ভোজ্যতেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিকল্পে মহুয়ার তেলই এখন আদিবাসীদের রসদ যোগাচ্ছে
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: দেশজুড়ে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোজ্য তেলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এমনকি জঙ্গলমহল এলাকায় বসবাসকারী আদাবাসী সমাজের মানুষদের উপরেও। স্বাভাবিকভাবেই বেঁচে থাকার জন্য এবার বিকল্প ভাবনার পথে পা বাড়ালেন পূর্ব বর্ধমান জেলার জঙ্গল ঘেরা আউশগ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা।
শাল, পিয়াল, মহুয়ার জঙ্গল ঘেরা আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা আউশগ্রাম। আর এই বিপুল সবুজ বনানীকে কেন্দ্র করেই রুজিরুটি নির্ভর করে এখানকার আদিবাসীদের। তারা বন থেকে শাল পাতা, বেনা কাঠি, খেঁজুর পাতা সহ আরও নানান সামগ্রী তুলে এনে তাদের হাতের নিখুঁত কাজ দিয়ে শিল্পস্বত্তা ফুটিয়ে তোলেন। তাদের তৈরি শাল পাতার থালা, বেনা ও খেঁজুর পাতার ঝাঁটা সহ ঘর সাজানোর রকমারি জিনিস বিক্রি করে দিব্যি সংসার চলে।
কিন্তু একদিকে টানা করোনা পরিস্থিতি অন্যদিকে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এইসমস্ত দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর সংসার চালাতে এখন রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই এবার সংসার চালাতে বিকল্প রাস্তার খোঁজ শুরু করেছে তারা।বর্ষাকালে বন থেকে পাওয়া মহুয়ার বীজ এখন তাদের সংসারে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে। মহুয়ার তেলেই মুখরোচক ভাজাভুজি খাবার থেকে শুরু করে অল্পস্বল্প রান্নাবান্নাও সেরে ফেলছেন। পাশাপাশি গায়ে মাখার জন্যও তারা এই তেল ব্যবহার করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে জানা গেছে, একটা একটা করে কুড়িয়ে আনা মহুয়ার বীজকে প্রথমে জলে ভিজিয়ে রাখা হয়। তারপর কাঠাল বীজের ন্যায় দেখতে মহুয়ার বীজগুলিকে তুলে তার খোসা ছাড়ানো হয়। এরপর সেগুলিকে রোদে মিলে ভালো করে শুকানো হয়। তবে স্থানীয়রা জানান, কাছাকাছি মিল না থাকায় বীরভূমের ইলামবাজার গিয়ে শুকানো বীজ পিষিয়ে তাদের তেল বের করে আনতে হয়। তবে এই তেল সরষের তেলের মতো দেখতে হলেও শীতকালে জমে সাদা হয়ে যায়। তেলের যথেষ্ট উগ্র গন্ধও রয়েছে। তবে এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে মহুয়া তেলই এখন ভরসা হয়ে উঠেছে জঙ্গলমহলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের। সর্ষের তেল বা অনান্য ভোজ্যতেলের দাম যেখানে ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে সেখানে দাড়িয়ে এই তেল অনেকটাই স্বস্তি দিচ্ছে তাদের।
জঙ্গল মহলের এই তেলের কথা অজানা নয় পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনেরও। পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সময়ে এই তেল বিকল্প হতে পারে। এই তেলের বানিজ্যিক ব্যবহার আদিবাসী সম্প্রদায়ের আয়ের পথ প্রসস্থ করতে পারে। তাই এই মহুয়া তেলকে বানিজ্যিকভাবে ব্যবহারের কথা ভাবা হচ্ছে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে।