---Advertisement---

বিদ্যাসাগরের অনুপ্রেরণায় প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবন বাঁচাতে উদ্যোগ প্রাক্তনীদের, সরকারি নির্দেশ ছাড়াই কাজ নিয়ে বিতর্ক!

Souris Dey

Published

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,জামালপুর: পাঠশালা মানেই শুধু বই, খাতা আর সিলেবাস নয়। স্কুল মানেই শৈশব, খেলার মাঠ, প্রথম পড়া কবিতা, কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া টিফিন। তাই সেই স্কুল যদি হয় প্রায় দেড়শো বছরের পুরোনো, আর যদি তার প্রতিষ্ঠার পেছনে থাকেন বিদ্যাসাগরের মতো পুরোধা সমাজসংস্কারক, তবে তার প্রতি আবেগ তো আরও গভীর, আরও নিবিড় হবেই। এই আবেগ থেকেই জন্ম নিয়েছে উদ্যোগ। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সারদা প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরনো ভবন বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। ১৮৫৬ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অনুপ্রেরণায় প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় বহু ছাত্রের ভবিষ্যৎ গড়েছে, বহু শিক্ষকের শ্রমে হয়েছে প্রজন্মান্তরের আলোকবর্তিকা।

বিজ্ঞাপন

সরকারি উদ্যোগে সম্প্রতি স্কুলের জন্য একটি নতুন ভবন নির্মিত হয়েছে। কিন্তু পুরোনো ভবনটিও তো কেবল ইট-পাথরের গাঁথনি নয়—তাতে জমে আছে শত শত ছাত্রছাত্রীর না বলা গল্প, গৃহশিক্ষকের রাগ, প্রধান শিক্ষকের তর্জনী, এবং ‘শেষ বেল’ পড়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা দিনের শেষ ক্লাস। এই সব স্মৃতিই যেন ঝুঁকির মুখে, কারণ বহু বছরের ব্যবহারে ভবনটি জীর্ণ, অনেকটাই অচল। তবে প্রাক্তনীদের একাংশ মনে করছেন—এই স্মৃতিকে বিলুপ্ত হতে দেওয়া মানে নিজেদের শিকড় হারানো। তাই স্মৃতির টানে সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। তাঁরা কেউ পেশায় ডাক্তার, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকরিজীবী—নিজেদের সাধ্যমতো অর্থ সংগ্রহ করে শুরু করে দিয়েছেন সংস্কারকাজ।

তবে এই ভালোবাসার উদ্যোগে বাধ সাধছে প্রশাসনিক জটিলতা। তৈরি হয়েছে বিতর্কও। প্রশাসনিক নির্দেশ ছাড়াই চলছে কাজ, স্মৃতি আঁকড়ে রাখতে গিয়ে মরণফাঁদ তৈরী হচ্ছে না তো? প্রশ্ন উঠে গেছে ইতিমধ্যেই। জামালপুর ব্লক প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এই সংস্কার কাজের কোনও সরকারি অনুমোদন নেই। ব্লকের বিডিও পার্থসারথি দে বলেন, “ওনারা একবার এসেছিলেন। আমি তখনই বর্ধমান থেকে ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়েছিলাম। তারা জানায়, এই ভবনটি বিপজ্জনক। সংস্কার করলেও কাঠামোগত দুর্বলতা থেকে যেতে পারে, এবং ভবিষ্যতে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে “। তাঁর বক্তব্য, “এই মুহূর্তে যারা সংস্কার করছেন, তাঁরা সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে করছেন। ভবিষ্যতে যদি কিছু ঘটে, তার দায় তাঁদেরই নিতে হবে”।

See also  বর্ধমানে গুরুপূর্ণিমা উপলক্ষে পুজোর লাইনে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধার সোনার হার ছিনতাই, চাঞ্চল্য

একই সুর জামালপুর ব্লক এসআই-রও। রেনুকা সাহা জানান, “আমার কাছে এই কাজের কোনও অফিসিয়াল অনুমতি বা তথ্য আসেনি। এই রকম কাজের আগে অনুমতি নেওয়া উচিত। ভবিষ্যতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা যে তাদেরই দায়ী করব, সেটা তাঁদের জানা থাকা উচিত”। এদিকে এই বিতর্ক ঘিরে এলাকার মানুষের মধ্যেও শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। কেউ বলছেন—“স্মৃতিকে বাঁচানো উচিত। কিন্তু সেটা যদি নিয়ম মেনে হয়, তবেই সুরক্ষা বজায় থাকে”। অন্যদিকে, প্রাক্তনীদের বক্তব্য, তাঁরা কোনও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন না। তাঁদের সঙ্গে কিছু স্থানীয় অভিজ্ঞ মিস্ত্রি ও কারিগর আছেন। তাঁরা চাইছেন, ভবনের বাইরের গঠন এবং ঐতিহ্য ধরে রেখে অন্তত সামান্য মেরামত করে একে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রাখা হোক—পড়ুয়াদের নয়, কিন্তু ঐতিহ্যের পাঠ যেন এখানে চলতেই পারে।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—যদি ভবিষ্যতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, কিংবা হঠাৎ কোনও অংশ ধ্বসে পড়ে, তাহলে দায় কে নেবে? তখন কি এই প্রাক্তনীরাই কাঠগড়ায় উঠবেন? অন্যদিকে, সরকারি তরফে এখনও পর্যন্ত বিকল্প কোনও পরিকল্পনার খবর পাওয়া যায়নি। তাই অনেকে বলছেন—“যেখানে সরকারের তরফে ঐতিহ্য সংরক্ষণের কোনো স্পষ্ট পদক্ষেপ নেই, সেখানে অন্তত কিছু প্রাক্তনীর ভালোবাসায় তো ভবনের অস্তিত্ব রক্ষা পাচ্ছে”। স্মৃতির ভার টানতে গিয়ে আইন-নিরাপত্তার ভার উপেক্ষা করা কতটা সঠিক—তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। তবে এই ঘটনা ফের একবার প্রমাণ করল, পাঠশালার সঙ্গে সম্পর্ক কখনোই ফুরিয়ে যায় না। বিদ্যাসাগরের হাতে বোনা যে শিক্ষা বীজ এখান থেকে অঙ্কুরিত হয়েছিল, তা আজও বেঁচে আছে ছাত্রছাত্রীদের হৃদয়ে—স্মৃতি আর দায়িত্বের বাঁধনে।

শেয়ার করুন 🤝🏻

Join WhatsApp

Join Now
---Advertisement---