ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: চলতি বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা রাজ্য সরকার বাতিল করার ঘোষণাকে কার্যত সঠিক সিদ্ধান্ত বলে জানিয়ে গেলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সোমবার বিকালে বর্ধমানে বিজেপির জেলা অফিসে সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে আসেন তিনি। আর এই বৈঠকে যোগ দেবার আগে একেবারে নজীরবিহীনভাবে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দলীয় অফিসের বাইরে খোলা রাস্তার ধারে সাংবাদিক বৈঠক করেন। কি কারণে সাংবাদিকদের বিজেপির জেলা অফিসের ভেতরে যেতে দেওয়া হল না বা ভেতরে সাংবাদিক বৈঠক করা হল না, তা নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
খোদ বিজেপির দলীয় সূত্রে খবর, বর্তমানে দফায় দফায় বিজেপির এই দলীয় অফিসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিজেপির দলীয় কর্মী, সমর্থক, নেতৃত্বদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটেছে। সূত্রের খবর, সেই সমস্ত হামলার নির্দশন বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে দেখানোর জন্যই এদিন সাংবাদিকদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরিবর্তে পার্টি অফিসের বাইরে নজীরবিহীন ভাবে সাংবাদিক বৈঠক করা হয়েছে। এদিন দিলীপবাবু জানিয়েছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক নিয়ে আগে ডিসিশন দিয়েছেন এখন সাজেশান নিচ্ছেন। দিলীপবাবু বলেন, মুখ্যমন্ত্রী কারও সঙ্গে কোনো আলাপ আলেচনা ছাড়াই দুটি পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। এখন আবার বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঠিকই হয়েছে। অসংখ্য ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এই পরিস্থিতিতে সকলেই চিন্তিত।
সোমবার শীতলকুচি কাণ্ডে সিআইডির তদন্তে যাওয়া নিয়ে দিলীপবাবু বলেন, শীতলকুচি কাণ্ডে বাইরে থেকে দুষ্কৃতিরা এসে পুলিশের বন্দুক ছিনিয়ে নিয়েছিল। সেজন্য গুলি চালাতে হয়েছিল। দিলীপবাবু বলেন, এখন রাজ্য সরকার ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। তাঁরা চান প্রকৃত সত্য সামনে আসুক। কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। বিজেপির কর্মী, সমর্থকদের ওপর হামলা এবং জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ, হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দিলীপবাবু এদিন বলেন, গোটা রাজ্যে প্রায় ৮০-৯০ হাজার বিজেপি কর্মী সমর্থক বাড়িছাড়া হয়েছেন। তাঁরা এব্যাপারে আদালতে গেছেন। আদালত ঘরছাড়াদের ঘরে ফিরিয়ে দেবার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁরাও প্রশাসনের কাছে তালিকা দিচ্ছেন। তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ সহ জায়গায় কর্মীদের বিক্ষোভের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা অত্যাচারিত, সেই কথা তাঁকে জানাবেন না তো কাকে জানাবেন। তাঁরাও চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারপরেও যদি এই ঘটনা চলতে থাকে তাহলে বিজেপি লড়াই সংগ্রাম শুরু করবে।
যদিও তিনি জানিয়েছেন, আগামী ৫বছর বিজেপি লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাবে ২০২৬ সালের ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে। দিলীপবাবু এদিন পাল্টা তোপ দেগে বলেন, গোটা রাজ্য জুড়ে সন্ত্রাস চললেও মুখ্যমন্ত্রী একবারও সন্ত্রাস বন্ধের কথা বলেননি, করেননি দুঃখপ্রকাশও। পার্টি অফিস সহ কিছু কিছু জায়গায় বিজেপি নেতা কর্মীদের ক্ষোভ বিক্ষোভ প্রসঙ্গে দিলীপবাবু জানিয়েছেন, কিছু লোক উত্তেজনা তৈরী করছে। এদিন কেন্দ্রীয় টিম যশের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে রাজ্যে আসা প্রসঙ্গে দিলীপবাবু জানিয়েছেন, এটা ভাল উদ্যোগ। তাঁরা দেখুন, সার্ভে করুন। তাঁদের আবেদন, যাঁরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ তাঁদের একাউণ্টেই যেন ক্ষতিপূরণের টাকা যায়। এটা নিয়ে যেন কোনো দুর্নীতি না হয় কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চয়ই সেটা দেখবেন।
শুভেন্দু অধিকারী সহ কয়েকজন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে এদিন বিজেপি রাজ্য সভাপতি জানিয়েছেন, মুকুল রায়ের ওপর বদলা নিতে তাঁর ঘনিষ্টদের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে, মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীকে হারিয়ে দেওয়ায় তা সহ্য করতে না পেরেই চক্রান্ত করে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বদনাম করা হচ্ছে। তৃণমূল নেত্রী মহুয়া মৈত্রের রাজ্যপাল নিয়ে ট্যুইট প্রসঙ্গে দিলীপবাবু জানান, কিছু কিছু তৃণমূল নেতা লাইম লাইটে আসতে চাইছেন বলেই এসব নিয়ে মিথ্যা বদনামের চেষ্টা করছেন। রাজ্যপাল তাঁর জবাব দিয়েছেন। কিন্তু তাঁকে জব্দ করতে না পেরে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করার চেষ্টা করছেন তৃণমূল নেতারা।