বালি মাফিয়াদের দৌরাত্মে দামোদরে তলিয়ে যাচ্ছে চাষের জমি, আতংকে চাষীরা, উদাসীন প্রশাসন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: ফি বছর দামোদর গিলছে বিঘের পর বিঘে দো ফসলি, তিন ফসলি জমি। আর দামোদরের এই স্বভাবে দোসর হয়ে উঠেছে বালি চোরেরা। ফলে প্রতি বছর পুর্ব বর্ধমান জেলার বিশেষ করে চরমানা, গৈতানপুর, বেলকাশ অঞ্চলের চাষীরা হারাচ্ছেন তাঁদের রুজি, রুটি। তবু এখনো কোনো হেলদোল দেখা যায়নি প্রশাসনের। ফলে অসহায় চাষীদের ক্ষোভ বাড়ছে তিলে তিলে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে পুর্ব বর্ধমান জেলার একদিকে যেমন ভাগীরথীর ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে পুর্বস্থলী অঞ্চলের একের পর এক গ্রাম, তেমনি অজয়ের ভাঙনের কবলেও পড়ছে একাধিক গ্রাম। আর এই দুইয়ের মাঝে করুণ পরিনতির শিকার হয়ে চলেছেন দামদরের চরমানা গৈতানপুরের বাসিন্দারা। 

গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই দু- দশ বিঘে করে জমি তলিয়ে যাচ্ছে দামোদরের ভাঙনে। নয় নয় করেও গত কয়েকবছরে প্রায় ১০০ বিঘের কাছাকাছি জমি তলিয়ে গেছে দামোদরের বুকে। চাষীরা জানিয়েছেন, দিন যত এগোচ্ছে ততই বাড়ছে ভাঙনের প্রকোপ। যার অন্যতম কারণ অবৈধভাবে বালি উত্তোলন। বহরপুরের বাসিন্দা চাষী লালন রাজভড় জানিয়েছেন, চরমানার অপর পাড় খন্ডঘোষ ব্লকের মধ্যে পড়ে। বালিখাদের ডাক রয়েছে সেখানেই। কিন্তু বালি চোরেরা এপাড়ের কাছাকাছি এসে ছাকনি দিয়ে নদীর তলা দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে পাড়ের দিকের মাটির নীচে থেকে বালি টেনে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ৬০-৭০ ফুট পর্যন্ত তারা পাইপ ঢুকিয়ে বালি তুলে নিয়ে যাচ্ছে – যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি জমি ধ্বসে যাওয়া।

তিনি জানিয়েছেন, এর ফলে মাটির ভেতর ফাঁপা হয়ে যাচ্ছে। আর বর্ষার সময় তা দিয়েই জল ঢুকছে হু হু করে। ধ্বসিয়ে দিচ্ছে বিঘের পর বিঘে জমি। অথচ এসবই জানেন প্রশাসনের লোকজন। কিন্তু বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে বলার কেউ নেই। গ্রামবাসীরা ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। কার্যত পরে পরে দুর্দশার শিকার হচ্ছেন। বেলকাশ এলাকার চাষী স্বপন ঘোষ জানিয়েছেন, একেবারে বাঁধের কাছাকাছি এসে বালি তোলা হচ্ছে। ফলে দ্রুতই ভাঙছে পাড়। নদীতে চলে যাচ্ছে জমি। একই কথা বলেছেন বহরপুরের চাষী তারক মণ্ডল। তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত তাঁর প্রায় বিঘে পাঁচেক জমি চলে গেছে। কিন্তু তাদের কথা শোনার কেউ নেই। উল্লেখ্য, এই চরমানার ভাঙন যে ভয়াবহ তা জেনে সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছিল পাড় বাঁধাইয়ের কাজ। কিন্তু অজ্ঞাতকারণে তা আর শেষ হয়নি। যেটুকু কাজ হয়েছিল জলের তোড়ে তাও ভাঙছে ক্রমাগতই।

 যদিও এ ব্যাপারে পুর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, জেলার সামগ্রিক এই নদী ভাঙন নিয়ে আগামী শুক্রবার জেলার সমস্ত বিধায়ক, জেলা প্রশাসনের সমস্ত আধিকারিক, সেচ দপ্তর এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে তাঁরা আলোচনায় বসতে চলেছেন। কিভাবে এই ভাঙন রোধ করা যায়, কেন পাড় বাঁধাইয়ের কাজ থমকে গেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি অবৈধভাবে বালি তোলার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Recent Posts