খোকন দাস বলেন,” একসময় আমরাই শহরের রাস্তায় টোটো নামিয়েছিলাম। কিছু মানুষ টোটো চালিয়ে যাতে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন সেই লক্ষ্যে। ৭৫টি টোটো কে টিন (temporary indentification number) নম্বর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই টোটোর সংখ্যাই আজ শহরের রাস্তায় প্রায় ১০হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ফলে টোটোর ভিড়ে শহরবাসীর চলাচল করাই দায় হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন রাস্তায় প্রতিদিন তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এই যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল তাতে আগামীদিনে শুধু টোটোই রাস্তায় দেখা যাবে, টোটোয় চাপার লোক কমে যাবে। আর এই পরিস্থিতির লাগাম টানতেই আমরা টোটো নিয়ে বিশেষ কিছু পরিকল্পনা করে এগোচ্ছি। যাতে কারুর রুটি রুজি বন্ধ না হয়, আবার টোটোর কারণে মানুষকে হয়রানির শিকার হতে না হয়।”
খোকন দাস বলেন,” কিছু ব্যবসাদার লোক টোটো নিয়ে রীতিমত ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। এক একজনের ২০-২৫টা টোটো আছে। সারাদিন শেষে কেউ ২০০ আবার কেউ ৩০০টাকা এক একটি টোটো থেকে রোজগার করে। এসব বন্ধ করতে হবে। যে টোটো চালাবে তাকেই টোটোর মালিক হতে হবে। শহরের রাস্তায় ৪হাজার টোটো চলবে। চলবে দুটি শিফটে। তারমধ্যে অর্ধেক টোটো ভোর ৪টে থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত তাদের নির্দিষ্ট রুটে চলবে। আর দুপুর ২টো থেকে পরেরদিন ভোর ৪টে পর্যন্ত চলবে অর্ধেক টোটো। এক্ষেত্রে নিয়ম করা হয়েছে দিনের বেলায় নীল সাদা রঙের টোটো রাস্তায় নামবে। আর রাতে চলবে সবুজ সাদা রঙের টোটো। ১৫দিন অন্তর শিফট পরিবর্তন হবে। টোটোর রেজিস্ট্রেশনের জন্য পুরসভা কোনো টাকা নেবে না। কিন্তু নিজের টোটোর রং করার জন্য এক হাজার টাকা টোটো মালিককেই খরচ করতে হবে। এর আগে শহরের রাস্তায় টোটো চলাচলের জন্য পুরসভাকে কোনো ফি দিতে হতো না। এবার থেকে টোটোর রেজিস্ট্রেশন রিনুয়াল করার জন্য বছরে ৫০০টাকা ফি জমা দিতে হবে পুরসভায়।”
খোকন দাস বলেন,” শহরের ব্যস্ততম রাস্তাগুলোর নিরিখে টোটোর রুট এবং সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। এর আগে ৬৪টি রুট ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। এবার ৪হাজার ৪৯টি টোটো কে লটারি করে রুট দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে কয়েকটি ওয়ার্ড ধরে সেখানকার নথিভুক্ত টোটো মালিকদের মধ্যে লটারি করা হবে। এক বছর করে সেই রুটের মেয়াদ থাকবে। এক্ষেত্রে কারো কোনো সুপারিশ মানা হবে না। এই সমস্ত ব্যবস্থা চালু হয়ে গেল বর্ধমান শহরের রাস্তায় যানজট সমস্যা কিছুদিনের মধ্যে আয়ত্তে আনা যাবে বলে আশা রাখি।”
বর্ধমান থানার আই সি সুখময় চক্রবর্তী এদিন সভায় প্রস্তাব রাখেন, যেখানে সেখানে টোটো দাঁড়িয়ে থাকার পরিবর্তে টোটো স্ট্যান্ড তৈরি করে দেওয়ার। যেখানে ১০থেকে ১৫টি টোটো একসঙ্গে দাঁড়াতে পারবে। সাধারণ মানুষ সেক্ষেত্রে কিছুতে হেঁটে সেই স্ট্যান্ড থেকে টোটোয় উঠবেন। তিনি বলেন, সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে এই ঐতিহ্যবাহী শহরের যানজট মোকাবিলায়। তিনি বলেন, টোটোর সংখ্যা আগের থেকে কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই যারা টোটো চালাবেন তাদের রোজগার বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। পাশাপাশি শহরের বাইরের কোনো টোটো যদি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এবং নির্দিষ্ট কাগজপত্র ছাড়া শহরে প্রবেশ করে, সেক্ষেত্রে ধরা পড়লে সেই টোটো ছাড়া হবে না।