ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনা ভাইরাসের জন্য এবছর শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব বাতিল ঘোষণা হয়েছে। আর এই ঘোষণায় মহা ফাঁপড়ে পড়েছেন শক্তিগড় থেকে বর্ধমান শহরের মিষ্টি ব্যবিসায়ীরা। কিন্তু কেন? শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবের সঙ্গে বর্ধমানের মিষ্টি ব্যবসায়ীদের কি সম্পর্ক!
আগামী ৯ মার্চ রাজ্য জুড়ে দোল উৎসব পালিত হবে। একই সাথে এদিনই বোলপুরের শান্তিনিকেতনেও আয়োজিত হবার কথা প্রতিবছরের মত বসন্ত উৎসব। কিন্তু এবছর সেই উৎসব বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। আর এরফলে সমস্যায় পড়েছেন বর্ধমানের মিষ্টি বিক্রেতারা।
কারণ হিসেবে উঠে এসেছে একটাই তথ্য – কলকাতা বা কলকাতা সংলগ্ন শহরতলী থেকে এই বসন্ত উৎসবে যোগ দিতে কয়েক হাজার মানুষ দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে ধরে বর্ধমানের শক্তিগড় পেরিয়ে বোলপুরের দিকে যান। কিন্তু সমস্যা হলো, এবছর বসন্ত উৎসব না থাকায় এই মানুষগুলো আদৌ আসবেন কিনা – সেটা কোনো মিষ্টি ব্যবসায়ী বুঝতে পারছেন না।
আর যদি তাঁরা না আসেন তাহলে প্রতিবছরের মতো এবছর শক্তিগড়ের ল্যাংচা থেকে বর্ধমানের বিখ্যাত সিতাভোগ, মিহিদানা কেনায় ব্যাপক ভাটা পড়বে। ফলে বসন্ত উৎসবের দিন এবং পরের দিনে রেকর্ড পরিমান মিস্টি বিক্রি মাঠে মারা যাবে। আর এই সম্ভাবনার কথা ভেবেই রীতিমত মাথায় হাত পড়েছে মিস্টি ব্যবসায়ীদের।
উল্লেখ্য, বর্ধমান ২নং জাতীয় সড়কের শক্তিগড় এবং প্যামড়া এলাকায় রয়েছে রাস্তার দুপাশে নয়নয় করেও প্রায় ৪০টি মিষ্টির দোকান। যেখানে বর্ধমানের বিখ্যাত ল্যাংচা মেলে। পাওয়া যায় সীতাভোগ এবং মিহিদানাও। কার্যত এই অঞ্চলকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে ল্যাংচা হাবও।
শক্তিগড় এলাকার ল্যাংচা নিকেতনের কর্ণধার বাসেদ মণ্ডল জানিয়েছেন, তাঁর দোকান বর্ধমান থেকে কোলকাতা যাওয়ার রাস্তায় পড়ে। যেদিন শান্তিনিকেতনে উৎসব থাকে সেদিন ভোর থেকেই সবাই দুর্গাপুর অভিমুখী রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকেন। কারণ কত গাড়ি বোলপুর যাচ্ছে তার উপর নির্ভর করে ফেরার দিনে তাঁদের দিকের দোকানগুলোতে কত মানুষ মিস্টি কেনার জন্য আসতে পারেন।
বাসেদ সাহেব জানিয়েছেন, তাঁরা শান্তিনিকেতনের এই বসন্ত উৎসবের জন্যই আলাদা করে বেশি সংখ্যক কারিগর এবং কর্মী নিয়োগ করেন। তিনি জানিয়েছেন, বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে যে সংখ্যক গাড়ি রওনা দেয় তার ওপরই তাঁরা একটা ধারণা করে তৈরী করেন এই সমস্ত মিষ্টির চাহিদা কেমন হবে। তিনি জানিয়েছেন, কমপক্ষে এই তিনদিনে প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ বিক্রি বেশি হয়। এই সময়ই ল্যাংচার বড় সাইজের চাহিদা ভাল থাকায় তা বেশি পরিমাণে তৈরী হয়। তবে যেহেতু এবার করোনা ভাইরাসের জেরে বসন্ত উৎসবকে বাতিল করা হয়েছে তাই তাঁরাও চিন্তিত।
বর্ধমানের অপর বিখ্যাত মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী নেতাজী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কর্ণধার সৌমেন দাস জানিয়েছেন, শান্তিনিকেতের বসন্ত উৎসবের জন্য কেবলমাত্র সেখানে যাওয়া যাত্রীদের জন্য সীতাভোগ ও মিহিদানা মিলিয়ে প্রায় ৮০ কেজি ভাল মাল তাঁদের তৈরী করতে হয়। অনেক সময়ই তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হয়ে পড়ে। তিনি জানিয়েছেন, সাধারণত দোলের দিন ভোর থেকে শুরু হয় এই যাতায়াত। যাঁরা শান্তিনিকেতন যান তাঁরা ফেরেন দোলের একদিন পর।
সৌমে্নবাবু জানিয়েছেন, অনেক খরিদ্দারই দীর্ঘদিন যাতায়াত করায় তাঁরা সাধারণত আগের দিন অর্ডার দিয়ে দেন। তবে এবারে বসন্ত উৎসব না হওয়ায় সত্যিই কি হবে তা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। সৌমেনবাবু জানিয়েছেন, তবে তাঁরা আশা করছেন মূল অনুষ্ঠান না হলেও আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠান হবে। আর তা যদি হয় তাহলে তাঁদের এবারের বিক্রিতেও কোনো হেরফের হবে না। তবে বিষয়টি সোমবার সকাল ছাড়া বোঝা যাবে না।