বাংলার লোকসঙ্গীতকে বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্ন নিয়ে নিজেকে তৈরি করছে মেমারীর ৯বছরের তিথি

Souris  Dey

Souris Dey

বিজ্ঞাপন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারী: বর্তমান সোস্যাল নেটওয়ার্কিং এর যুগে যখন ইউ টিউব বা ফেসবুক খুললেই হিন্দি, বাংলা ভাষায় বিভিন্ন চটুল গান শুনতে পাওয়া যায়, তখন বাংলার লোকসঙ্গীত ও বাউলকে ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখার অঙ্গীকার নিয়ে রীতিমত প্রস্তুতি নিচ্ছে মেমারীর চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী মাত্র ৯বছর বয়সের তিথি। পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারির মধ্য চাঁচাইয়ের বাসিন্দা তপন হাওলাদারের কন্যা তিথির ছোট থেকেই গান শোনার নেশা। তপন বাবু নিজেও একজন লোকসংগীত শিল্পী। ফলে ছোটবেলা থেকেই বাবার গান গাওয়া তাকে আকৃষ্ট করে। মেয়ের গান শোনার আর গাওয়ার ইচ্ছার কথা বুঝতে দেরি হয়নি বাবার। নিজের জীবনে না হলেও মেয়ের মধ্যে নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে তাই আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তপন বাবু।

মাত্র সাড়ে ৫ বছর বয়স থেকেই বাউল গানের প্রতি টান তিথির। পাড়ায় বাউল গান হলেই পাগলের মত ছুটে যেতো গান শুনতে। এতো ছোট বয়স থেকেই লোকগানের প্রতি টান ভাবিয়ে তুলেছিল মেমারীর মধ্য চাঁচাইয়ের বাসিন্দা তপন হাওলাদার এবং তাঁর স্ত্রী মীরা হাওলাদারকে। অভাবের সংসারে মেয়ের এই গানের প্রতি আসক্তি একদিকে যেমন তপন বাবু এবং মীরা দেবীকে ভাবিয়েছে, তেমনই মেয়ের ইচ্ছা কেও গুরুত্ব দিয়ে গান শেখানোর ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। 

তপন বাবু জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত মেমারী, কাটোয়া, দাঁইহাট প্রভৃতি বিভিন্ন জায়গায় ৯বছর বয়সেই তিথি গান গাওয়ার ডাক পেয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিযোগিতা সহ ২০১৯ রাজ্য ছাত্র যুব উৎসবের ব্লক স্তরের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে। মধ্য চাঁচাই নিম্ন বুনিয়াদী স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী তিথির ইচ্ছা বাংলার লোকসঙ্গীত ও বাউলকে ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখা। তাই এই লকডাউনে যখন স্কুল বন্ধ সেই সময় জোরকদমে গানের অনুশীলন করে যাচ্ছে সে। সকাল বিকাল দুবেলায় চলছে রেওয়াজ।

তপনবাবু জানিয়েছেন, তিনি নিজে তালিম দিচ্ছেন মেয়েকে। অন্যদিকে, স্থানীয় শিল্পী বুদ্ধদেব দত্তের কাছে চলছে ক্লাসিক শিক্ষা। এছাড়াও সে বাউল শিল্পী হীরান্ময় রায়, নাড়ুগোপাল মিস্ত্রীর কাছেও শিক্ষা নিয়েছে। তপনবাবু জানিয়েছেন, তাঁর নিজের একটি ছোট্ট দোকান রয়েছে। তাই দিয়েই চলছে সংসার। তিথি তাঁর বড় মেয়ে। রয়েছে ২ বছরের শিশুপুত্রও। কিন্তু অভাবের সংসারেও মেয়ের এই বাউল গানের প্রতি টান তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছে। তিনি চেষ্টা করছেন তিথিকে ভাল শিক্ষা দিতে – যাতে আগামী দিনে সে বড় একজন বাউল শিল্পী হয়ে উঠে সকলের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে।

একদিকে যখন ছেলেমেয়েদের আধুনিক গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত ইত্যাদির সঙ্গে ক্লাসিক গান শেখানোর জন্য বাবা-মারা উঠে পড়ে লেগেছেন সেই সময় বাউল গান এবং ভক্তিমূলক গান শেখার জন্য তিথির এই আগ্রহ দেখে প্রতিবেশীরাও অবাক হয়েছেন। প্রতিবেশীরাও এগিয়ে এসেছেন তাকে নানাভাবে সাহায্য করার জন্য। আর খোদ ছোট্ট তিথি জানিয়েছে, পড়াশুনা চালিয়ে যাবার পাশপাশি ভবিষ্যতে সে নিজেকে একজন লোকসংগীত শিল্পী হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।

আরো পড়ুন