ভোটের মুখে বর্ধমান পুরসভার ক্যাগ রিপোর্ট ফাঁস, কাঠগড়ায় তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ৮ অক্টোবর ২০২১-তারিখে ক্যাগের একটি রিপোর্টকে কেন্দ্র করে পুর নির্বাচনের আগে গোটা বর্ধমান শহর জুড়ে শুরু হয়ে গেল ব্যাপক তর্জা। সম্প্রতি ক্যাগ বর্ধমান পুরসভার যে অডিট করেছে তাতেই তুলে ধরা হয়েছে একটি নির্মাণ সংস্থাকে অবৈধভাবে সুবিধা পাইয়ে দেবার বিষয়টি। আর পুর নির্বাচনের আগে এই ক্যাগ রিপোর্ট সামনে আসায় রীতিমত অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে রাজ্যের শাসকদলের কতিপয় নেতা। রাত পোহালেই বর্ধমান শহরে পূর্ব বর্ধমান জেলা সিপিএমের জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সম্মেলনে সামনের পুরভোটের প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হবার কথা। কিন্তু তারই মাঝে এই ক্যাগ রিপোর্ট সামনে আসায় রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁদের হাতে রসদ এসে গেল। 

কলকাতা পৌরসভার নির্বাচন শেষ হতেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্যের বাকি পৌরসভা গুলির নির্বাচনের প্রস্তুতি। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারী বর্ধমান পুরসভার ভোট হওয়ার কথা। ইতিমধ্যেই পুরভোটের জন্য শহর জুড়ে সিপিএম তাদের প্রচারও শুরু করে দিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বর্ধমান পুরসভার বাম চেয়ারম্যান ছিলেন আইনুল হক। বর্তমানে তিনিই বর্ধমান পুরসভার সহ প্রশাসক এবং তৃণমূল নেতাও। ২০০৬ সাল নাগাদ বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন সুরেন মণ্ডল। সেই সময় ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন আইনুল হক। ক্যাগ জানিয়েছেন, বর্ধমান পৌরসভার গোদা মৌজায় শপিং কমপ্লেক্স ও আবাসন তৈরিতে বিস্তর গড়মিল তাঁরা লক্ষ্য করেছেন। গোদা মৌজায় প্রায় ৩৪২ শতক একটি জমিতে পিপিপি মডেলে এই শপিং কমপ্লেক্স ও রেসিডেনসিয়াল কমপ্লেক্স তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ডি বি রিয়েলিটি এ্যন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটিড নামে একটি সংস্থা এই কাজের বরাত পাওয়ার পর পুরসভার সঙ্গে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী বর্ধমান পৌরসভাকে ১৬ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ওই সংস্থার। প্রথম দফায় চেকের মাধ্যমে সংস্থাটি ২ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা বর্ধমান পৌরসভায় জমা দেয়। বাকি ১৪ কোটি টাকা (প্রিমিয়াম মানি) ৬ টি কিস্তিতে ওই সংস্থাকে বর্ধমান পৌরসভাকে মিটিয়ে দিতে হবে বলে মৌ চুক্তিতে বলা হয়। জানা গেছে, ওই জমিতে ভূগর্ভস্থ অংশ সহ ৬ তলার একটি শপিং কমপ্লেক্স ও ভূগর্ভস্থ অংশ সহ ৮ তলার ৪ টি রেসিডেনশিয়াল কমপ্লেক্স তৈরির কথা ছিল। সেই মত পৌরসভা থেকে নক্সাও অনুমোদিত হয়। যথারীতি নক্সা অনুযায়ী কাজও শুরু হয়। তারই মধ্যে পৌরসভার পাওনা ১৪ কোটি টাকা মিটিয়ে দেয় সংস্থাটি।

ক্যাগ রিপোর্টে বলা হয়েছে কিন্তু এরপরেই তাঁরা দেখছেন ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ওই সংস্থাটি ওই ভবনকে আরও সম্প্রসারিত করার জন্য পুরসভার কাছে আবেদন করে। অভিযোগ উঠেছে এই সময়কে ঘিরেই। ক্যাগ জানিয়েছেন, কিভাবে ওই সংস্থাটি দ্বিতীয় দফায় বর্ধিত অংশ নির্মাণ করল সেই সংক্রান্ত পুরসভায় কোনো কাগজপত্রই তাঁরা দেখতে পাননি। প্রথম দফায় চুক্তির পর পরবর্তীকালে ওই সংস্থাটি যেভাবে তাদের নির্মাণকে বাড়িয়ে নিয়ে গেছে সেই সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র না পাওয়ায় তাঁদের সন্দেহ ওই সংস্থাকে ‘আনডিউ এ্যাডভানটেজ’ দেওয়া হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা। যে টাকা পুরসভার তহবিলে আসতে পারত। কিন্তু তা আসেনি।

এদিকে, পুরভোটের আগেই কিভাবে এই ক‌্যাগ রিপোর্টকে বাজারে ছাড়া হল তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। এই রিপোর্টের মাধ্যমে ২০১৭ সাল নাগাদ যাঁরা পুরবোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের দিকেই দুর্নীতির তির ছোঁড়া হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক নেতারা। যদিও এই ঘটনায় সুর চড়িয়েছে বিজেপি। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সুনীল গুপ্তা জানিয়েছেন, তৃণমূলের আমলে লাগাতার অবৈধ নির্মাণ হয়েছে কেবলমাত্র কাউন্সিলারদের টাকা দিয়েই। যথাযথ তদন্ত হলেই কেঁচো খুড়তে কেউটে বেড়িয়ে আসবে।

Recent Posts