বারবার দরকার মা মাটি মানুষের সরকার, বারবার দরকার তৃণমূলের সরকার – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বারবার দরকার মা মাটি মানুষের সরকার, বারবার দরকার তৃণমূলের সরকার – মঙ্গলবার ৭ম রাজ্য মাটি উৎসবের
সরকারী অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে এই বার্তাই দিয়ে গেলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে কৃষকরাই যে তাঁর জেতার মূল চাবিকাঠি এদিন সমগ্র ভাষণ পর্বে তাও বারবার উল্লেখ করে কৃষক ও কৃষক পরিবারের মন জয়ের চেষ্টা করলেন তিনি।
এদিন দুপুর প্রায় ১টা ১৫ মিনিট নাগাদ কালনার বৈদ্যপুর মাঠের জনসভা সেরে বর্ধমানের মাটি উৎসবে হেলিকপ্টারে আসেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। প্রায় ৩০ মিনিট বক্তব্য রাখেন তিনি। এদিন মাটি উৎসব মঞ্চে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী আশীষ বন্দোপাধ্যায়, শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত, কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া সহ বেশ কিছু দপ্তরের সচীব এবং জেলা প্রশাসনের সমস্ত আধিকারিকরাই। এদিন মুখ্যমন্ত্রী যখন মাটি উৎসব মঞ্চে আসেন তখন দর্শকস্থানের অনেকাংশই ছিল ফাঁকা। যা নিয়ে খোদ দলের নেতারাই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পুলিশের ওপর। তাঁরা জানিয়েছেন, জায়গায় জায়গায় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পুলিশ বাস আটকে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, মাটি উৎসব প্রাঙ্গণের প্রায় দেড় কিলোমিটার আগেই সমস্ত বাস, লরীকে আটকে দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁদের মাটি উৎসব প্রাঙ্গণে হেঁটে আসতে সময় লেগেছে।
উল্লেখ্য, মাটি উৎসবে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিলেন দলের নেতারা। কিন্তু এদিন সেই প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে নেতাদের মধ্যে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী ফের স্মরণ করিয়ে দেন ২০১২ সালে তিনিই প্রথম এই মাটি উৎসবের সূচনা করেছিলেন। তার ৩ বছর পর ইউনাইটেড নেশন মাটি উৎসবের স্বীকৃতি দিয়েছে। মমতা বন্দোপাধ্যায় এদিন বলেন, কৃষকরা তাঁর কাছে সম্পদ। কৃষকরা তাঁর কাছে গর্বের। কারণ এই কৃষকরাই যে ফসল উৎপাদন করে সেই খেয়েই আমরা বেঁচে আছি। তাই কৃষকদের পায়ে প্রণাম জানান তিনি। শুধু কৃষকরাই নন, কৃষক পরিবারের মহিলাদেরও এদিন তিনি সম্মান জানান। তিনি এদিন বলেন, সমস্ত মহিলারা শুধু হাতা খুন্তি নিয়ে রান্নাই করেন না তাঁরা অনেক কাজও করেন। তিনি চান এই মা বোনদের হাত যেন তাঁর মাথায় থাকে। এরপরেই তিনি নাম না করেই বিজেপির উদ্দেশ্য বলেন, মা বোনরা যেমন হাতা খুন্তি নিয়ে রান্না করেন তেমনি প্রয়োজনে তাঁদের দিকে কেউ ধেয়ে আসলে তাঁরা সেই হাতা খুন্তি নিয়ে প্রতিরোধও করতে পারে।
এদিন বিজেপির কৃষি আইন নিয়েও সরব হন তিনি। মমতা বলেন, কেন্দ্র যে ৩টি কৃষি আইন এনেছে তাতে কৃষকরা সবথেকে বেশি বিপদে পড়বে। বিজেপির ক্যাপিটালিষ্টদের সুবিধা করে দিতেই এই কৃষি আইন নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু বাংলার কৃষকদের তিনি কোনো ক্ষতি হতে দেবেন না।কৃষকদের জন্য যে সমস্ত প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে এদিন তাও তুলে ধরেন তিনি। একইসঙ্গে সরকারী একাধিক প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন তিনি। তিনি এদিন ফের ঘোষণা করে যান আগামী জুন মাসের পরও সাধারণ মানুষকে বিনা পয়সায় রেশন দেওয়া হবে। একাধিক সরকারী প্রকল্পের সুবিধা প্রাপকদের একের পর এক হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, এই বাংলার সরকার চালাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাই বারবার দরকার মা মাটি মানুষের সরকার, বারবার দরকার তৃণমূলের সরকার।
তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস কৈকেয়ী, মন্থরার ভূমিকা পালন করে না, দাঙ্গা বাধায় না। তিনি বলেন, যতদিন বাঁচবেন ততদিন মানুষের জন্যই কাজ করে যাবেন। এদিন মঞ্চ থেকেই কৃষক বন্ধু সহায়তা প্রকল্পে মৃত কৃষকদের পরিবারের হাতে ২ লক্ষ টাকার সহায়তা তুলে দেন তিনি। একইসঙ্গে বেশ কয়েকজনের হাতে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড এবং পলিগ্রিন হাউসের সুবিধাও তুলে দেন। একইসঙ্গে এদিন তিনি মূল মাটি মঞ্চের দুই পাশে কৃষক রত্ন প্রাপকদের মঞ্চে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গেও দেখা করেন। বাউল শিল্পীদের গান গেয়ে শোনানোরও আবেদন জানান। প্রায় ২টো ১৫ নাগাদ তিনি বহরমপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান।