বিজেপির পূর্ব বর্ধমানের গলসীর প্রার্থীকে আচমকাই সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ, আত্মাহুতির হুমকি প্রার্থীর, তুঙ্গে গেরুয়া রাজনীতির কোঁদল

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: তুঙ্গে উঠল আসন্ন ভোটে বিজেপির অন্দরের লড়াই। ইতিমধ্যেই আদি ও নব্য বিজেপির মধ্যে বিরোধ রাস্তায় এসে পড়েছে। ২১ জানুয়ারী বর্ধমান বিজেপির সদর কার্যালয়ে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পর গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়েই শুরু হয় এই আদি নব্যের লড়াই। বিজেপির জেলা সভাপতি হিসাবে সন্দীপ নন্দীর সঙ্গে দলের একাংশের যে আভ‌্যন্তরীণ বিরোধ ছিল সেই ঘটনার পর তা পুরোপুরি প্রকাশ্যে চলে আসে। দলের মধ্যেই সৃষ্টি হয় ফাটল। শুধু তাইই নয়, বিজেপি অফিসে হামলার ঘটনায় রাজ্য বিজেপি জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী সহ ১২ জনকে শোকজও করেন। এরপর কয়েকজনকে ১ বছরের জন্য বিজেপি থেকে সাসপেণ্ড করা হয়। যদিও বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীকেই এবারে বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়। আর তারপরেই ফুঁসে উঠেছেন বিজেপির আদি কর্মীরা।

 ফলস্বরূপ বিজেপির তথাকথিত আদি কর্মীরা বিজেপির সদর জেলার ৯টি কেন্দ্রে পাল্টা প্রার্থী খাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই বর্ধমান উত্তরে গণেশ মাঝি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পত্র দিচ্ছেন স্মৃতিকান্ত মণ্ডল। শুক্রবার তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলেও কাগজ সংক্রান্ত কিছু ত্রুটি থাকায় তিনি তা জমা করতে পারেনি। এদিকে, আদি বিজেপি কর্মীরা সরাসরি জানিয়েছেন, তাঁরা জিততে না পারলেও বিজেপির প্রার্থীদের যেন তাঁরা হারাতে পারেন এটাই তাঁদের লক্ষ্য। ফলে বিজেপির অন্দরের লড়াই রীতিমত তুঙ্গে উঠেছে। আর এই লড়াই রীতিমত অন্য মাত্রা পেয়ে উস্কে গেল শনিবার। 

শনিবার বিজেপির গলসীর প্রার্থী তপন বাগ্দী রীতিমত সাংবাদিক বৈঠক করে জানালেন, বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁকে গলসীতে প্রার্থী করেছেন। ইতিমধ্যেই তিনি প্রচারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। এই অবস্থায় শুক্রবার রাতে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয় বিজেপি জেলা অফিসে। সেখানে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সুরেন্দ্রজিত সিংহ অহলুবালিয়া, জেলা সভাপতি অভিজিত তা তাঁকে জানান, গলসীর প্রার্থীপদ তাঁকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। কারণ তাঁর নামে ২০১৪ সালের একটি শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে।

এদিন তপন বাগ্দী জানিয়েছেন, প্রার্থী হিসাবে এতদুর প্রচারে এগিয়ে যাওয়া এবং ক্রমশই তিনি নিশ্চিত হচ্ছিলেন যে গলসী বিধানসভায় এবার তিনি জয়লাভ করছেনই। সেই অবস্থায় তাঁকে প্রার্থী হিসাবে সরে দাঁড়ানোর জন্য বলায় তিনি যথেষ্টই হতাশ। যদিও তিনি এই ঘটনার পরই কলকাতায় বিজেপির রাজ্য দপ্তরে গিয়ে গোটা বিষয়টি জানিয়ে এসেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। যদিও সেই মামলা এখনো চলছে। তাঁর বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৯১ সাল থেকে তিনি বিজেপি করছেন। তৃণমূল কংগ্রেস মিথ্যা মামলায় তাঁকে ফাঁসিয়েছে। এদিন সাংবাদিকদের সামনে তপন বাগ্দী জানিয়েছেন, যদি তাঁকে প্রার্থী হিসাবে সরে দাঁড়াতে হয় তাহলে তিনি বিজেপি জেলা অফিসে গিয়ে আত্মাহুতি দেবেন।

যদিও তিনি এদিন জানিয়েছেন, তিনি সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। এদিকে, গলসীর প্রার্থীকে আচমকা সরে দাঁড়াতে বলায় ফের বিজেপির আদি নব্যের লড়াই তুঙ্গে উঠেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোস্যাল মিডিয়ায় বিজেপি জেলা ও রাজ্য নেতাদের বিরদ্ধে চলছে বিস্তর ঝাঁঝালো লেখা। একইসঙ্গে রীতিমত হুমকি দিয়ে জানানো হচ্ছে – যদি গলসী থেকে তপন বাগ্দীকে সরে দাঁড়াতে হয়, তাহলে রায়না, খণ্ডঘোষ, জামালপুর, ভাতার, বর্ধমান উত্তর, মেমারী সব জায়গারই প্রার্থী বদল করতে হবে নাহলে বর্ধমানের বিজেপির ওই সদর কার্যালয়ে আগুন জ্বলবে। সূত্রের খবর, গলসীতে তপন বাগ্দীর বদলে সেখানে প্রার্থী করার চেষ্টা চলছে বর্ধমান পুর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডলকে। যদিও তা মানতে নারাজ আদি কর্মীরা।