁদের প্রায় ৬জন কর্মী জখম হয়েছেন।
খোকন দাস অভিযোগ করেছেন, ১৯৯৮ সালে যখন ৬নং ওয়ার্ডে তৃণমূল করার লোক ছিল না তখন শিবু ঘোষ ছিল পুরসভার প্রার্থী। তাই কেউ যদি বলে শিবু ঘোষ তৃণমূলের কেউ নন – তাহলে তাঁরা মিথ্যা কথা বলছেন। খোকনবাবু জানিয়েছেন, গত লোকসভা নির্বাচনে ৬নং ওয়ার্ডে হেরেছে তৃণমূল। প্রাক্তন কাউন্সিলারের কোনো জনভিত্তি নেই। তার ওপর একের পর এক অন্যায় চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। একাধিক মামলা রয়েছে তার নামে। খোকন জানিয়েছেন, এদিন বিকাল ৫টার মধ্যে সেলিমকে গ্রেপ্তার করা না হলে বর্ধমান থানা ঘেরাও করবেন তাঁরা। তাতে যা হবার হবে। কাউকে তাঁরা পরোয়া করবেন না। বস্তুত, শুক্রবার সকাল থেকেই শহর জুড়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর এই লড়াইকে কেন্দ্র করে ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে শহর জুড়ে।